বিফলে: ডানকুনির রাস্তায় লাগানো ক্যামেরা। ফাইল ছবি
রাস্তায় রাস্তায় সিসিক্যামেরা। কিন্তু তার ফুটেজ দেখে কি দুষ্কৃতী ধরা পড়ছে?
প্রশ্নটা উঠছে মাসখানেক আগে ডানকুনি এবং চণ্ডীতলার মশাটের দু’টি এটিএম কেটে টাকা নিয়ে পালানো দুষ্কৃতীদের কেউ এখনও গ্রেফতার না-হওয়ায়। এ নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ। তাঁদের প্রশ্ন, দুষ্কর্ম রুখতে সিসিক্যামেরা বসেছে নানা জায়গায়। তার পরেও কেন ধরা যাচ্ছে না দুষ্কৃতীদের? মশাটের এক যুবক বলেন, ‘‘ঘটা করে সিসি ক্যামেরা লাগানো হল। কিন্তু তার উপযোগিতা বুঝতে পারছি না।’’
অবশ্য এ প্রশ্ন শুধু ডানকুনি বা মশাটে আটকে নেই। বছরখানেকের মধ্যে হুগলির শহরাঞ্চলে এবং বেশ কিছু গ্রামীণ এলাকায় রাস্তার ধারে সিসিক্যামেরা বসানো হয়েছে। কিছু বসানো হয় পুলিশের উদ্যোগে, কিছু পুরসভার। সাধারণ মানুষ মনে করেছিলেন, এক ফলে অপরাধে লাগাম পরানো যাবে। দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা সহজ হবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
এই অভিযোগ মানতে চাননি চন্দননগর কমিশনারেট বা জেলার গ্রামীণ পুলিশের কর্তারা। তাঁদের দাবি, মোটের উপর সিসিটিভির আওতায় থাকা এলাকায় নজরদারি চালানো সহজ হয়েছে। বেশ কিছু ঘটনার কিনারার ক্ষেত্রেও তা সহায়ক হয়েছে। একই সঙ্গে অবশ্য তাঁরা কিছু সীমাবদ্ধতার কথাও তুলেছেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, চণ্ডীতলা এলাকায় গত বছর ৭৬টি জায়গায় সিসিক্যামেরা লাগানো হয়। মাস দেড়েক আগে সেই ফুটেজ দেখেই বেগমপুরে একটি ছিনতাইয়ের ঘটনার কিনারা হয়েছে। মশাটে এটিএম কাটতে আসা দুষ্কৃতীদের গাড়ির ছবি সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লেও সেটির নম্বর বোঝা সম্ভব হয়নি। ডানকুনি থানা এলাকায় কত জায়গায় সিসিটিভি রয়েছে, পুলিশ তা জানাতে পারেনি। পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পুরসভা চত্বরে ৮টি সিসিক্যামেরা লাগানো হয়েছে। আরও ৬৫টি সিসি ক্যামেরার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতেও কয়েকটি জায়গায় সিসি ক্যামেরা আছে। তবে সিসিটিভি দেখে সাম্প্রতিক সময়ে ডানকুনিতে কোনও দুষ্কর্মের ঘটনার কিনারা করা যায়নি বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
কোন সীমাবদ্ধতার কথা বলছেন পুলিশকর্তারা?
তাঁদের মতে, সাধারণ মানের সিসিক্যামেরায় রাতের ছবি ভাল ধরা পড়ে না। রাতে কোনও গাড়ি অপরাধ করে পালালেও তার নম্বর প্লেট দেখা যায় না। সূত্র পেলেও কাজে লাগে না। এর জন্য দামি ‘নাইট-ভিশন ক্যামেরা’ প্রয়োজন। প্রয়োজন বাড়তি আলো, বাড়তি ক্যামেরা এবং যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ। সে সবের ঘাটতি রয়েছে বলে তাঁরা মেনে নিয়েছেন। চন্দননগর কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মোড়ে দামি ক্যামেরা রয়েছে। তাতে ছবি ‘জুম’ করে দেখা সম্ভব। রাতেও গাড়ির নম্বরপ্লেট স্পষ্ট বোঝা যায়। অন্যগুলিতে তা হয় না।’’ গ্রামীণ পুলিশের এক কর্তা মনে করেন, ‘‘কোনও ঘটনার কিনারার ক্ষেত্রে সিসিটিভি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র দিতেই পারে। রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা কোনও সংস্থাকে দেওয়া গেলে ভাল হয়। এই কাজ ঠিক করে করা গেলে প্রযুক্তির সুফল পুরোপুরি মিলবে।’’
শ্রীরামপুর পুরসভার তরফে ১৪২টি সিসিক্যামেরা লাগানো হয়েছে। থানা থেকে সেগুনি ‘মনিটরিং’ করা হয়। সিসিটিভি-র ফুটেজ দেখে গোটা চারেক ঘটনার কিনারা করা গিয়েছে বলে পুলিশের দাবি। রিষড়া পুরসভার তরফে দু’শোর বেশি সিসিক্যামেরা বসানো হয়েছে শহরে।
পুলিশের দাবি, বছরখানেক আগে শ্রীরামপুরে একটি খুনের ঘটনায় মোটরবাইক নিয়ে আততায়ীদের পালানোর ছবি সিসিক্যামেরা ধরা পড়ে। তাতে তাদের চিহ্নিত করা সহজ হয়। রিষড়া ফাঁড়ির কাছে সিসিটিভি-র ছবি দেখে এক ছিনতাইবাজ ধরা পড়ে। কয়েক মাস আগে বাঁশবেড়িয়ায় সিসিটিভি-র ফুটেজ দেখে একটি দুষ্কর্মের কিনারা হয়।
কিন্তু অপরাধের সংখ্যা যত, সিসিটিভি-র ফুটেজ দেখে তত কিনারা কি হচ্ছে?— প্রশ্নটা রয়েই যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy