জলের লাইনে অপেক্ষা। সোমবার, হাওড়ায়। —নিজস্ব চিত্র।
রবিবারের পরে সোমবারও জল বন্ধ রইল হাওড়ায়। এমনকী কবে থেকে জল সরবরাহ স্বাভাবিক হবে, তা-ও এ দিন স্পষ্ট করে জানাতে পারেনি পুরসভা।
আসন্ন গ্রীষ্মে জল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বটানিক্যাল গার্ডেনের ভিতরে পদ্মপুকুর জলপ্রকল্পের পাম্প হাউসের পাইপলাইনে মেরামতি শুরু করেছিল হাওড়া পুরসভা। রবিবার সন্ধ্যাতেই সেই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ঠিক ছিল, সোমবার সকাল থেকে জল সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। এ জন্য রাস্তার পাশে পুরসভার কলের সামনে দীর্ঘ লাইন পড়ে হাওড়া শহরের বিভিন্ন এলাকায়। কিন্তু দিনভর লাইনে দাঁড়িয়েও জল মেলেনি। সব থেকে বেশি লাইন পড়তে দেখা গিয়েছে টিউবওয়েলে। কারণ পুরসভার কলে জল না পেয়ে টিউবওয়েল থেকেই জল নিয়েছেন মানুষ।
হাওড়া পুরসভার দাবি, গঙ্গা থেকে জল তোলার মূল পাইপলাইনের ত্রুটিপূর্ণ নকশার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই পরিস্রুত পানীয় জল উৎপাদনে সমস্যা হচ্ছিল। এ জন্য গত এক মাস ধরে বটানিক্যাল গার্ডেনের বিশাল এলাকা জুড়ে মাটির ৩০ ফুট নীচে পাইপলাইনে মেরামতির কাজ চলছিল। রবিবার গোটা শহরে জল বন্ধ রাখা হয় তারই শেষ পর্যায়ের কাজের জন্য। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, কাজ চলাকালীন একটি স্লুইস গেটে গোলমাল হওয়ায় জোয়ারের জল পাইপলাইন দিয়ে ঢুকে পড়ে পুরো এলাকা ভাসিয়ে দেয়। জলের চাপে গর্তের চারপাশের ধস নামায় সমস্যা আরও বড় আকার নেয়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় সমস্ত কাজ।
এ দিন হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ (জল) অরুণ রায়চৌধুরী বলেন, “বিগত বাম বোর্ড পদ্মপুকুর জলপ্রকল্পের ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণ না করায় ওই স্লুইস গেট কাজ করেনি। তাই জল ঢুকে পড়ায় কাজ বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। সেই কারণেই আজ জল সরবরাহ করা যায়নি।”
মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, “শহরের মানুষকে ২৪ ঘণ্টা জল সরবরাহ করার লক্ষ্যেই আমরা কাজ শুরু করেছি। তা করতে গিয়ে একটা দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে। আশা করা যায় সমস্যা শীঘ্রই মিটে যাবে।”
হাওড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, গার্ডেনের ভিতরে পদ্মপুকুরের ওই ইনটেক পয়েন্টে পুরসভা ও কেএমডিএ-র মোট চারটি পাম্প গঙ্গা থেকে জল তোলার জন্য ব্যবহার করা হয়। এত দিন গঙ্গার সঙ্গে সংযুক্ত একটি মূল পাইপ থেকে জোড়া দু’টি পাইপ দিয়ে জল পাম্প করে তোলায় মাঝে মাঝেই পাম্প খারাপ হয়ে জলের উৎপাদন ব্যাহত করত। তাই ৪৭ লক্ষ টাকা খরচ করে ওই সংযুক্ত পাইপ আলাদা করে দেওয়া হচ্ছে। যাতে গঙ্গা থেকে জল তোলায় আর সমস্যা না হয়। মেয়র পারিষদের দাবি, এই কাজ শেষ হলে আগামী দিনে গ্রীষ্মে হাওড়ায় জলসঙ্কট অনেকটা কমবে।
কিন্তু প্রশ্ন হল, কবে থেকে জল সরবরাহ স্বাভাবিক হবে?
অরুণবাবু বলেন, “যে ভাবে কাজ এগোচ্ছে, তাতে মঙ্গলবার সকাল থেকে কিছু এলাকায় জল দেওয়া যাবে বলে মনে হচ্ছে। তবে পাইপে জল না থাকায় বহু জায়গায় হাওয়া ঢুকে গিয়েছে। তাই আজ থেকেই দু’টি পাম্প চালিয়ে জল ঢুকিয়ে হাওয়া বার করা হয়েছে। তবে জল সরবরাহ স্বাভাবিক হতে কয়েক দিন লাগবে।”
কিন্তু জলসঙ্কট মেটাতে পুরসভা কোনও বিকল্প ব্যবস্থা করেনি কেন?
হাওড়ার মেয়র পারিষদ (জল সরবরাহ) বলেন, “১০ লক্ষ মানুষের জন্য একটাই জলপ্রকল্প। সেটি খারাপ হয়ে গেলে এত লোককে বিকল্প উপায়ে জল দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা মানুষকে আগেই সচেতন করেছিলাম, যাতে তাঁরা জল কিছুটা সঞ্চয় করে রাখেন। মনে হয় তাই খুব একটা সমস্যা হয়নি।”
কিন্তু প্রায় ৪৮ ঘণ্টা জল না পাওয়ায় মানুষ যে চরম সমস্যায় পড়েছেন, তা এ দিন শহরের চিত্রই বলে দেয়। জল আসার আশায় যেমন মানুষকে বালতি হাতে রাস্তায় পুরসভার কলের সামনে লাইন দিতে দেখা যায়, তেমনই টিউবওয়েলের সামনেও লাইন পড়ে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পাইপলাইন মেরামতির ব্যাপারে পুরসভা আগে থেকে ঘোষণা না করায় সমস্যা হয়েছে। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ওমপ্রকাশ সিংহ বলেন, “এত বড় কাজ হবে, পুরসভা তা আগে ঘোষণা করেনি। মাইকেও বলেনি। তাই আমরা কেউই জল ধরে রাখিনি।” ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সঞ্জয় রাই বলেন, “জল কবে আসবে, তা পুরসভা ঠিক মতো জানায়নি। ফলে আমরা বুঝতে পারছি না কী করব। এ দিকে, পুরসভাও গাড়িতে করে জল সরবরাহ করেনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy