রক্তচক্ষু: তখনও চলছে পথ অবরোধ ।নিজস্ব চিত্র
সকাল থেকেই হাসপাতালের আল্ট্রাসোনোগ্রাফি ঘরের বাইরে ভিড় জমেছিল। কয়েক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর পরে রোগীরা জানতে পারেন, চিকিৎসক আসবেন না। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে রাস্তা অবরোধ শুরু করলেন রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা।
ঘটনা এখানেই শেষ নয়, অবরোধকারীদের তুলতে ঘটনাস্থলে হাজির এক তৃণমূল নেতা। পুলিশের সামনেই রীতিমতো ধমকে-চমকে অবরোধ তুলে দিলেন তিনি।
সোমবার এমন ঘটনারই সাক্ষী রইল শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতাল। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেনে নিয়েছেন, রোগীদের ক্ষোভ সঙ্গত।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকাল ৮টার পর থেকেই আল্ট্রাসোনোগ্রাফি ঘরের সামনে রোগীদের ভিড় জমে। বেশিরভাগই প্রসূতি। অভিযোগ, দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরেও ডাক না আসায় রোগীরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, চিকিৎসক আসেননি। তিনি আদৌ আসবেন কি না, তার কোনও জবাব হাসপাতালের কর্মীদের কাছ থেকে পাননি রোগী ও তাঁদের আত্মীয়েরা। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ জানা যায়, চিকিৎসক আসবেন না। এর মধ্যে গর্ভবতী এক মহিলা মাথা ঘুরে পড়ে যান বলে রোগীর আত্মীয়দের দাবি।
এরপরই ক্ষিপ্ত রোগী এবং তাঁদের বাড়ির লোকজন হাসপাতাল লাগোয়া টিসি গোস্বামী স্ট্রিট অবরোধ করেন। রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন রুটের বাস চলে। হাসপাতাল ছাড়াও আদালত-সহ বিভিন্ন সরকারি দফতরে মানুষ যাতায়াত করেন। অবরোধের ফলে যানজট হয়ে যায়। শ্রীরামপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। তারা অবরোধ তোলার অনুরোধ করলে অবরোধকারীরা জানিয়ে দেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসনের তরফে কোনও আধিকারিককে এসে বিহিত করার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
রক্তচক্ষু: অবরোধকারীদের ধমক দিচ্ছেন তৃণমূল নেতা রাজেশ শা। নিজস্ব চিত্র
শ্রীরামপুরের এসপি সরণির বাসিন্দা অপর্ণা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমার গুরুতর অসুখ রয়েছে। গত ২ মে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করার দিন ছিল। ওই দিন ডাক্তার না আসায় ফিরে যাই। এ দিন এসে জানতে পারলাম, ডাক্তারবাবু ছুটিতে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘ঘরের সামনে অপেক্ষার জায়গায় একটা মাত্র পাখা, বেঞ্চ নেই। পরিষেবা যখন মিলবেই না, তখন এত ঢক্কানিনাদ কেন!’’
এ দিন হাসপাতালে সুপারিন্টেন্ডেন্ট বা অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিন্টেন্ডেন্ট কেউ ছিলেন না। দায়িত্বে ছিলেন দেবপ্রসাদ ঘোষ নামে এক চিকিৎসক। অবরোধকারীদের তরফে দু’জন তাঁর সঙ্গে দেখা করে ক্ষোভ উগরে দেন। দেবপ্রসাদবাবু তাঁদের আশ্বাস দেন, আজ মঙ্গলবার ওই রোগীদের আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করানো হবে। পরে তিনি বলেন, ‘‘চিকিৎসক না আসায় রোগীদের মধ্যে ক্ষোভ খুব স্বাভাবিক।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘চিকিৎসকের অভাব রয়েছে, এটা ঠিক। পরিকাঠামো নিয়ে আরও কিছু অভিযোগ মিলেছে। যথাস্থানে এ ব্যাপারে জানাব।’’
তবে এ দিনের অবরোধ তুলতে পুলিশ-প্রশাসনকে খুব একটা কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। শ্রীরামপুর পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেখা শা’য়ের স্বামী, তৃণমূল নেতা রাজেশ শা ওরফে কুকুয়া পুলিশ-প্রশাসনের হয়ে পরিত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন! বেলা পৌনে ১টা নাগাদ ঘটনাস্থলে এসে তিনি অবরোধকারীদের ধমকাতে থাকেন। রোদচশমা পরে, আঙুল উঁচিয়ে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আপনারা সিপিএমের দালাল। মিথ্যা কথা বলে অবরোধ করছেন।’’ এক ব্যক্তিকে ধাক্কাধাক্কিও করা হয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তৃণমূল নেতা এবং তাঁর গুটিকতক সাঙ্গপাঙ্গ জোর করে অবরোধ তুলে দেন।
দলের নেতার হম্বিতম্বি নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব বিব্রত। দলের জেলা সভাপতি তথা কৃষি বিপণন মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘ওই নেতা কেন ওখানে গেলেন, খোঁজ নিয়ে দেখছি। দলের তরফে যা করার, করা হবে।’’ আর সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং রাজ্যের পরিস্থিতি কেমন, এই ঘটনাই তার প্রমাণ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy