প্রিয়জিৎ কুমার
পাতিপুকুরে রেললাইনে দেহ মেলা ধনেখালির যুবক প্রিয়জিৎ কুমার খুন হয়েছেন, না দুর্ঘটনার শিকার তা স্পষ্ট হয়নি রেল পুলিশের কাছে। কিন্তু ত্রিকোণ প্রেমের জেরে তাঁর ছেলেকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি করলেন প্রিয়জিতের বাবা তরুণ কুমার। ধনেখালির ভাণ্ডারহাটির বাসিন্দা তরুণবাবু আঙুল তুলেছেন, প্রিয়জিৎ যে বাড়িতে পেয়িং গেস্ট থাকতেন, সেই বাড়ির এক বিবাহবিচ্ছিন্না মহিলার দিকে। চেয়েছেন সিবিআই তদন্তও। মহিলা অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।
কর্মস্থল থেকে সহকর্মীর বিয়েতে যাওয়ার কথা বলে শনিবার সন্ধ্যায় বাড়িতে ফোন করেন প্রিয়জিৎ (২৩)। উত্তর ২৪ পরগনার দুর্গানগরে একটি বাড়িতে ‘পেয়িং গেস্ট’ থাকতেন তিনি। রাজারহাটের একটি শপিং মলের রেস্তোরাঁর কর্মী ওই যুবকের দেহ ওই রাতে পাতিপুকুর রেল স্টেশনের কাছে আপ লাইনের ধারে মেলে। প্রিয়জিতের বাবা তরুণবাবুর সন্দেহ, ঘটনার পিছনে দুর্গানগরের ওই বাড়ির মালিকের মেয়ের ভূমিকা রয়েছে। তাঁর বক্তব্য, “মেয়েটির ব্যাপারে আমরা কিছুই জানতাম না। গভীর রাতে (সাড়ে ৩টে) ছেলের দেহ মেলার পরে, সে দুর্ঘটনাস্থলে গেল কেন? ওই মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার দৌলতেই খুন হয়েছে ছেলে। সিবিআই তদন্ত করলে সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।”
দমদম রেল পুলিশের কাছে করা অভিযোগে কুমার পরিবার দাবি করেছে, প্রিয়জিৎ ছাড়াও ওই মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তৃতীয় কারও। খুনের পিছনে সেই তৃতীয় ব্যক্তির ভূমিকা রয়েছে বলে দাবি করেন তরুণবাবু।
প্রিয়জিতের সঙ্গে সম্পর্কের কথা উড়িয়ে দেননি মহিলাও। কিন্তু বলেছেন, “আমাদের মাঝে তৃতীয় কারও থাকার প্রশ্নই নেই। আমি খামোখা কেন ওকে মারতে যাব? ওঁরা যা বলছেন, তার প্রমাণ জোগাড় করুন। হোক না সিবিআই-তদন্ত।”
বছর বত্রিশের মহিলা দাবি করেছেন, ঘনিষ্ঠতা হওয়ার পরে তিনি জানতে পারেন, প্রিয়জিৎ তাঁর থেকে বয়সে অনেকটাই ছোট। সে জন্য সম্পর্কটা নিয়ে তাঁর তরফে ‘অস্বস্তি’ ছিল। তিনি প্রিয়জিৎকে ‘নিরস্ত’ করার চেষ্টাও করেছিলেন। মহিলা জানান, এর আগে তাঁর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা থেকে শুরু করে নানা ধরনের সাহায্য করেছিলেন প্রিয়জিৎ। বলেন, “তাই গভীর রাতে রেল পুলিশের কাছ থেকে প্রিয়জিতের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে পাড়ার এক পরিচিতের সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। এতে অন্য মানে খোঁজার চেষ্টা বৃথা।”
রেল পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ সল্টলেকের রেস্তোরাঁ থেকে বেরোন প্রিয়জিৎ। রাত পৌনে ১টা নাগাদ দমদম এবং উল্টোডাঙা স্টেশনের মাঝে রেললাইন পরীক্ষা করার সময় রেলকর্মীরা আপ লাইনের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় প্রিয়জিৎকে দেখতে পান। ওই জায়গা দিয়ে রাত ১১টা ৫০ থেকে ১২টার মধ্যে শেষ দু’টি লোকাল ট্রেন যায়। একটি রানাঘাট লোকাল। অন্যটি বনগাঁ লোকাল। ওই ট্রেনগুলির চালকদের সঙ্গে তদন্তকারীরা কথা বলছেন।
এসআরপি (শিয়ালদহ) দেবাশিস বেজ জানান, প্রিয়জিতের হাতে ও পাঁজরে ক্ষতচিহ্ন আছে। ক্ষতের কারণ জানতে ফরেন্সিক-সহ সব পরীক্ষা হবে। তিনি বলেন, “অভিযুক্ত মহিলা-সহ প্রিয়জিতের অন্য বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি। সে-রাতে কার সঙ্গে মোবাইলে প্রিয়জিতের শেষ কথা হয়, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে। এটা খুন না দুর্ঘটনা, এখনও স্পষ্ট নয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy