—নিজস্ব চিত্র।
দরকার মাত্র হাফ কিলোমিটারের একটি রাস্তার। কিন্তু তা না হওয়ায় বাগনানের খালোড়ে নির্মিত হিমঘর এবং সংলগ্ন ফুল-বাজারটি এখনও চালুই হল না। ফলে, তার সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চাষিরা।
গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে হিমঘরটির উদ্বোধন করেছিলেন রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায়। রাজ্য কৃষি বিপণন দফতর এবং হাওড়া জেলা নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির যৌথ উদ্যোগে হিমঘরটি তৈরি হয়েছিল ১ কোটি ৫৯ লক্ষ টাকায়। সংলগ্ন ফুল-বাজারটি তৈরির কাজও শেষ হয়ে গিয়েছে মাস তিনেক আগে। কৃষি বিপণন দফতর এবং উদ্যানপালন দফতরের যৌথ উদ্যোগে ওই বাজার তৈরিতে খরচ হয় ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা।
কিন্তু কেন এখনও তা চালু হল না?
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ফুল-বাজারটিতে যে সব চাষিরা স্টল নেবেন, তাঁরা আসবেন রেলপথে। হাওড়া-খড়্গপুর শাখার বাগনান স্টেশন থেকে ওই ফুলবাজারে আসার সরাসরি কোনও রাস্তা নেই। চাষিরা দাবি জানান, স্টেশন থেকেই একটি রাস্তা করতে হবে যা সরাসরি ফুল বাজারের সঙ্গে স্টেশনের সংযোগ স্থাপন করবে। সেই রাস্তার জন্য জমিও চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু সেখানে কয়েক জন জবরদখলকারী রয়েছেন। তাঁদের পুনর্বাসনের দাবি ওঠে। রাস্তার কিছুটা জমি রয়েছে রেল দফতরের অধীনেও। কিন্তু জবরদখলকারীরা না উঠে গেলে রাস্তা তৈরি সম্ভব নয় বলে স্থানীয় প্রশাসন ও রেল দফতর জানিয়েছে। তা ছাড়া, কোন দফতর ওই রাস্তা তৈরি করবে, তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্তও হয়নি। ফলে, চালু করা যাচ্ছে না হিমঘর ও ফুল-বাজার।
রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “হিমঘর ও ফুল-বাজার চালু করার ক্ষেত্রে কী সমস্যা হচ্ছে, তা খোঁজ নিয়ে দেখব।”
হাওড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় ফুলের চাষ হয়। তবে, মূলত বাগনান-২ ব্লকের শরৎ এবং ওড়ফুলি— এই দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কয়েক হাজার পরিবার ফুল চাষের সঙ্গে যুক্ত। এই সব চাষিরা জগন্নাথ ঘাটে ফুল বিক্রি করতে যান। কিছু চাষি আবার যান কোলাঘাট ফুল-বাজারে। বাগনানে একটি ফুল সংরক্ষণ কেন্দ্র এবং বাজার তৈরির জন্য তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। চাষিদের সেই দাবির ভিত্তিতেই কৃষি বিপণন দফতর এবং হাওড়া জেলা নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি ২০১০ সাল থেকে হিমঘর তৈরির কাজ শুরু করে।
ফুল বাজার তৈরির কাজ শুরু হয় ২০১১ সাল থেকে। ১৯৮৪ সালে খালোড়ে কৃষি বিপণন দফতর প্রায় ৩৩ একর জমি অধিগ্রহণ করে। উদ্দেশ্য ছিল, সেখানে একটি কৃষি-বাজার তৈরি করা। এর জন্য কিছু ভবনও নয়ের দশকের গোড়ায় তৈরি করে ওই দফতর। কিন্তু ব্যবসায়ীরা স্টল নিতে রাজি না হওয়ায় তা শেষ পর্যন্ত পরিত্যক্ত হয়ে যায়। ২০০৬ সালেও ফের কৃষি-বাজার তৈরিতে উদ্যোগী হয় ওই দফতর। কয়েকটি বাড়ি তৈরি হয়। কিন্তু সেই প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয় সঠিক পরিকল্পনার অভাবে। শেষ পর্যন্ত ২০১০ সালে এই জমিতে ফুল বাজার ও বহুমুখী হিমঘর তৈরির পরিকল্পনা করে কৃষি বিপণন দফতর।
চাষিদের আশঙ্কা, প্রথম দু’বার এখানে বাজারের ভবন তৈরি করেও তা চালু করতে পারেনি কৃষি বিপণন দফতর। ফুল-বাজারটির হালও না আগের দু’বারের মতো হয়। অবিলম্বে ওই হিমঘর ও ফুল-বাজার চালুর দাবি জানিয়েছেন ‘সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ নায়েক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy