অভিযোগকারী সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়।—নিজস্ব চিত্র।
ছেলে-বৌমার সংসারে ঠাঁই হয়নি। জীবনের শেষ দিনগুলি কাটাতে বেছে নিয়েছিলেন চন্দননগরের একটি বৃদ্ধাশ্রম। কিন্তু সেখানেও কার্যত ‘একঘরে’ অবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছে সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় নামে বছর সাতাত্তরের ওই বৃদ্ধকে।
কেননা, ঠাঁই নেওয়ার দশ মাসের মধ্যে বৃদ্ধাশ্রমে থাকা-খাওয়া খরচ বাবদ ২০০ টাকা বৃদ্ধি মানতে পারেননি। প্রতিবাদ করেছিলেন। সেই ‘অপরাধে’ বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ দিন পনেরো ধরে তাঁকে খাবার দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ সব্যসাচীবাবুর। শুধু তাই নয়, জামাকাপড় কাচার ব্যবস্থা, ঘর পরিষ্কার-সহ অন্য সুযোগ-সুবিধাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। বাইরে থেকে খাবার কিনে কোনওমতে দিন গুজরান করতে হচ্ছে বৃদ্ধকে। আদতে মুম্বইয়ের উল্লাসনগরের বাসিন্দা সব্যসাচীবাবু সাহায্যের জন্য দ্বারস্থ হয়েছেন মহকুমাশাসক এবং শহরের একটি আইনি সহায়তা কেন্দ্রের। দু’টি জায়গাতেই বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ দায়ের করেছেন। মহকুমাশাসক পীযূষ গোস্বামী জানান, বৃদ্ধাশ্রমটি বেসরকারি। ওই আবাসিকের খাওয়া বন্ধ করে অন্যায় কাজ করেছেন সেখানকার কর্তৃপক্ষ। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশাসনে তরফে প্রাথমিক তদন্ত করা হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে হোম কর্তৃপক্ষকে ডেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গত ১১ জানুয়ারি থেকে সব্যসাচীবাবুর সকালের চা থেকে রাতের খাবার সবই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ অন্য সুযোগ-সুবিধাও।
চন্দননগরের বোড়াইচণ্ডীতলা এলাকার ওই বৃদ্ধাশ্রমটির কর্ণধার কাশীনাথ রায়। অভিযোগ কার্যত মেনে নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বাজারদর বেড়ে যাওয়ায় প্রত্যেক আবাসিকের কাছে চলতি মাস থেকে ২০০ টাকা করে বেশি নেওয়া হচ্ছে। সব্যসাচীবাবু তা দিতে রাজি হচ্ছেন না। সেই জন্যই তাঁকে নিজের খাবারের ব্যবস্থা করে নিতে বলা হয়েছে। উনি টাকা দিলেই অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা চালু হয়ে যাবে।’’ ওই বৃদ্ধাশ্রমে কাউকে ঠাঁই নিতে হলে এক লক্ষ টাকা জমা রাখতে হয়। থাকা-খাওয়া এবং অন্য সুযোগ-সুবিধার জন্য ৫০ মাস ধরে আবাসিককে দিতে হয় চার হাজার টাকা করে। জমা দেওয়া এক লক্ষ টাকা থেকে আবাসিকের জন্য ওই ৫০ মাস ২০০০ টাকা করে খরচ করেন কর্তৃপক্ষ। ৫০ মাস পর থেকে আবাসিককে দিতে হয় ছ’হাজার টাকা করে। ওই বৃদ্ধাশ্রমে গত ১৫ মার্চ ঠাঁই নেন সব্যসাচীবাবু। কিন্তু চলতি মাসেই বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ মাসে বাড়তি ২০০ টাকা দাবি করায় আপত্তি জানান সব্যসাচীবাবু। তাঁর অভিযোগ, “কোনও আলোচনা ছাড়াই কর্তৃপক্ষ ওই টাকা চান। জমা টাকা থেকে কেটে নেওয়ার কথা বললেও তাঁরা শোনেননি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy