অক্সফোর্ডের কেলগ কলেজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা চলাকালীন বিক্ষোভকারীদের তৎক্ষণাৎই বার করে দিতে চেয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মমতাই তাঁদের ‘না’ করেন। শুক্রবার লন্ডনের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে এ কথা জানালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। মমতা এ-ও জানিয়েছেন, শিষ্টাচার মেনে, শান্ত হয়ে যদি তাঁকে প্রশ্ন করা হত, তিনি জবাবও দিতেন। সেই প্রস্তুতি নিয়েই তিনি গিয়েছিলেন।
কেলগের প্রসিডেন্ট জোনাথন মিকি, ওই কলেজেরই কৃতী গবেষক লর্ড কর্ণ বিলোমোরিয়া মঞ্চেই ছিলেন মমতার বক্তৃতার সময়ে। মমতার কথার মাঝেই সভাকক্ষের পিছন দিকে বিক্ষোভ শুরু হয়। শুক্রবার মমতা বলেছেন, ‘‘যখন ওই ঘটনা ঘটছে, তখনই মিকি এবং বিলোমোরিয়া আমায় বলেছিলেন, ওঁদের কি বার করে দেওয়া হবে? আমিই বারণ করি। আমি বলি, গণতন্ত্রে তো প্রশ্ন ওঁরা করতেই পারেন। কিন্তু এই ভাবে করলে তো জবাব দেওয়া যায় না।’’ যদিও সভাকক্ষে আরও যে সব শ্রোতা, দর্শক ছিলেন, তাঁরাই পাল্টা প্রতিবাদ করে গুটিকয় বিক্ষোভকারীকে সভাকক্ষ-ছাড়া করেছিলেন বৃহস্পতিবার।
বক্তৃতা শেষ করে মমতা যখন অক্সফোর্ড থেকে লন্ডনে ফেরার বাসে উঠছেন, তখন সেখানেও হাজির ছিলেন বিক্ষোভকারীরা। উদ্দেশ্য ছিল ফের বিক্ষোভ দেখানো। সেই সময়েও কেলগ কর্তৃপক্ষ মমতার কাছে জানতে চান, তাঁদের অকুস্থল থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে কি না। কিন্তু মমতা জানান, সে সবের কোনও প্রয়োজন নেই। মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্টই জানিয়েছেন, উত্তর দিতে তিনি সব সময় রাজি। কিন্তু তা কোনও ভাবেই হট্টগোল করে নয়।
এই প্রসঙ্গেই মমতা জানিয়েছেন, বক্তৃতার আগে কেলগ কলেজের ২৫ জন শিক্ষাবিদের সঙ্গে তাঁর যে দু’ণ্টা বৈঠক হয়, সেখানেও তাঁরা বিভিন্ন প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীকে করেছিলেন। এবং মমতা সে সবের জবাবও দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘ওঁরা আমাদের সামাজিক প্রকল্পগুলি (কন্যাশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী, লক্ষ্মীর ভান্ডার ইত্যাদি) নিয়ে কাজ করতে চান।’’
অক্সফোর্ডের বিভিন্ন মুহূর্তের কোলাজ শুক্রবার এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করেছেন মমতা। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘‘ছোটবেলায় যে দিন বাবাকে হারিয়েছিলাম, সে দিন থেকেই আমি লড়াই করছি। কখনও তা ছাত্রনেত্রী হিসাবে, কখনও বিরোধী নেত্রী, আর এখন মানুষের সরকারের প্রধান হিসাবে লড়াই করছি। আমি কখনও লড়াই থেকে পিছিয়ে আসিনি, ভবিষ্যতেও পিছোব না। কিন্তু বাংলার সাফল্যকে কেউ খর্ব করতে চাইলে। অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন তুললে তা বরদাস্ত করব না।’’ মমতা এ-ও লিখেছেন, ‘‘বিশ্বের আঙিনায় প্রগতির ধ্বনি, নবজাগরণের সুরে বাজে আগমনী, উন্নয়নের আলো মেঘে ঢাকবে না, মাতঙ্গিনীর বাংলা কভু হারবে না।’’
কেলগের সভাকক্ষের পিছন থেকে প্রথম যখন বিক্ষোভমিশ্রিত প্রশ্ন উঠছিল, তখন উঠে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেন রাজ্যের প্রাক্তন ও প্রয়াত মন্ত্রী সাধন পাণ্ডের কন্যা শ্রেয়া পাণ্ডে। কিন্তু হইচই তাতে থামেনি। এক প্রৌঢ় মমতার উদ্দেশে বলতে থাকেন, ‘‘আপনি মিথ্যা বলছেন।’’ মমতা উত্তর দেন, ‘‘নাহ্ ব্রাদার, আমি কোনও মিথ্যা বলছি না।’’ এর পর চিৎকার বাড়তে থাকে। সেই সময়ে শিল্পপতি সিকে ধানুকা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেন। ধানুকাকেও শান্ত করেন মমতাই। শিল্পপতির উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বলতে দিন না। গণতন্ত্রে বিরুদ্ধ-স্বর তো উঠবেই।’’ একেবারে সামনের সারিতে বসে থাকা সৌরভও ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছিলেন কী হচ্ছে। তার পর শ্রোতাদের বড় অংশ পাল্টা চিৎকার শুরু করেন বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে। শুরু হয় বিতণ্ডা। পরে মমতা বলেন, ‘‘আমি মানসিক ভাবে তৈরি হয়েই এসেছিলাম।’’
আরও পড়ুন:
মমতার উদ্দেশে যখন বিক্ষোভকারীরা পোস্টার দেখাচ্ছেন, তখন মমতাও পোডিয়াম থেকে পাল্টা পোস্টার দেখান বৃহস্পতিবার। তাতে তাঁর মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা ছবি। ১৯৯০ সালের ১৬ অগস্ট হাজরা মোড়ে মমতার উপর যে হামলা হয়েছিল, পরের দিনের সংবাদপত্রে ওই ছবিটিই প্রকাশিত হয়েছিল। মমতা যখন ওই ছবি তুলে ধরছেন, তখন বিক্ষোভকারীদের দিক থেকে বলা হয়, ‘‘নাটক! নাটক!’’ পাল্টা মমতা বলেন, ‘‘কোনও নাটক নয়। এটাই ঘটনা।’’
গোটা ঘটনার জন্য কেলগ কর্তৃপক্ষ মমতার কাছে দুঃখপ্রকাশও করেন। মমতা কেলগ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছেন, কলকাতায় একটি ক্যাম্পাস খোলার। শুক্রবারই মমতার বিলেত সফরের শেষ দিন। কলকাতা ফেরার আগে মমতা বলেছেন, ‘‘আমার দুটো লক্ষ্য আছে। এক, কলকাতায় অক্সফোর্ডের একটা ক্যাম্পাস। এবং দুই, সপ্তাহে দু’দিন কলকাতা-লন্ডন ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ়ের সরাসরি উড়ান।’’
- অক্সফোর্ডেই ব্রিটেন সফরের শেষ কর্মসূচি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেখানে তিনি বক্তা। পৌঁছে গিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। সঙ্গে কর্তৃপক্ষের জন্য উপহার।
- বাণিজ্য সম্মেলনের মাঝেই বাংলার ফুটবলপ্রেমীদের জন্য সুখবরটা এল। গত চার বারের ইপিএল চ্যাম্পিয়ন ম্যাঞ্চেস্টার সিটি ক্লাব যুক্ত হতে চলেছে কলকাতার ফুটবলের ভবিষ্যৎ তৈরির কর্মকাণ্ডে। মউ সই হল লন্ডনে।
- গান্ধী হলে মমতা যেখানে বসেছিলেন, তার প্রেক্ষাপটে ছিল মহাত্মা গান্ধীর পূর্ণাবয়ব প্রতিকৃতি। বক্তৃতার শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী ভারতের সেই ভিতের কথাই উল্লেখ করেন, যা আসলে গান্ধীর ভারতদর্শন।
-
বিলেত থেকে কলকাতায় ফিরে এলেন মুখ্যমন্ত্রী, এ বার ব্যস্ততা শুরু হবে ইদ নিয়ে, ছ’দিনের ইংল্যান্ড সফর নিয়ে সন্তুষ্ট মমতা
-
অক্সফোর্ডে বক্তৃতা: লন্ডনের হোটেল থেকে রওনা দিলেন মমতা, যাচ্ছেন সৌরভও, ‘ব্যাট হাতে প্রস্তুত’ মুখ্যমন্ত্রী
-
হোমওয়ার্ক করে বাণিজ্যের মানদণ্ড নিয়ে ব্রিটিশদের দরবারে মমতা, শিল্প সম্মেলনের বক্তৃতায় ছুঁলেন সাফল্য ও উন্নয়নের বিভিন্ন বিন্দু
-
কলকাতায় ফুটবল স্কুল খুলছে ম্যান সিটি। লন্ডনে রবিঠাকুরের গানে মমতা। সোনার চেয়েও দামি এবং ঠান্ডায় নো পাকামি
-
লন্ডনের ভারতীয় দূতাবাসে আবির্ভূত ‘দিদি’ মমতা, তবে করে রাখলেন মঙ্গলবারের বাণিজ্যবৈঠকের নান্দীমুখটিও