—প্রতীকী ছবি
এ-ও এক ধরনের তোলাবাজি!
ঘটনা ১। কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি আত্মীয়কে দেখতে যাবেন বলে মেচেদা থেকে হাওড়াগামী লোকালে উঠেছিলেন হরেকৃষ্ণ দাস। তাড়াহুড়োয় ভেন্ডার কামরায় উঠে পড়েন। তাঁকে গ্রেফতার করে পাঠানো হয় হাওড়ার রেলওয়ে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে। সেখানে জরিমানা বাবদ ১৩০০ টাকা চাওয়া হয়। কিন্তু হরেকৃষ্ণবাবুর কাছে ওষুধ কেনার জন্য তখন এক হাজার টাকা ছিল। অভিযোগ, জোর করে পুরো টাকাটাই নিয়ে নেওয়া হয়। কেড়ে নেওয়া হয় তাঁর ঘড়ি ও মোবাইলও। বলা হয়, বাকি টাকা জমা দিলে তবেই ঘড়ি মোবাইল মিলবে।
ঘটনা ২। দুই বন্ধুর সঙ্গে মেদিনীপুর লোকাল থেকে সাঁতরাগাছিতে নেমেছিলেন অমল রায়। নামার পরেই সাদা পোশাকের দুই পুলিশকর্মী রেললাইন পেরোনোর মিথ্যা মামলা দিয়ে তিন জনকেই হাওড়ার কোর্ট লক-আপে চালান করে দিয়েছিলেন। সেখানে আইনজীবীর লোক পরিচয় দিয়ে এক যুবক তাঁদের কাছ থেকে মোট ৩৬০০ টাকা দাবি করেন। জানিয়ে দেন, সেই টাকা না দিলে জামিন হবে না। শেষে তিন জনের কাছে থাকা মোট ১৮০০ টাকা, এক জনের সোনার আংটি ও তিনটে মোবাইল দিয়ে দিতে হয় ওই যুবককে।
শুধু এই দু’টি ঘটনা নয়, এই ধরনের ভূরি ভূরি অভিযোগ মিলেছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সাঁতরাগাছি, পূর্ব রেলের হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশন থেকে। তবে সব থেকে বেশি অভিযোগ এসেছে সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে। অভিযোগ, আরপিএফ ও জিআরপি-র একাংশের সঙ্গে বিভিন্ন আদালত চত্বরে থাকা এক শ্রেণির দালালকে নিয়ে গড়ে ওঠা চক্রই এর সঙ্গে যুক্ত। আরপিএফ-এর তরফে অবশ্য এই অভিযোগ মেনে নেওয়া হয়েছে।
আরপিএফ-এর আইজি এস কে সিংহ বলেন, ‘‘এই অভিযোগ আগেও উঠেছিল। সেই কারণে কয়েক জন ইনস্পেক্টরকে সরিয়েও দেওয়া হয়েছিল। এ বারও তদন্ত করে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ পূর্ব রেলের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘রেলের আইন সম্পর্কে যাত্রীদের অজ্ঞতার জন্যই এমন ঘটনা ঘটছে। রেলের আইনে কোথাও ১৩০০ টাকা জরিমানা দেওয়ার কথা লেখা নেই।’’
রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘ইন্ডিয়ান রেলওয়ে অ্যাক্ট’ অনুযায়ী কোনও ট্রেনের ভেন্ডার, লাগেজ ভ্যান, মহিলা কামরা বা প্রতিবন্ধীদের কামরায় ভুল করে উঠলে বা বেআইনি ভাবে লাইন পারাপার করলে যাত্রীদের জরিমানা করা হয়। যেমন, ভেন্ডার কামরা, লাগেজ ভ্যান বা প্রতিবন্ধী কামরায় উঠে পড়লে সর্বাধিক ২২৫ টাকা জরিমানা হয়। অনাদায়ে এক মাসের জেল হতে পারে। আর বেআইনি ভাবে রেললাইন পারাপার করলে বা কোনও সংরক্ষিত জায়গায় ঢুকে পড়লে ৫০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। রেল সূত্রে খবর, এই জরিমানার অর্থ দিলে আদালত থেকে একটা রসিদ দেওয়া হয়।
যদিও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জরিমানার সঠিক অঙ্ক থেকে পাঁচ-দশ গুণ অর্থ দিলেও প্রথমে কোনও রসিদ পাওয়া যায় না। যেমন হরেকৃষ্ণ দাসের অভিযোগ, ‘‘আমি হাজার টাকা জমা দেওয়ার পরে আমাকে কোনও রসিদ দেওয়া হয়নি। পরে আরও ৩০০ টাকা দিয়ে মোবাইল ফেরত নিতে গেলে মাত্র ৩০০ টাকার রসিদ দেওয়া হয়।’’
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সিনিয়র জনসংযোগ অফিসার পল্লব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই অভিযোগের বিষয়ে আমরা খোঁজ নেব। তবে, বিষয়টি যে হেতু আরপিএফ দেখে, ওঁদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy