আলোকিত: আলোকময় শোভাযাত্রা চন্দননগরের রাস্তায়। নিজস্ব চিত্র
রবিবার জগদ্ধাত্রীর ভাসান হল চন্দননগরে। একই সঙ্গে যেন আলোকসজ্জার কাঠামো থেকে ‘এলইডি’র বিদায় ঘণ্টাও বেজে গেল! বাজারে এল ‘পিক্সেল’ আলো। এলইডির অতিরিক্ত ঔজ্জ্বল্য থেকে মুক্তি দিয়ে যে আলো ফিরিয়ে আনবে টুনি বাল্বের নরম আলোর অনুভূতি।
চন্দননগরের আলোকসজ্জার খ্যাতি জগৎজোড়া। বিবর্তনের মধ্য দিয়ে টুনি বাল্বের কলকা, এলইডি জায়গা করে নিয়েছে এখানকার আলোর বাজারে। দশ-বারো বছর আগে এলইডির উদ্ভাবনে পিছু হটেছিল টুনি বাল্ব। সেই সময় জাপান, কোরিয়া, জার্মানি থেকে ওই বাল্ব এনে এলইডি-যুগ শুরু হয়েছিল আলোকশিল্পী অসীম দাসের হাত ধরে। অসীমবাবুর দাবি, পিক্সেল আলোও বাজারে আনলেন তিনিই।
চন্দননগরের ডুপ্লেক্সপট্টি দিঘির ধারে অসীমবাবুর আলোর কারখানা। বছর সাতচল্লিশের এই আলোকশিল্পীর বক্তব্য, লাল, সবুজ এবং নীল-ই হল সমস্ত রঙের আধার। এই তিনটি রং মিশিয়েই
পনেরো-ষোলো রঙের আলোকসজ্জা তৈরি হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে একেই পিক্সেল আলো বলা হচ্ছে। এই বাল্বের বেশির ভাগই কোরিয়া থেকে আনা হয়েছে। বাকি চিন থেকে। একটি আলোর আকৃতি ১০-১২ মিলিমিটার। তিনি বলেন, ‘‘ছ’বছর ধরে পরীক্ষা চালিয়েছি। এ বারেই শহরের মরান রোডের বিসর্জনের শোভাযাত্রায় প্রথম এই আলো লাগালাম।’’
অসীমবাবুর তৈরি পিক্সেল আলোর কাঠামোয় দেখা গেল বিশালাকার অর্কিড, সূর্যমুখী, জবা-সহ নানা ফুল। কুঁড়ি থেকে ফুল ফোটার দৃশ্য। অসীমবাবুর দাবি, ‘‘একটা ফুলে যত রকম রং, তার সবই ফুটিয়ে তোলা যায় এই প্রযুক্তিতে।’’
এলইডির সঙ্গে এই পিক্সেলের তফাত কোথায়?
অনেকের বক্তব্য, টুনি বাল্বের আলো ছিল অনেক নরম। কিন্তু সেই তুলনায় এলইডি-র আলো অনেক বেশী তীক্ষ্ণ। সামনে থেকে এলইডি-র দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। অসীমের বক্তব্য, এলইডি টুনি বাল্বের তুলনায় অনেক বেশি টেঁকসই। সাশ্রয়ও হয়। কিন্তু অতিরিক্ত ঔজ্জ্বল্য এই আলোর নেতিবাচক দিক। পরে চাকচিক্য অনেকটা কমানো গেলেও টুনি বাল্বের নরম ভাব পুরোপুরি ফেরানো যায়নি। পিক্সেল আলো টুনি বাল্বের সেই নরম অনুভূতি ফিরিয়ে আনবে। দৃষ্টিতে যাতে অসুবিধা না হয়, সে জন্য পিক্সেল আলোর তীব্রতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ফলে চোখের পক্ষে এই আলো বিরক্তিকর তো নয়ই, বরং আরামদায়ক। একটি মডেলের বিশেষ বিশেষ অংশের নির্দিষ্ট রং সফটওয়্যারের মাধ্যমে অবিকল সেই রঙেরই করা যায়।
এই আলো কী আগামী দিনে বাজার দখল করবে? আলোকশিল্পীর বক্তব্য, ‘‘এখন নতুন বলে খরচটা অনেক বেশি। তবে সবাই শুরু করলে, আমদানি বাড়লে খরচও কমবে। সব মিলিয়ে আমি আশাবাদী।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy