অবাধ: শহরের অনেক রেস্তরাঁতেই নজরদারি নেই, অভিযোগ স্থানীয়দের। নিজস্ব চিত্র
বজবজের ভাগাড় কাণ্ডের পর মাত্র একদিন শহরের হোটেল-রেস্তরাঁগুলিতে অভিযান চালিয়েই দায় সারলেন উলুবেড়িয়া পুরসভার কর্তারা। গত সপ্তাহের শেষে উলুবেড়িয়া স্টেশন রোডের কুড়িটি হোটেলে হানা দেওয়া হয়। বাজেয়াপ্ত করা হয় বাসি মাংস-পচা ভাত। বিনা লাইসেন্সে চলা দুটি হোটেল বন্ধও করে দেওয়া হয়।
তারপর থেকে কেটে গিয়েছে চার দিন। পুরসভার পক্ষ থেকে আর কোনও উচ্চবাচ্য নেই এ বিষয়ে। ফলে শহরের অন্য এলাকা জুড়ে হোটেল ও রেস্তরাঁগুলি চলছে অবাধেই।
আর পুরসভার এই নির্লিপ্ত মনোভাবে বাসিন্দাদের অভিযোগ, ‘তাহলে একদিনের অভিযান কি শুধুই সাধারণ মানুষের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য? পুরসভার পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, আরও বড় অভিযান চালানোর জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তা ছাড়া শনি, রবিবার ছুটির দিন থাকায় অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি বলেও সাফাই দেন পুরকর্তারা।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম দিনের অভিযানেই বিস্তর বেনিয়ম ধরা পড়ে। পুরকর্তাদের সঙ্গে ছিলেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরের পাঠানো একজন স্বাস্থ্য আধিকারিক। তিনি ফ্রিজে রাখা মাংস পরীক্ষা করে জানিয়ে দেন, সেগুলো তিন-চার দিনের পুরনো। স্বাস্থ্য আধিকারিকের নির্দেশে পুরসভার কর্মীরা ফ্রিজে রাখা বাসি মাংস ফেলে দেন। স্বাস্থ্য অধিকর্তা মশলাও পরীক্ষা করেন। ওই হোটেলের কর্মীরা জানান, অনেক সময় আগে থেকে ভেজে রাখা মশলা দিয়ে রান্না করা হয়। স্বাস্থ্য অধিকর্তারা এমন মশলা ফেলে দেওয়ারও নির্দেশ দেন।
এমন বেনিয়মের পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিনই স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং পুরসভার কর্তারা প্রতিটি হোটেল এবং রেস্তরাঁ মালিককে কয়েকটি নিয়ম মেনে চলার নির্দেশ দেন। সেগুলি হল, কোন দোকান থেকে মাংস কিনে আনা হচ্ছে তার রসিদ রাখতে হবে। দিনের মাংস দিনেই ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে যতটুকু দরকার ততটা মাংস বাজার থেকে কিনতে হবে। বাড়তি মাংস ফ্রিজে জমিয়ে রাখা যাবে না। যদি রান্না করা মাংস বিক্রি না হয় তা নষ্ট করে ফেলতে হবে। ভেজে রাখা মশলা পরের দিন ব্যবহার করা যাবে না। তা ফেলে দিতে হবে। হোটেল ও রেস্তরাঁ মালিকদের পুরকর্তারা হুঁশিয়ারি দেন, নিয়মিত অভিযান চালিয়ে দেখা হবে তাঁরা নিয়মগুলি মানছেন কি না। যাঁরা এই নিয়ম মানবেন না তাঁদের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলেও তাঁরা সাফ জানিয়ে দেন।
কিন্তু পুরসভার যাবতীয় কর্মকাণ্ড একদিনের অভিযানের মধ্যে সীমাবব্ধ থেকে যাওয়ায় শহরের অন্যান্য হোটেল ও রেস্তরাঁ মালিকদের কাছে এই নিদান পৌঁছায়নি। ওটি রোড, চেঙ্গাইল, বাউড়িয়া প্রভৃতি এলাকায় গত কয়েক বছরে বহু হোটেল এবং রেস্তরাঁ চলছে। বড় হাঁড়ির গলায় লাল শালু বাঁধা বিরিয়ানির দোকানের দৃশ্য এইসব এলাকায় চোখে পড়ে হরবখত। কিন্তু এইসব দোকানে মাংসের মান পরীক্ষা করে দেখার জন্য পুরসভার উদ্যোগ দেখা যায়নি ভাগাড় কাণ্ডের পরেও।
পুরকর্তাদের অবশ্য দাবি, প্রথম দিনের অভিযানের সময়ে স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে যৌথভাবে পুরসভা যে সব নিয়মাবলি তৈরি করেছে সেগুলি ফ্লেক্সের মাধ্যমে প্রচার করা হবে। হ্যান্ডবিল ছাপতে দেওয়া হয়েছে। মাইকে প্রচারও চলবে।
পুরসভার উপ-পুরপ্রধান আব্বাসউদ্দিন খান বলেন, ‘‘মাত্র একদিনের অভিযানেই আমাদের কর্মকাণ্ড শেষ হয়েছে, এটা ভাবলে ভুল হবে। বরং একদিনের অভিযানে আমরা হোটেল এবং রেস্তরাঁগুলিতে যা বেনিয়মের সন্ধান পেয়েছি, তাতে চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার উপক্রম। আরও বড় অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তাতেই একটু সময় লাগছে, এই যা!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy