বাঁকড়ায় সংঘর্ষ ও বোমাবাজির জেরে উল্টে যাওয়া গাড়ি। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
চোলাই বিক্রির প্রতিবাদ নিয়ে নয়, অভিযোগ, হাওড়ার বাঁকড়ায় রবিবারের গোলমালের পিছনে রয়েছে তোলাবাজি নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।
রবিবার রাতে বাঁকড়ায় বোমা ফেটে মৃত্যু হয় শেখ মুন্না নামে এক তৃণমূলকর্মীর। তখন তৃণমূলের তরফে দাবি করা হয়, চোলাই বিক্রির প্রতিবাদ করার ফলেই এই হামলার ঘটনা ঘটে এবং দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমায় মৃত্যু হয় মুন্নার। কিন্তু অভিযোগ, সলপ সেতুর নীচে দলের একাংশের বেপরোয়া তোলাবাজিতে বাধা দিলে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। যাঁরা তোলাবাজিতে বাধা দিয়েছিলেন, তাঁরা এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, গত কয়েক বছরে সলপ মোড় উড়ালপুলের নীচে রাতারাতি গজিয়ে উঠেছিল একাধিক ঝুপড়ি হোটেল, গুমটি ও গাড়ির অবৈধ পার্কিং। অভিযোগ, স্থানীয় একদল যুবক মাসিক বা এককালীন চুক্তিতে মোটা টাকা তোলা আদায় করছিল সেখান থেকে। হোটেল ও গুমটি থেকে ‘ভাড়া’ বাবদ ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং পার্কিং থেকে গাড়ি-প্রতি মাসে ৩০০ টাকা নেওয়া হচ্ছিল। রবিবার শেখ সিরাজ নামে এলাকারই বাসিন্দা এক ফল বিক্রেতার কাছে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করে ওই যুবকেরা। কয়েক দিন আগে সলপ সেতুর নীচে ট্রলি করে ফলের রসের দোকান দেন সিরাজ। অভিযোগ, রবিবার তারারুখ শেখ নামে বাঁকড়া পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা এক যুবক দলবল নিয়ে এসে ওই ট্রলি বসানোর জন্য পাঁচ হাজার টাকা দাবি করে। স্থানীয় তৃণমূল নেতা, বাঁকড়া ২ নম্বর পঞ্চায়েত সদস্য মঞ্জার আনসারিকে ঘটনাটি জানান সিরাজ। তিনি লোকজন পাঠিয়ে তারারুখকে টাকা নিতে নিষেধ করেন। অভিযোগ, এর পরে দুপুরে কয়েক জন যুবক এসে সিরাজকে মারধর করে তাঁর ট্রলিটি ভেঙে দেয়। এই ঘটনার জেরে দু’পক্ষের সংঘর্ষ বাধে, চলে বোমাবাজিও। বোমার আঘাতেই মৃত্যু হয় মুন্নার।
সোমবার ওই ফল-বিক্রেতা বলেন, “ওদের বলেছিলাম অনেক কষ্টে ৫০০ টাকা দিয়ে পুরনো ট্রলি কিনে ব্যবসা শুরু করেছি। পাঁচ হাজার টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। শুনল না। টাকার জন্য শাসিয়ে গেল, পরে এসে মারধর করে ট্রলিটাও ভেঙে দিল।’’
এ দিন মুন্নার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তে সেতুর নীচে পার্কিংয়ে রাখা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি সামলাতে র্যাফ ও বিশাল পুলিশবাহিনী আসে।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, চার দিকে পড়ে না ফাটা বোমা, গাড়ির ভাঙা অংশ। সেতুর পাশে বাঁকড়া ২ নম্বর পঞ্চায়েত অফিসে মঞ্জার আনসারি বলেন, “ওদের আসল লক্ষ্য ছিলাম আমি। অন্য জায়গায় থাকায় আমি বেঁচে গিয়েছি।”
কিন্তু পঞ্চায়েত অফিসের সামনে দিনের পর দিন তোলাবাজি হলেও দলের একাংশ জড়িত বলে কি কিছু করা যায়নি? তৃণমূলের ওই পঞ্চায়েত সদস্য বলেন, “প্রতিবাদ করাতেই এমন ঘটল। এতে দলের কেউ জড়িত কি না, জানা নেই।” এলাকার বাসিন্দা ও তৃণমূলের যুব নেতা শেখ আব্দুল সামাদ বলেন, “যারা এ সব করেছে, সকলেই আগে সিপিএম করত। এখন তৃণমূলে। আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম বলেই ওরা রাতে আক্রমণ করে।”
স্থানীয় বিধায়ক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই ঘটনা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নয়। এর পিছনে সিপিএম-আশ্রিত কিছু সমাজবিরোধী থাকতে পারে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy