Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

ইটভাটার শিশুদের নিয়েও ভাবনা শুরু সর্বশিক্ষা মিশনের

তবে দু’-একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিজেদের মতো করে চেষ্টা করে। কখনও প্রশাসনের তরফে এদের মূলস্রোতে ফেরানোর চেষ্টা করা হয়। তবে তা আদৌ যথেষ্ট কি না, তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ যথেষ্ট।

বিপন্ন: চণ্ডীতলার একটি ইটভাটায়। ছবি: দীপঙ্কর দে

বিপন্ন: চণ্ডীতলার একটি ইটভাটায়। ছবি: দীপঙ্কর দে

প্রকাশ পাল
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৩২
Share: Save:

প্রশাসনের হিসেবে হুগলি শিশুশ্রমিক-মুক্ত জেলা।

কিন্তু জেলার বিভিন্ন ইটভাটায় উঁকি দিলেই দেখা যাবে, সেখানে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা কাজ করছে। বিভিন্ন রেল স্টেশনের আশপাশে ইতিউতি ঘুরে বেড়ায় ছোটরা। অনেকেই ভিক্ষে করে। অনেকে আঠা শুঁকে নেশা করে। কার্যত কেউই স্কুলে যায় না। সে দিকে প্রশাসনের দৃষ্টি নেই বলে অভিযোগ।

তবে দু’-একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিজেদের মতো করে চেষ্টা করে। কখনও প্রশাসনের তরফে এদের মূলস্রোতে ফেরানোর চেষ্টা করা হয়। তবে তা আদৌ যথেষ্ট কি না, তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ যথেষ্ট।

শেওড়াফুলি, শ্রীরামপুর, ব্যান্ডেল, দিয়াড়া, তারকেশ্বর-সহ বিভিন্ন স্টেশনের আশপাশে বা প্ল্যাটফর্মে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির অভিজ্ঞতা বলছে, অনেকের মা-বাবাই তাদের ভিক্ষা করার কাজে নামিয়ে দেয়। বছর দেড়েক আগে এক যুবক শেওড়াফুলি স্টেশনের মালগুদামে কয়েকজন প্ল্যাটফর্ম-শিশুকে জুটিয়ে পড়াতে শুরু করেন। বর্তমানে আরও জনা কুড়ি যুবক এবং তরুণী যুক্ত হয়েছেন। শুধু পড়ানোই নয়। সংগঠন গড়ে ওই শিশুদের জন্য মাঝেমধ্যে খাবার ব্যবস্থা করা, মেডিক্যাল পরীক্ষা, ওষুধের ব্যবস্থাও করা হয়।

সংগঠনের এক সদস্য বলেন, ‘‘আশার কথা, অনেকেই নেশা করা ছেড়ে দিয়েছে। ১০-১২ জন‌কে স্কুলে ভর্তি করিয়েছি।’’ মাস কয়েক আগে এক কিশোরীকে মুর্শিদাবাদে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন মা-দিদা। সেই বিয়ে রুখে দিয়েছেন সংগঠনের সদস্যরা। মেয়েটি এখন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। সে জানিয়ে দেয়, ‘‘আগে পড়তাম না। এখন পড়ি। পড়তে ভালই লাগে।’’ শেখ রুমজান মায়ের সঙ্গে থাকে রেলের পরিত্যক্ত মালগুদামে। রুমজান দ্বিতীয় শ্রেণিতে স্কুলে ভর্তি হয়েছে।

এমন শিশুদের স্কুলে পাঠানোর দায়িত্ব কার?

শ্রম দফতরের আধিকারিকদের বক্তব্য, শিশু শ্রমের সঙ্গে যুক্তদের ব্যাপারে অভিযোগ মিললে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ইটভাটায় নির্দিষ্ট মরসুমে মূলত ভিন্‌ রাজ্যের লোকেরা কাজে আসেন। অনেকে ছোট ছেলেমেয়েকে সঙ্গে আনেন। তারা ইটভাটাতেই ঘুরে বেড়ায়। এদের কাজ করার ব্যাপারে খবর পেলে শ্রম দফতরের তরফে অভিযান চালানো হয়। বছর খানেক আগে ইটভাটা এবং নির্মীয়মাণ কারখানায় অভিযান চালিয়ে কয়েকজন শিশুশ্রমিককে উদ্ধার করা হয়। তবে এদের স্কুলে পাঠানোর দায়িত্ব শ্রম দফতরের নয় বলে আধিকারিকদের দাবি।

সম্প্রতি চাইল্ড লাইন, আরপিএফ, জিআরপি, পুলিশ, জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের (ডালসা) প্যারা-লিগাল ভলান্টিয়ার, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার লোকেরা ব্যান্ডেল স্টেশন চত্বরে যৌথ অভিযান চালিয়ে চার জন নাবা‌লক-নাবালিকাকে উদ্ধার করেন। তাদের হোমে পাঠানো হয়। প্রশাসন সূত্রের খবর, তাদের স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে।

জেলার সর্বশিক্ষা মিশনের প্রকল্প আধিকারিক অরূপ দত্ত জানান, জেলায় এই শিশুদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। সবাইকে স্কুলে ভর্তির চেষ্টা করা হবে। আগ্রহী শিক্ষকদের সাম্মানিক দিয়ে পড়ানোর ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে। অরূপবাবু কথায়, ‘‘কয়েক মাসের জন্য ইটভাটায় যে শিশুরা বাবা-মায়ের সঙ্গে আসে, তাদের কথাও ভাবা হচ্ছে। ওরা যে ভাষায় কথা বলে, সেই মাধ্যমের স্কুলে পাঠানো যায় কি না, তা দেখা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Brick Kiln Sarva Shiksha Mission Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE