Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
শ্যামপুরে ওসি-এসআইয়ের অবস্থা এখন স্থিতিশীল

গোয়েন্দা ব্যর্থতাতেই হামলা, প্রশ্ন

তদন্তে পুলিশ জেনেছে, হামলায় মূল অভিযুক্ত, ধৃত মতিয়র রহমান মুন্সি শুক্রবার বিকেলেই পুলিশের উপরে হামলার পরিকল্পনা করে। তার পক্ষের লোকজনকে তাতিয়েছিল।

আতঙ্ক:  বাড়গড়চুমুকে চলছে টহল। ছবি: সুব্রত জানা

আতঙ্ক: বাড়গড়চুমুকে চলছে টহল। ছবি: সুব্রত জানা

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্যামপুর ও উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৫৯
Share: Save:

এলাকায় পুলিশ টহল চলছেই। কিন্তু শ্যামপুরের বাড়গড়চুমুকে ওসি-এসআইয়ের উপরে হামলার ঘটনায় রবিবার বিকেল পর্যন্ত নতুন করে আর কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। কিন্তু যে ভাবে পরিকল্পনা করে শুক্রবার তাঁদের উপরে হামলা হয়েছে, সে ব্যাপারে আগাম কোনও তথ্য না-পাওয়াকে নিজেদের ব্যর্থতা হিসেবেই মনে করছেন জেলা পুলিশকর্মীদের একাংশ। পুলিশ মহলে স্বস্তি একটাই, ওসি সুমন দাস এবং সাব-ইন্সপেক্টর তরুণ পুরকায়স্থের অবস্থা স্থিতিশীল।

তদন্তে পুলিশ জেনেছে, হামলায় মূল অভিযুক্ত, ধৃত মতিয়র রহমান মুন্সি শুক্রবার বিকেলেই পুলিশের উপরে হামলার পরিকল্পনা করে। তার পক্ষের লোকজনকে তাতিয়েছিল। বাড়িতে অন্তত ৩০ জন মহিলা-পুরুষকে জড়ো করেছিল। পুলিশকে ঠেকানোর জন্য বাড়িতে ইট-বাঁশ-মুগুরও মজুত করেছিল। এমনকী, আলোচনার পরে বাড়ির সামনে থাকা পুলিশ ক্যাম্পের পুলিশকর্মীদের সে গালিগালাজও করে।

ওই হামলার পরিকল্পনার কথা মেনেছে জেলা গোয়েন্দা বিভাগ এবং সাধারণ গ্রামবাসীও। এতেই প্রশ্ন উঠেছে, শুক্রবার বিকেলেই যেখানে পুলিশকে প্রতিহত করতে এত প্রস্তুতি নেওয়া হয়, সে খবর শ্যামপুর থানা পর্যন্ত পৌঁছল না কেন?

একটি ওয়াকফ সম্পত্তি কারা দেখভাল করবে, তা নিয়ে মতিয়র রহমান মুন্সি ও তাঁর পক্ষের লোকজনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছে তার পরিবারেরই হানিফ মুন্সি ও তার গোষ্ঠীর। শুক্রবার সকালে মতিয়ারের লোকজন হানিফকে মারধর করে, শ্যামপুর থানায় এই অভিযোগ দায়ের হয়। পেশায় আইনজীবী মতিয়রের বাড়ি বাড়গড়চুমুকে হলেও কর্মসূত্রে সে উলুবেড়িয়ায় থাকে। শুক্রবার বিকেলে সে বাড়গড়চুমুকে আসে। শুক্রবার রাতে তিন অভিযুক্তকে ধরে মতিয়রের বাড়ির সামনে পৌঁছন ওসি সুমনবাবু। সঙ্গে ছিলেন তরুণবাবু, জনাদুয়েক সিভিক ভলান্টিয়ার এবং পিসি পার্টির তিন সদস্য। তখনই হামলা হয়। মাথা ফাটে সুমনবাবু এবং তরুণবাবুর। তিন আসামিকেই ছিনিয়ে নেওয়া হয়। সুমনবাবুকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতার এবং তরুণবাবুকে উলুবেড়িয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

ঘটনার কাটাছেঁড়া করতে নেমে তদন্তকারীরা নিশ্চিত, এমন হামলা যে হতে পারে, সে তথ্য সুমনবাবুর কাছে ছিল না। না হলে তিনি সঙ্গে মাত্র ছ’জনকে নিয়ে অভিযানে যেতেন না। এক বছর আগেও একই ঘটনায় অভিযুক্তদের ধরতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিল পুলিশ। তা থেকেই বা কেন পুলিশ শিক্ষা নিল না, উঠছে সে প্রশ্নও।

এ নিয়ে হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, ‘‘মতিয়র-সহ ধৃত সাত জনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বাকি হামলাকারীদের খোঁজে তল্লাশি জারি রয়েছে।’’ তবে, জেলা পুলিশকর্তাদের একাংশ মানছেন, গ্রামীণ এলাকায় জনসংখ্যার নিরিখে থানার সংখ্যা কম থাকায় প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে নিয়মিত যোগাযোগ রাখায় সমস্যা হচ্ছে। কয়েকটি জায়গায় নতুন থানা গড়ার প্রস্তাব পাঠানো হলেও এখন তা কার্যকর হয়নি। আর এক ফাঁক গলেই কখনও ধূলাগড়িতে গোষ্ঠী-সংঘর্ষ হচ্ছে, কখনও জয়পুরে তৃণমূল নেতা ও তাঁর ভাই খুন হচ্ছেন, কখনও পুলিশ আক্রান্ত হচ্ছে। ধূলাগড়ি বা জয়পুরের ঘটনাতেও পুলিশি ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছিল।

সুমনবাবুর পরিচিতরা অবশ্য মনে করছেন, সাহসী হওয়ার মাসুল গুনতে হল তাঁকে। সুমনবাবুর বাড়ি হিন্দমোটরের নন্দনকানন এলাকায়। তবে, তিনি বর্তমানে শ্যামপুরের পুলিশ কোয়ার্টারে থাকেন। স্ত্রী-পুত্র এবং মা থাকেন বিদ্যাসাগর সেতুর কাছে একটি বাড়িতে। তবে, হিন্দমোটরের সঙ্গে তাঁর ভালই যোগাযোগ রয়েছে। ২০০২ সালে তিনি পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন। বাবা মৃণালকান্তি দাসও পুলিশ অফিসার ছিলেন। রবিবার হিন্দমোটরের বাড়িতে ছিলেন সুমনবাবুর জ্যাঠতুতো বৌদি ফাল্গুনী দাস। তিনি বলেন, ‘‘ওর মতো ছেলে যে কী করে আক্রান্ত হল, বুঝতে পারছি না।’’

এ দিন হাসপাতালে সুমনবাবুকে দেখতে যান বিজেপি নেতা মুকুল রায় এবং দলের রাজ্য মহিলা মোর্চার সভানেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। লকেট দেখতে পারলেও মুকুল পারেননি। লকেট বলেন, ‘‘আমি সুমনবাবুকে দেখতে ঢুকে যাওয়ার পরেই পুলিশের টনক নড়ে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকেও বারণ করেন। কিন্তু ততক্ষণে আমি সুমনবাবুর কাছে পৌঁছে গিয়েছি।’’

আর মুকুলের বক্তব্য, ‘‘সুমন দাস আমার খুব কাছের মানুষ। ওর এই অবস্থায় আমি ওকে শুধু দেখতে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে বললেন, পুলিশ ব্যারিকেড আছে। ফলে যাওয়া যাবে না।’’ উলুবেড়িয়ার হাসপাতালে এসআইকে দেখতে যান ‘সেভ ডেমোক্রেসি’র সদস্যেরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Shyampur Police Patrolling শ্যামপুর
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE