হুগলিতে গত পুর-নির্বাচনে একটি মাত্র পুরসভা জিতেছিল বিরোধীরা। কিন্তু মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় আগে সেই আরামবাগ পুরসভাও শাসকদলের হাতে চলে যায়।
আজ, শনিবার জেলার ১৩টি পুরসভায় ভোট। এ বারও কী শাসকদল সব পুরসভায় তাদের ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে, না কি কোথাও তাদের হটিয়ে দেবে বিরোধীরা? সেই প্রশ্নের উত্তর দিতেই আজ, সকাল থেকে ভোটের লাইনে দাঁড়াবেন জেলার প্রায় ১১ লক্ষ ৩৭ হাজার ০৮৬ জন ভোটার।
কিন্তু ভোট আদৌ কতটা অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ ভাবে হবে, তা নিয়ে চিন্তিত বিরোধীরা। কেননা, হুগলির বিভিন্ন এলাকা দিয়ে তৃণমূল বহিরাগতদের ঢোকাচ্ছে, এই অভিযোগে তারা এককাট্টা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী যেমন বলছেন, ‘‘ডোমজুড়, বালি এবং জগদীশপুর থেকে তৃণমূলের উৎসাহী যুবকেরা হুগলিতে এসেছে। একই ভাবে সিঙ্গুর, হরিপাল থেকেও অনেকে এসেছে। তৃণমূলের বাইক-বাহিনীও এলাকায় দাপাচ্ছে। পুলিশ, প্রশাসনকে জানিয়েছি। মানুষ তাঁদের ভোট ঠিকমতো যাতে দিতে পারেন, সে দায়িত্ব প্রশাসনের।’’
একই সুরে অভিযোগ বিজেপি-র জেলা সহ-সভাপতি স্বপন পালেরও। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের আশঙ্কা ছিল বাইরে থেকে ছেলেরা ঢুকবে। সেই আশঙ্কা সত্যি করে বাঁশবেড়িয়া-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাইরে থেকে বহু লোক ঢোকার খবর পেয়েছি। জেলায় অশান্তি হলে দায় প্রশাসনের।’’
লোক ঢোকার কথা জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা গোটা জেলার সীমানাগুলিতে নাকাবন্দি করে দিয়েছি আগে থেকেই। গঙ্গার প্রতিটি ঘাটে পুলিশ প্রহরা থাকছে যাতে অন্য জেলা থেকে কোনও লোক ঢুকতে না পারে।’’
এক নজরে হুগলি পুরভোট।
সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন।
পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী অবশ্য বলেন, ‘‘জেলার মোট পাঁচ হাজার পুলিশকর্মীকে মোতায়েন করা হয়েছে। এক কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে গিয়েছে। দু’কোম্পানি বিএসএফও আসার কথা। প্রতিটি বুথে সশস্ত্র পুলিশ থাকবে। কোনও অশান্তি ছাড়াই ভোট করাতে আমরা প্রস্তুত।’’
বিরোধীদের আশঙ্কাকে কটাক্ষ করে জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘মানুষ বাম আমলের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা সহজে ভুলবেন না। সেই সময়ের সন্ত্রাসের স্মৃতি আজও মানুষের মনে দগদগে। আমরা কেন অশান্তিতে জড়াব? রাজ্যে সদ্য হওয়া দু’টি উপনির্বাচনে আমাদের বিপুল জয় হয়েছে। মানুষ ফের আমাদের আশীর্বাদ করবেন। সন্ত্রাসের অযথা অভিযোগ তুলে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না।’’
বাম আমলে আরামবাগ এবং তারকেশ্বরে ভোটে লাগাতার সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠত। বাঁশবেড়িয়াও তার ব্যতিক্রম নয়। রাজ্যে ক্ষমতা বদল হলেও এলাকাগুলিতে সন্ত্রাসের চেহারা এতটুকু বদলায়নি। সেই আমলে তখনকার বিরোধী দল তৃণমূল অভিযোগ তুলত, পুর নির্বাচনে প্রার্থী দিতে দেওয়া হচ্ছে না। একই অভিযোগ উঠছে এই আমলেও। গত পুর নির্বাচনে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয়, সিপিএমে কার্যালয় থেকে পুলিশের গাড়িতে বোমা ছোড়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারকেশ্বরে সিপিএমের জোনাল অফিসে পুলিশকে গুলি চালাতে হয়।
এ বার ভোটের দিন ঘোষণার পরই জেলায় পুর-এলাকাগুলিতে শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলতে থাকেন বিরোধীরা। তার মধ্যে আরামবাগ, তারকেশ্বর এবং বাঁশবেড়িয়ায় অভিযোগের মাত্রা ছিল সব থেকে বেশি। এ ছাড়াও জেলার অন্যত্রও কম-বেশি সন্ত্রাসের অভিযোগ ওঠে। এ বার তারকেশ্বর এবং আরামবাগে বিরোধী প্রার্থীদের অনেকেই মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি। আবার অনেকে মনোনয়ন জমা দিয়েও সন্ত্রাসের আশঙ্কায় তা তুলে নিতে বাধ্য হন। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের আগেই আরামবাগ এবং তারকেশ্বরে শাসকদল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যায়। আজ, শনিবার ওই দুই পুরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডে নিয়মরক্ষার ভোট হবে।
কিন্তু ভোটের সময় রাজ্য প্রশাসন পুলিশকে ঠিক কতটা নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে দেবে, সে প্রশ্নও রয়েছে বিরোধীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy