ভাঙা রেললাইন। ইনসেটে, শেখ মোরতেজ আলি। —নিজস্ব চিত্র।
রেললাইনের ধারে এক ঘণ্টা প্রাতর্ভ্রমণ তাঁর প্রতিদিনের অভ্যাস।
সেই অভ্যাসেই হাঁটতে বেরিয়ে মঙ্গলবার সকালে ব্যান্ডেল-কাটোয়া মেন শাখার ডানলপ-কাটোয়া রেল গেটের কাছে আপ লাইনে একটি ফাটল ধরে ফেলেছিলেন মগরার ঈশ্বরবাগের বাসিন্দা, বছর ত্রিশের শেখ মোরতেজ আলি। লোকজন ডেকে লাইন ঘিরে রাখেন তিনি। নিজে উদ্যোগী হয়ে খবর দেন পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষকে। রেল কর্তৃপক্ষ লাইন মেরামতির ব্যবস্থা করেন। মোরতেজের এই তত্পরতার জেরেই এ দিন ওই লাইনে ট্রেন দুর্ঘটনা এড়ানো গেল।
ঘটনার জেরে এ দিন আর প্রাতর্ভ্রমণ হয়নি মোরতেজের। তাতে অবশ্য আক্ষেপ নেই। তাঁর কথায়, “এক দিন না হাঁটলে শরীরের কোনও ক্ষতি হবে না। কিন্তু ওই লাইন দিয়ে কোনও ট্রেন গেলে যে দুর্ঘটনা ঘটত, সেটা হত বড় ক্ষতি। রেল আমাদের দেশের সম্পদ। তাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের প্রত্যেকের। দুর্ঘটনা এড়াতে পেরে আমি আনন্দিত।”
মোরতেজের তত্পরতার প্রশংসা করেছেন পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষও। রেলের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “রেললাইন সব সময়েই নজরদারি চলে। মনে হয়, আগের রাতে ফাটলটি হয়েছিল। ওই যুবক আমাদের দফতরে জানানোর ফলে বড় ধরনের দুঘর্টনা এড়ানো গিয়েছে।”
ওই ফাটল ধরা পড়ার পরে তা মেরামতির জন্য এক ঘণ্টা আপ লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখেন রেল কর্তৃপক্ষ। পুরো সময়েই সেখানে উপস্থিত ছিলেন মোরতেজ। মেরামতির পরে ওই লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হতে দুপুর গড়িয়ে যায়।
কী ভাবে লাইনে ফাটল চোখে পড়ল মোরতেজের?
তখন সকাল ৭টা। প্রতিদিনের মতো বেরিয়ে পড়েছিলেন মোরতেজ। তাঁর বাড়ির সামনের রাস্তা একেবারে রেল লাইন ঘেঁষা। সেই রাস্তায় কিছুটা এগোতেই তাঁর চোখে পড়ে আপ লাইনের ইঞ্চি তিনেকের ফাটলটি। লাইনের একেবারে সামনে গিয়ে তিনি নিশ্চিত হন। তার কয়েক মিনিট আগেই ওই লাইন দিয়ে একটি লোকাল গিয়েছিল। সেটি অবশ্য কোনও দুর্ঘটনায় পড়েনি। কিন্তু ফের যাতে কোনও ট্রেন ওই লাইনে এসে না পড়ে, তাঁর জন্য নিজেই লাইনের ধারে দাঁড়িয়ে পড়েন মোরতেজ। ফোনে এলাকার লোকজনকে ডেকে নেন। এর পরে তাঁদের ওই জায়গায় দাঁড় করিয়ে নিজে রেলের ডানলপ গেটের গেটম্যানকে গিয়ে সমস্যার কথা জানান। গেটম্যান ফোনে ব্যান্ডেলে পূর্ব রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কর্তৃপক্ষের নির্দেশমতোই ওই শাখার আপ লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এলাকায় কেব্ল লাইনের ব্যবসা করেন মোরতেজ। তাঁর এ দিনের কাজে গর্বিত এলাকার লোকজনও। তাঁদেরই এক জন শেখ রাকেশের কথায়, “ওঁর জন্যই বড় ট্রেন দুর্ঘটনা এড়ানো গেল। ও দারুণ কাজ করেছে। আমরা গর্বিত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy