Advertisement
E-Paper

কলকাতায় ফুটবল স্কুল খুলছে ম্যান সিটি। লন্ডনে রবিঠাকুরের গানে মমতা। সোনার চেয়েও দামি এবং ঠান্ডায় নো পাকামি

বাণিজ্য সম্মেলনের মাঝেই বাংলার ফুটবলপ্রেমীদের জন্য সুখবরটা এল। গত চার বারের ইপিএল চ্যাম্পিয়ন ম্যাঞ্চেস্টার সিটি ক্লাব যুক্ত হতে চলেছে কলকাতার ফুটবলের ভবিষ্যৎ তৈরির কর্মকাণ্ডে। মউ সই হল লন্ডনে।

Diary of the UK visit of West Bengal CM Mamata Banerjee: few moments

ম্যাঞ্চেস্টার সিটির সঙ্গে সমঝোতাপত্র (মউ) স্বাক্ষরে টেকনোর পক্ষে হাজির ছিলেন সত‍্যমের পুত্র দেবদূত রায়চৌধুরী। ম্যান সিটির পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়ের হাতে ক্লাবের জার্সি তুলে দেওয়া হয়। —নিজস্ব চিত্র।

অনিন্দ্য জানা • লন্ডন

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৫ ১৮:৪০
Share
Save

কলকাতায় জুড়ছে সিটি

কলকাতায় ফুটবল স্কুল খুলবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন ক্লাব ম্যাঞ্চেস্টার সিটি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিলেত সফরের মধ্যেই ব্রিটিশ ক্লাবের সঙ্গে সমঝোতাপত্র (মউ) স্বাক্ষর হল সত্যম রায়চৌধুরীর টেকনো ইন্ডিয়ার সঙ্গে। মউ সাক্ষরে টেকনোর পক্ষে হাজির ছিলেন সত‍্যমের পুত্র দেবদূত রায়চৌধুরী। ঘোষণা হল বাণিজ্য সম্মেলনে। সেখানেই ম্যান সিটির পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে ক্লাবের জার্সি তুলে দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী বিদেশ সফরে বার বারই উঠে আসছে বাঙালি ফুটবল বা ক্রিকেট প্রেমের প্রসঙ্গ। লন্ডনে মঙ্গলবারের বাণিজ্যবৈঠকের বক্তৃতাতেও মমতা সে কথা স্মরণ করিয়ে ধন্যবাদ জানালেন ম্যান সিটি কর্তৃপক্ষকে।

ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যশালী ফুটবল ক্লাবগুলির মধ্যে অন্যতম ম্যাঞ্চেস্টার সিটি। ১৮৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই ক্লাব। তখন নাম ছিল ‘সেন্ট মার্কস’। ১৮৮৭ সালে এই ক্লাবের নাম পরিবর্তন হয়। নতুন নাম হয় ‘আর্ডউইক অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল ক্লাব’। তার সাত বছর পর, অর্থাৎ, ১৮৯৪ সালে এই ক্লাবের নাম বদলে হয় ম্যাঞ্চেস্টার সিটি। পূর্ব ম্যাঞ্চেস্টারের ‘এতিহাদ স্টেডিয়াম’ তাদের ঘরের মাঠ। মোট ১০ বার ইংল্যান্ডের লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। তার মধ্যে ২০২০ থেকে ২০২৪ মরসুম পর্যন্ত টানা চার বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি। সাত বার এফএ কাপ ও এক বার ক্লাব বিশ্বকাপও জিতেছে ইংল্যান্ডের এই ক্লাব। ২০২২-২৩ মরসুমে ইউরোপের সেরা ক্লাব হিসাবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে সিটি।

সায়লেন্স ইজ় প্ল‍্যাটিনাম!

নীরবতা সাধারণত হিরন্ময় হয়ে থাকে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, নীরবতা তার চেয়েও মহার্ঘ। সোনা তো বটেই, হিরের চেয়েও দামি। তাঁর মতে, নীরবতা প্ল‍্যাটিনামের মতো দামি। সেই কারণেই তিনি সমালোচনায় সাধারণত নীরব থাকেন। এমনিতে বাংলার মুখ‍্যমন্ত্রী সমাজমাধ‍্যমে অহরহ ট্রোল্‌ড হন। বিদেশে এলে সেটা খানিক বাড়ে। এ বারেও শুরু হয়েছে। তবে তা যে তিনি আগের মতো আর গায়ে মাখেন না, সেটাও জানিয়ে দিলেন মমতা। তাঁকে লক্ষ‍্য করে যে সমালোচনা হতে থাকে, তা তিনি যে ভাবে নির্বিকার হয়ে দেখেন, সেই প্রসঙ্গ তুলেছিলেন এক জন। মমতা একটুও বিচলিত না-হয়ে পাল্টা বললেন, ‘‘যারা নিন্দা করার, তারা তো করবেই। অত ভাবলে তো আর কাজটাই করা যাবে না। ও সব আর এখন গায়ে লাগে না।’’ এক গুণমুগ্ধ বললেন, সায়লেন্স ইজ় গোল্ড! মমতা বললেন, ‘‘আমি তো বলি, সায়লেন্স ইজ় প্ল‍্যাটিনাম! অ‍্যান্ড স্পিচ ইজ় সিলভার।’’

পাকামি নয়!

লন্ডনে এখন বেজায় শীত। সে কারণে সকলে কী রকম শীতবস্ত্র পরে বেরোচ্ছেন, তার উপর কড়া নজর রাখছেন মমতা ‘দিদি’ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই তালিকায় যেমন রয়েছেন তাঁর ভ্রাতৃবধূ লতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তেমনই ছাড় পাচ্ছেন না শিল্পসচিব বন্দনা যাদবও। সক্কলকে ধরে ধরে সোয়েটার পরাচ্ছেন মমতা। সঙ্গে স্নেহসুলভ ধমক, ‘‘পাকামি কোরো না! ঠান্ডা লেগে যাবে তো!’’ আইএএস অফিসার বন্দনা এমনিতেই ক্ষীণতনু। হোটেলের লবিতে তাঁকে দেখে মুখ‍্যমন্ত্রী সটান বললেন, ‘‘সোয়েটার পরো! আমি ধার দেব?’’ বন্দনা অপ্রতিভ। তিনি বলতে লাগলেন, ‘‘না-না, আমি ঠিক আছি ম‍্যাডাম!’’ কিন্তু মমতা থামছেন কই! তিনি বলতে লাগলেন, ‘‘স্বরূপ (মুখ‍্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার অন্যতম দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার স্বরূপ গোস্বামী), আমার ঘর থেকে নীল সোয়েটারটা এনে দাও তো। বন্দনা রোগা মানুষ। ঠান্ডা লেগে যাবে। আমিও রোগা। আমিও তো সোয়েটার পরছি।’’

Diary of the UK visit of West Bengal CM Mamata Banerjee: few moments

সবাই ঠিক মতো শীতবস্ত্র পরছে তো? কড়া নজর রয়েছে মমতার। ছবি: ফেসবুক।

শেষ অবধি মুখ‍্যমন্ত্রীর সোয়েটার গায়ে চাপাতে হয়নি শিল্পসচিবকে। গরম চাদর এনে সামাল দিয়েছেন।

সব খেলার সেরা!

সেন্ট জেমস কোর্ট হোটেলের কাছে জাল দিয়ে ঘেরা একফালি জমিতে বাচ্চাদের ফুটবল প্রশিক্ষণ হচ্ছিল। দেখেই দাঁড়িয়ে পড়লেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উৎসাহ দেখে মনে হচ্ছিল, নেহাত মাঝখানে জাল না-থাকলে মাঠে গিয়ে ফুটবলে দু’-একটা শটও করে আসতে পারতেন। কলকাতা এবং মমতার অনুষঙ্গে ফুটবল অবশ‍্য আসারই কথা। ভারতীয় হাই কমিশনার ভি দোরইস্বামী যেমন বললেন কলকাতার ফুটবলপ্রেমের কথা। মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের প্রাচীন লড়াইয়ের কথা। যোগ করলেন, তিনি জানেন, কলকাতার দুই প্রধানের সমর্থকেরা তাঁদের ক্লাবকে ম‍্যানচেস্টার সিটির চেয়েও মহার্ঘ মনে করেন। মমতাও কম যান না। তিনি ফুটবলের মাঠ আরও বাড়িয়ে বললেন, ‘‘এখন তো কলকাতা ক্রিকেটেও ভাল। আমাদের ব্র্যান্ড অ‍্যাম্বাসাডর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। আমাদের শহরের শিল্পপতি সঞ্জীব গোয়েন্‌কা আইপিএলের দল কিনেছেন। উনি তো মোহনবাগান দলেরও কর্ণধার।’’ মান্না দে-র গান সার্থক— ‘সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল’।

কবি ও কবিতা

ব্রিটেনের ভারতীয় হাই কমিশনারকে নিজের আঁকা ছবি ছাড়া আর কী উপহার দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? দিলেন নিজের রচিত কবিতার সঙ্কলন ‘কবিতা বিতান’ এবং তাঁর রাজনৈতিক অভিযাত্রার বিভিন্ন সময়ের মাইলফলক ছবি নিয়ে তৈরি হার্ড কভারের বই ‘মমতা: ফ্রেমস অফ চেঞ্জ, আ পিকটোরিয়াল ট্রিবিউট’। ঘটনাচক্রে, ব্রিটেনের ভারতীয় হাই কমিশনের সঙ্গে বাংলা এবং বাঙালির যোগাযোগ গভীর। ভিতরের সজ্জায় বঙ্গসন্তানের হাতের ছোঁয়া আছে। যেমনটা বললেন হাই কমিশনার ভি দোরইস্বামী। তাঁর স্ত্রী সঙ্গীতার সঙ্গেও কলকাতার যোগসূত্র আছে। যেটা বললেন মমতা নিজে। বর্তমান ডেপুটি হাই কমিশনার বাঙালি— সুজিত ঘোষ। হাই কমিশনের অনুষ্ঠানে অবশ‍্য কবিতা বলেননি মমতা। তবে চিকন গলায় গেয়েছেন রবি ঠাকুরের গান ‘প্রাণ ভরিয়ে, তৃষা হরিয়ে, মোরে আরও আরও আরও দাও প্রাণ’।

Diary of the UK visit of West Bengal CM Mamata Banerjee: few moments

ভারতীয় হাই কমিশনে মমতার কর্মসূচি সবটাই গুরুগম্ভীর ছিল না। ছবি: ফেসবুক।

Mamata Banerjee UK visit

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}