Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

মায়ের স্বপ্নপূরণে উচ্চশিক্ষা শেষ করতে চায় মৌমিতা

তাতে অবশ্য হার মানেননি হাওড়ার বাগনানের চাকুর গ্রামের ব্রাহ্মণপাড়ায় মৌমিতা চক্রবর্তী। দাদা সৌরভকে সঙ্গে নিয়ে জীবনের লড়াই চালাচ্ছেন তিনি। মাধ্যমিকের মতোই সফল হয়েছেন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায়।

লড়াই: —নিজস্ব চিত্র।

লড়াই: —নিজস্ব চিত্র।

নুরুল আবসার
বাগনান শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৭ ১৩:২৩
Share: Save:

ছিটেবেড়া দেওয়া কুঁড়েঘরে দাদা-বোনের সংসার। ছাদের টালি ভেঙে গিয়েছে। তাঁদের মা মারা গিয়েছেন দু’বছর আগে। বাবার মৃত্যু হয়েছে মাস কয়েক হল।

তাতে অবশ্য হার মানেননি হাওড়ার বাগনানের চাকুর গ্রামের ব্রাহ্মণপাড়ায় মৌমিতা চক্রবর্তী। দাদা সৌরভকে সঙ্গে নিয়ে জীবনের লড়াই চালাচ্ছেন তিনি। মাধ্যমিকের মতোই সফল হয়েছেন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায়।

মৌমিতা ও অলোক জানান, মা ও বাবা দু’জনেই ক্যান্সারে ভুগছিলেন। ২০১৫ সালে মা কৃষ্ণা চক্রবর্তী যখন মারা যান তার এক মাস পরে মৌমিতার মাধ্যমিক পরীক্ষা ছিল। মায়ের মৃত্যু মৌমিতার জীবনে অন্ধকার নিয়ে এলেও তিনি পরীক্ষায় বসেন এবং প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তার পর বাবাকে সামনে রেখেই নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল দু’জন। কিন্তু সেই স্বপ্নও ছারখার হয়ে যায় চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন মারা যান তাঁদের বাবা অলোক চক্রবর্তী। পারলৌকিক কাজ শেষ হয় ৮ মার্চ। উচ্চ মাধ্যমিক শুরু হয় ১৫ মার্চ। মাধ্যমিকের মতোই শোক চেপে উচ্চ মাধ্যমিকে বসেন মৌমিতা। এ বারেও ফল বেরোলে দেখা যায়, তিনি প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

অলোকবাবু ছিলেন পুরোহিত। কৃষ্ণাদেবী গৃহবধূ। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাঁদের সংসারে সাচ্ছন্দ্য না থাকলেও আনন্দ ছিল। কিন্তু দু’জনেই মারা যাওয়ার পরে দৈনিক খাবার জোগাড় করাটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে দাদা-বোনের কাছে। বাবার মতো সৌরভও বেছে নিয়েছেন পুরোহিতের পেশা। যজমানদের থেকে পাওয়া চাল, ডাল, ফলে কোনওরকমে দিন গুজরান হচ্ছে।

কিন্তু বোনের উচ্চশিক্ষার কী হবে? চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দু’টি বড় পরীক্ষায় ভাল ফল করা মৌমিতা কি কলেজে ভর্তি হতে পারবেন? সৌরভ ২০১৬ সালে বাগনান কলেজে ভর্তি হলেও সংসারের কারণে পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য হন। বোনের সঙ্গেও সেরকম কিছু হোক, চান না তিনি। সৌরভ বলছেন, ‘‘মা বলেছিলেন, দুই ভাই-বোনের একজনকে স্নাতক হতেই হবে। আমি পারিনি। তাই বোনকে স্নাতক হতেই হবে।’’

কী বলছে মৌমিতা? তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের অসময়ে ফেলে দিয়ে চলে যাওয়ার জন্য বাবা-মাকে দোষ দেব না। আমি বিশ্বাস করি পরীক্ষায় যেটুকু সাফল্য পেয়েছি সেটা তাঁদের আশীর্বাদ ছাড়া সম্ভব হত না।’’

(যোগাযোগের নম্বর: ৭৪৩২৯৬০১২০)

অন্য বিষয়গুলি:

Moumita Chakraborty HS higher Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE