Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

পুলিশকে মেরে হাসপাতাল থেকে ‘পলাতক’ নামী ক্রিকেটারের দাদা

প্রথমে নেশা করে এক কাউন্সিলর ও পুলিশকে মারধর। পরে চিকিত্‌সার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়ে পুলিশের চোখ এড়িয়ে পালানোর অভিযোগ উঠল এক যুবকের বিরুদ্ধে। শুক্রবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার গ্র্যান্ড ফোরশোর রোডে। শনিবার রাত পর্যন্ত ওই যুবককে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। যদিও এ দিন মোবাইলে ওই যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন হাসপাতাল থেকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তাই তিনি চলে গিয়েছেন। তাঁর দাবি, “আমায় জামিনযোগ্য ধারা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ডাকলে নিশ্চয় গিয়ে দেখা করব। পালাব কেন?”

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

প্রথমে নেশা করে এক কাউন্সিলর ও পুলিশকে মারধর। পরে চিকিত্‌সার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়ে পুলিশের চোখ এড়িয়ে পালানোর অভিযোগ উঠল এক যুবকের বিরুদ্ধে। শুক্রবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার গ্র্যান্ড ফোরশোর রোডে। শনিবার রাত পর্যন্ত ওই যুবককে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। যদিও এ দিন মোবাইলে ওই যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন হাসপাতাল থেকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তাই তিনি চলে গিয়েছেন। তাঁর দাবি, “আমায় জামিনযোগ্য ধারা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ডাকলে নিশ্চয় গিয়ে দেখা করব। পালাব কেন?”

পুলিশ সূত্রে খবর, পলাতক ওই যুবকের নাম রাজকুমার তিওয়ারি। সম্পর্কে তিনি হাওড়ার বাসিন্দা বাংলার এক ক্রিকেটারের দাদা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে গ্র্যান্ড ফোরশোর রোডে গত দু’দিন ধরে পুজোপাঠ-সহ গজলের আয়োজন করেছিলেন হাওড়া পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা ও কর্মীরা। শুক্রবার অনুষ্ঠান শেষে রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ মঞ্চে বসেই গল্পগুজব করছিলেন উদ্যোক্তারা। অভিযোগ, তখন নেশাগ্রস্ত অবস্থায় হাওড়া স্টেশনের দিক থেকে একটি গাড়ি নিয়ে গ্র্যান্ড ফোরশোর রোড দিয়ে যাচ্ছিলেন রাজকুমারবাবু। যাওয়ার সময়ে তৃণমুলের অনুষ্ঠানের জন্য রাস্তায় করা অস্থায়ী বাঁশের ব্যারিকেডে ধাক্কা মারেন তিনি। যার জেরে ভেঙে পড়ে ব্যারিকেডটি।

পুলিশ জানায়, এই ঘটনার পরে বাংলার ওই ক্রিকেটারের দাদা গাড়ি থেকে নেমে আসেন। অভিযোগ, রাস্তায় ব্যারিকেড করার জন্য এক উদ্যোক্তার সঙ্গে তর্কবিতর্ক শুরু করে দেন। ওই উদ্যোক্তাকে তিনি চড়-থাপ্পড় মারতে শুরু করেন বলেও অভিযোগ। ওই ঘটনা দেখে বাকি তৃণমূলকর্মীরা ছুটে যান। পরিস্থিতি সামলাতে আসেন ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈলেশ রাই। অভিযোগ, ওই সময়ে গাড়ি থেকে একটি লোহার রড বার করে এলোপাথাড়ি চালাতে শুরু করেন রাজকুমার। রডের আঘাতে সুনীল সিংহ নামে এক তৃণমূলকর্মীর হাত ফেটে রক্ত পড়তে থাকে। হাতে আঘাত পান শৈলেশবাবুও। সুনীলবাবুকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

পুলিশ জানায়, ওই ঘটনার পরে তৃণমূল কাউন্সিলর নিজেই মোটরবাইকে চাপিয়ে ক্রিকেটারের নেশাগ্রস্ত দাদাকে হাওড়া থানায় নিয়ে আসেন। কিন্তু অভিযোগ, থানায় ঢোকার পরেই তিনি পুলিশ অফিসারদের নাম করে গালিগালাজ শুরু করেন। এক পুলিশকর্মী প্রতিবাদ করতে এলে তাঁকে মুখে ঘুষিও মারেন বলে অভিযোগ। এর পরে হাওড়ার পদস্থ পুলিশ অফিসারদের তাঁর ক্রিকেটার ভাইয়ের ‘দারোয়ান’ বলে দাবি করে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। থানার বাইরে বেরোলে পুলিশকে তিনি খুন করার হুমকি দেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

শেষ পর্যন্ত কাউন্সিলরের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে ক্রিকেটারের দাদাকে গ্রেফতার করার আগে নিয়মমতো হাওড়া জেলা হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাত নিয়ে যায় পুলিশ। কিন্তু চিকিত্‌সকেরা তাঁকে হাসপাতালে ভর্তির নির্দেশ দেন। পুলিশ সূত্রে খবর, হাসপাতাল থেকে এর পরে ভোরের দিকে পালিয়ে যান রাজকুমার।

শনিবার রাতে রাজকুমারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি কাউকে মারধর করিনি। ইচ্ছাকৃত ভাবে আমার গাড়ি থামিয়ে ওঁরাই মারধর করেছে। গাড়ি ভেঙে দিয়েছে। উল্টে আমাকেই থানায় নিয়ে গেল।”

২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈলেশবাবু বলেন, “ওই ব্যক্তি যা করেছেন, তাতে ওঁর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। এত অন্যায়ের পরে এক জন নামকরা ক্রিকেটারের ভাই বলে রেহাই পেয়ে যাবে, তা যাতে না হয় আমরা লক্ষ রাখছি।”

হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে বলেন, “নির্দিষ্ট ধারায় ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ধরা পড়লে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE