Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

টোটোচালককে পরিচয়পত্র, বাঁধা হবে রুট ও ভাড়া

বিস্তর জলঘোলার পরে টোটো নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে উদ্যোগী হল হুগলি জেলা প্রশাসন। নিয়ন্ত্রণ না থাকায় নতুন আমদানি হওয়া এই গাড়ি যত্রচত্র চলাচলের কারণে অটোরিকশা সঙ্গে প্রায়ই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু দিনের পর দিন তা বাড়তে থাকায় আইন-শৃঙ্খলার সমস্যার কারণে নড়েচনে বসেছে প্রশাসন। সম্প্রতি নবান্নের নির্দেশ পেয়ে জেলা প্রশাসনের তরফে বৈঠক করে পুরসভাগুলিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নিজের নিজের এলাকায় তারাই টোটার নিয়ন্ত্রণ করবে।

—নিজস্ব চিত্র।

—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০০
Share: Save:

বিস্তর জলঘোলার পরে টোটো নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে উদ্যোগী হল হুগলি জেলা প্রশাসন। নিয়ন্ত্রণ না থাকায় নতুন আমদানি হওয়া এই গাড়ি যত্রচত্র চলাচলের কারণে অটোরিকশা সঙ্গে প্রায়ই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু দিনের পর দিন তা বাড়তে থাকায় আইন-শৃঙ্খলার সমস্যার কারণে নড়েচনে বসেছে প্রশাসন। সম্প্রতি নবান্নের নির্দেশ পেয়ে জেলা প্রশাসনের তরফে বৈঠক করে পুরসভাগুলিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নিজের নিজের এলাকায় তারাই টোটার নিয়ন্ত্রণ করবে।

দিন কয়েক আগে শ্রীরামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল (সিআইসি)-এর বৈঠকে এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব আনা হয়েছে। বৈঠকে পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায়, উপপুরপ্রধান উত্তম নাগ, সিআইসি উত্তম রায়, বিরোধী দলনেতা সিপিএমের সমীরেশ রায় প্রমুখ হাজির ছিলেন। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, টোটো গাড়িকে নীল-সাদা রং করতে হবে। প্রথম পর্যায়ে ১৫১টি টোটোকে রেজিস্ট্রেশন দেবে পুরসভা। গাড়িগুলি পুর-এলাকায় নির্দিষ্ট রুটে চলতে পারবে। চালককে পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। বেঁধে দেওয়া হবে ভাড়াও। আজ, শুক্রবার পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা।

তবে, ওই প্রস্তাব নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অটোচালকেরা। তাঁদের বক্তব্য, যে সমস্ত রুটের প্রস্তাব করা হয়েছে, তার মধ্যে অন্তত তিনটি রুটের ক্ষেত্রে অটো চলাচল মার খাবে। বৈঠকে থাকা শ্রীরামপুর ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পিন্টু নাগ বলেন, ‘‘প্রস্তাবিত তিনটি রুট নিয়ে অটোচালকদের আপত্তির কথা আমাদের কানে এসেছে, এ ব্যাপারে বোর্ড মিটিংয়ে নিশ্চয়ই আলোচনা হবে।’’ অটোচালকদের পক্ষে আন্দোলনকারী তৃণমূল নেতা কাবুল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জিটি রোডে টোটো চালানো বন্ধ করতে পুরসভাকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছি। না হলে বৃহত্তর আন্দোলন করব।’’ টোটোর নীল-সাদা রং নিয়ে অটোচালকদের একাংশের বক্তব্য, ‘‘নীল-সাদা মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের রং। ফলে এই রং কার্যত তৃণমূলেরই। সেই কারণেই এই রং বেছে নেওয়া হয়েছে।’’

পিন্টুবাবুর অবশ্য দাবি, ‘‘পুরো গাড়ির রং নীল-সাদা করার কথা বলা হয়নি। পুরসভার অনুমোদনের চিহ্ন হিসাবে কেবল ওই রঙের বর্ডার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।’’

মাস কয়েক ধরে শ্রীরামপুর, কোন্নগর, উত্তরপাড়া, ভদ্রেশ্বর, চুঁচুড়া-সহ নানা জায়গায় টোটো চলাচল ভীষণ ভাবে বেড়ে গিয়েছে। অটোচালকদের অভিযোগ, সরকারকে তাঁদের কর দিতে হয়। কিন্তু টোটোর ক্ষেত্রে সে বালাই নেই। ব্যাটারিতে চলায় ওই গাড়ির তেমন খরচ নেই। ফলে অটোর তুলনায় কম ভাড়ায় দিব্যি চলতে পারে। কিন্তু এতে তাঁদের রোজগারে টান পড়ছে। আর এই নিয়েই হাওড়ার বালি, হুগলির শ্রীরামপুর, চন্দননগর-সহ নানা জায়গায় অটো এবং টোটো চালকদের মধ্যে থেকে থেকেই সংঘর্ষ, মারামারির মতো ঘটনা ঘটছে।

অটোর রুটে টোটো চলাচল বন্ধ করতে ইতিমধ্যে অটোচালকরা আন্দোলনেও নেমেছেন। শ্রীরামপুর-বাগখাল রুটের এক অটোচালকের বক্তব্য, ‘‘টোটোর দাপটে যাত্রী কমেছে আমাদের। অনেকেই ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে অটো কিনেছেন। মাসিক কিস্তিতে ঋণ শোধ করতে হয়। এ ভাবে চলতে থাকলে তাঁরা বিপদে পড়ে যাবেন।” তাঁর দাবি, “যেখানে গাড়ি চলে না, সে সমস্ত জায়গায় টোটো চালানো হোক। আমাদের ভাত মেরে নয়।’’ পাল্টা টোটো চালকদের বক্তব্য, রুজির টানে তাঁরাও গাড়ি চালাচ্ছেন। প্রশাসনের তরফে রুট বেঁধে দেওয়া হলে তাঁরা সেই মতোই চলবেন।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি এক জনস্বার্থ মামলায় হাইকোর্ট রায় দিয়েছে, বালি থেকে রিষড়ার মধ্যে জিটি রোডে টোটো চলাচল বন্ধ করতে হবে। যদিও সেই নির্দেশ যথাযথ মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। সব জায়গাতেই জিটি রোডে টোটো চলাচল করছে। কম গতির এই গাড়ি ব্যস্ত রাস্তায় চলার ফলে যানজট বাড়ছে বলে গাড়ি চালকদের একাংশের দাবি। তবে নিত্যযাত্রীদের বক্তব্য, সন্ধ্যা থেকে বিভিন্ন জায়গায় অটো মেলা দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়। তাই তাঁরা চান টোটো চলুক। না হলে, অটোচালকদের রাতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত গাড়ি চালানো বাধ্যতামূলক করা হোক।

অন্য বিষয়গুলি:

toto id route serampore southbengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE