তল্লাশি: তেলেনিপাড়া জেটি দুর্ঘটনার পর কেটে গিয়েছে তিনটে দিন। প্রতিদিনই মিলছে দেহ। শুক্রবার সকাল থেকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে চলছে দেহ উদ্ধারের কাজ। নিজস্ব চিত্র
দু’জনেরই পায়ের তলায় ছিল সর্ষে।
ছুটি পেলেই দুই বন্ধু ব্যাগ গুছিয়ে ছুট দিতেন কাছে-দূরে!
কয়েক মাস আগেই হরিদ্বার বেরিয়ে এসেছেন। গত রবিবার এসেছিলেন কলকাতা বেড়াতে। কিন্তু আর একসঙ্গে ফেরা হল না। ভেঙে গেল জুটি।
ভদ্রেশ্বরে জেটি দুর্ঘটনায় বন্ধু রামাজি সাউকে (৩৭) চিরতরে হারিয়ে ফেললেন রামনাথ যাদব। ফুলেফেঁপে ওঠা বন্ধুর দেহ শুক্রবার শনাক্ত করার পরে রামনাথের হাহাকার, ‘‘আর কার সঙ্গে আমি বেড়াতে যাব? একা হয়ে গেলাম! একাই ফিরতে হবে আমাকে।’’
দুই বন্ধুরই বাড়ি বিহারের ছাপরায়। দু’জনেই একটি চালকলের কর্মী। রামাজির আত্মীয়ের বাড়ি রয়েছে কলকাতায়। গত রবিবার সেখানে এসেই উঠেছিলেন দু’জনে। দু’দিন কলকাতার নানা জায়গা ঘুরে মঙ্গলবার তাঁরা চলে আসেন ভদ্রেশ্বরে। সেখানে রামনাথের আত্মীয়ের বাড়ি রয়েছে। রাতটা সেখানে বুধবার সকালে তাঁদের যাওয়ার কথা ছিল ব্যারাকপুরে। রামাজির আর এক আত্মীয়ের বাড়িতে। ভদ্রেশ্বরের তেলেনিপাড়া জেটিঘাট থেকে ভুটভুটি ধরে ও পারের শ্যামনগর হয়ে তাঁরা যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু শুরুতেই বিপত্তি। জোয়ারের ধাক্কায় বাঁশের জেটি ভেঙে অনেকের সঙ্গে জলে পড়ে যান রামাজি-রামনাথও। তার পরে?
রামনাথ জানান, তাঁরা দু’জনেই সাঁতার জানতেন না। হাবুডুবু খেতে খেতেই বাঁচার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। এক উদ্ধারকারীর সাহায্যে তিনি বেঁচে গেলেও বন্ধুর আর খোঁজ পাননি। সেই বন্ধুর খোঁজে দু’দিন বেশির ভাগ সময় তাঁর কেটেছে ওই ঘাটেই। শুক্রবার সকালে ঘাটে এসেই শুনতে পান, চন্দননগর থানায় কয়েক জনের মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে গিয়েই বন্ধুর মৃতদেহ শনাক্ত করেন রামনাথ। সঙ্গে সঙ্গে বিহারে বন্ধুর বাড়িতে খবর দেন।
রামনাথ বলেন, ‘‘কলকাতায় ঘুরতে আসাই কাল হল। ফিরে বাড়ির লোকেদের কী বলব, বুঝতে পারছি না। ওঁর বাড়ির লোকেরা এখানে আসছেন। এখানেই ওঁর দেহ সৎকার হবে।’’
দু’দিন অপেক্ষার পরে রামনাথ বন্ধুর দেহ পেলেও এখনও প্রশাসনের হিসেবেই নিখোঁজ রয়েছেন ৮ জন। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, মোট ২১টি পরিবার ওই দুর্ঘটনায় তাদের প্রিয়জন তলিয়ে যান বলে তাঁদের ছবি-সহ আবেদন করেছিল। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ১৩ জনের দেহ মিলেছে। বাকিদের সন্ধান না-মেলা পর্যন্ত তল্লাশি চলবে।
তেলেনিপাড়া-সহ জেলার সব ফেরিঘাটের হাল-হকিকত বুঝতে আজ, শনিবার জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল জেলার সব পুরসভার চেয়ারম্যানদের নিয়ে চুঁচুড়ায় বৈঠকে বসছেন। ওই বৈঠকেই তেলেনিপাড়া ফেরিঘাটের সংস্কার ঠিক কবে থেকে শুরু হবে তার চূড়ান্ত রূপরেখা স্থির হবে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার কথা আগেই ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই টাকা ইতিমধ্যেই এসে গিয়েছে এবং তা পেতে গেলে সরকারি বিধিবদ্ধ ফর্ম পূরণ করে পুরসভায় আবেদন করলেই হবে বলে জানিয়েছেন ভদ্রেশ্বরের পুরপ্রধান মনোজ উপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এলেই সব সাহায্য মিলবে। টাকা পেতে খুব বেশি হলে একদিন সময় লাগবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy