এক বছর আগে খানাকুল এবং পুড়শুড়ার মধ্যে সংযোগ ঘটাতে তৈরি হয়েছিল দিগরুইঘাট-মুণ্ডেশ্বরী সেতু। কিন্তু দু’প্রান্তে অ্যাপ্রোচ রোড তৈরি না হওয়ায় সেই সেতু চালু হয়নি। ওই রাস্তার জন্য অধিগৃহীত জমির দাম নিয়ে মালিকদের সঙ্গে প্রশাসনের টানাপড়েন চলায় কাজ বন্ধ থাকে। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার থেকে খানাকুলের দিকে রাধানগরে অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ শুরু করল পূর্ত (সড়ক) দফতর।
অ্যাপ্রোচ রোডের জন্য জমির দাম নিয়ে মালিকদের বেশ কয়েক জনের অসন্তোষ অবশ্য এখনও মেটেনি। অনেকেই এখনও জমির দাম বাবদ চেক নেননি। ইতিমধ্যে তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টেরও শরণাপন্ন হয়েছেন। তাঁদের কয়েক জনের অভিযোগ, পুরশুড়ার তৃণমূল বিধায়ক পারভেজ রহমান জোর করে এ দিন রাস্তার কাজ শুরু করালেন। উন্নয়নের স্বার্থে তাঁরা প্রতিবাদ জানাননি। পারভেজ অভিযোগ উড়িয়ে দাবি করেছেন, “জমির মালিকদের সঙ্গে বারবার আলোচনা করেছি। তাঁরা সেতুটির উপযোগিতা বুঝেছেন। রাস্তা নির্মাণে কেউ বাধা দেওয়া তো দূরের কথা, অনেকেই নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আনন্দও করেছেন।”
জেলা পূর্ত (সড়ক) দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার অশোক সাহা জানান, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর রাস্তার জন্য জমি হস্তান্তর করেছে। তাই রাস্তার কাজ শুরু হল। দ্রুত কাজ শেষ করা হবে। ‘দিগরুইঘাট-মুণ্ডেশ্বরী সেতু নির্মাণ দাবি সমিতি’র সম্পাদক শান্তনুকুমার পুরকাইত বেলেন, “সরকার কাল্পনিক বাধা খাড়া করে কাজ শুরু করছিল না। অনিচ্ছুক চাষিদের সঙ্গে বসলেই মিটে যায় বলে আমরা বারবার দাবি করেছিলাম। অবশেষে তা হল।”
পুড়শুড়া এবং খানাকুলের মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়েছে মুণ্ডেশ্বরী নদী। দু’প্রান্তের প্রায় ২৪টি পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল সেতু নির্মাণের। ১৯৯৮ সালে এ জন্য গড়ে তোলা হয় ‘দিগরুইঘাট-মুণ্ডেশ্বরী সেতু নির্মাণ দাবি সমিতি’। সেতুটি হলে কলকাতা, হাওড়া, তারকেশ্বর যাতায়াত আরও সহজ হবে। পূর্ত (সড়ক) দফতর প্রকল্প অনুমোদন করে ২০০৬ সালে। তার পরেই শুরু হয় কাজ রাধানগর এবং দিঘরুইঘাটের মধ্যে সেতু তৈরির কাজ। ২০ কোটি টাকায় দু’দিকের রাস্তা-সহ পুরো সেতুটির নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালের ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে। সেতুটি নির্মাণ শেষ হয়ে যায় গত বছরের জুলাই মাসেই। দু’দিকে সংযোগকারী রাস্তা নির্মাণের জন্য মোট ২৫ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করা হয়। জমির মালিক রয়েছেন মোট ৩২৫ জন।
পূর্ত (সড়ক) দফতর সূত্রে জানা যায়, সেই সময়ে বিঘাপ্রতি ৪ লক্ষ টাকা বা একরপ্রতি ১২ লক্ষ টাকা দাম দেওয়া হয়। ১০০ জন প্রথম দফায় চেক নেন। কিন্তু বাকিদের মধ্যে অনেকেই বিঘাপ্রতি ১০ লক্ষ টাকা চেয়ে বসেন। এ নিয়ে টানাপড়েনে রাস্তার কাজ বন্ধ থাকে। সম্প্রতি জমি-মালিকদের মধ্যে ২৩ জন চেক এবং নগদ টাকা নেন। বাকিরা আদালতের দ্বারস্থ হন। সেই মামলা এখনও চলছে।
জমি-মালিকদের তরফে আইনজীবী পাপিয়া চট্টোপাধ্যায় এবং অনিরুদ্ধ সিংহরায় বলেন, “চাষিরা জমির ন্যায্য দাম পাননি বলে মামলা করেছেন। কিন্তু আমরা ওই কাজে স্থগিতাদেশ চাইনি। কিন্তু যে ভাবে চাষিদের বঞ্চিত করে কাজ শুরু করা হল, তা ঠিক নয়। আমরা স্থগিতাদেশ চাইব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy