উলুবেড়িয়ার রাস্তায় সাজদা আহমেদের সমর্থনের ফ্লেক্স সরেনি। ছবি: সুব্রত জানা।
ভোটগ্রহণ শেষ। কিন্তু হাওড়া-হুগলি দুই জেলাতেই ফ্লেক্স, কাট আউট, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পতাকা এখনও নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। পরিবেশের পক্ষে এই সব সরঞ্জাম সহায়ক নয়। তাদের ভবিষ্যৎ কি, তা নিয়ে প্রশ্ন অনেক সাধারণ মানুষেরই। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অবশ্য আশ্বাস, দ্রুত সেগুলি সরানো হবে।
পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলির কাছে পরিবেশের গুরুত্ব বিশেষ নেই। ভোট মিটলে ফ্লেক্স-পতাকা খোলার দিকে তারা নজর দেয় না। উল্টে জয়ী দল উৎসব পালন বা অভিনন্দনের জন্য আরও ফ্লেক্স লাগায়। বহু ফ্লেক্স ছিঁড়ে পড়ে। জঞ্জালের বোঝা বাড়ে। ভোটের দিন বিভিন্ন দলের কর্মী বা ভোটারদের জন্য খাওয়াদাওয়ার আয়োজন হয়েছিল। বহু ক্ষেত্রেই খাবার দেওয়া হয়েছে থার্মোকলের থালা-বাটি, প্লাস্টিকের ব্যাগে। ফলে বেড়েছে দূষণ। উত্তরপাড়া, শ্রীরামপুর, চণ্ডীতলা, ডানকুনি, চন্দননগর, চুঁচুড়া, বাঁশবেড়িয়া, পান্ডুয়া, বলাগড় আর হাওড়া গ্রামীণের বিভিন্ন এলাকায় ছবিটা একই।
কী বলছে রাজনৈতিক দলগুলি?
শ্রীরামপুর কেন্দ্রে তৃণমূলের ভোট-পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ‘‘চণ্ডীতলা বাজারে আজই ফ্লেক্স খুলেছি। সর্বত্র কর্মীদের বলা হয়েছে, দ্রুত এগুলি খুলে ফেলতে।’’ তিনি মেনে নেন, ‘‘এটা সত্যি যে, ভোটের সময় রাজনৈতিক কর্মসূচির চাপে পরিবেশের দিকটা উপেক্ষিত থেকে যায়।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘সামনে বর্ষাকাল। ফ্লেক্স, পতাকা পড়ে থাকলে নিকাশির সমস্যা হবে। অন্য দলের কাছেও অনুরোধ তারা যেন দ্রুত এগুলি সরিয়ে নেন।’’
জেলা সিপিএম সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘প্লাস্টিকের প্রচার সামগ্রী বা ফ্লেক্স খুলে নেওয়ার জন্য কর্মীদের বলা হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে তা করা হবে।’’
আরামবাগ মহকুমা জুড়ে সবচেয়ে ফ্লেক্স, ফেস্টুন, দলীয় পাতাকা চোখে পড়ছে তৃণমূলের। বিজেপি এবং সিপিএমের ফ্লেক্সও রয়েছে বিক্ষিপ্তভাবে। কংগ্রেসের ফ্লেক্স হাতে গোনা। তৃণমূল আরামবাগ ব্লক সভাপতি স্বপন নন্দী বলেন, “আমরা ওইসব ফ্লেক্স, পতাকা খুলতে শুরু করেছি।” আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী অপরূপা পোদ্দার জানান, কর্মীদের বলা হয়েছে পতাকা খুলে গুছিয়ে রাখতে যাতে আগামী দিনের কর্মসূচিতে তা ব্যবহার করা যায়। ফ্লেক্সও খুলতে বলা হয়েছে। তবে আরামবাগের গৌরহাটি মোড়, হাসপাতাল মোড়, বাসস্ট্যান্ড, পাতুল, তারকেশ্বর, খানাকুলের কিছু জায়গায় উঁচু জায়গায় লাগানো ফ্লেক্স নামানো নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
বিজেপির হুগলি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুবীর নাগ বলেন, ‘‘সবে তো মহারণ গেল। কর্মীরা ক্লান্ত। বিষয়টি মাথায় আছে। পরিবেশ বা দৃশ্যদূষণ করে এমন নির্বাচনী সরঞ্জাম আগামী সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে খুলে দলীয় কার্যালয়ে রেখে দেওয়া হবে।’’
বিজেপি রাজ্য কমিটির সদস্য আরামবাগের নেতা অসিত কুণ্ডুর দাবি, “আমাদেরগুলো তৃণমূল অধিকাংশ খুলে দিয়েছে। বাকিগুলো ওরা না খুললে আমারা ২৩ তারিখের মধ্যেই খুলে দেব।” সিপিএম আরামবাগ এরিয়া কমিটির সম্পাদক পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের প্রায় সবই খোলা হয়ে গিয়েছে। বাকি কোথাও থেকে গেলে দলের ছেলেদের সন্ধান করে খুলে ফেলতে বলা হয়েছে।” কংগ্রেস নেতা প্রভাত ভট্টাচার্য জানান, “আমাদের ফ্লেক্স-ফেস্টুন ইত্যাদি প্রচার সামগ্রী সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
মহকুমা নির্বাচন আধিকারিক অনন্য জানা বলেন, “আগামী ২৩ মে পর্যন্ত নির্বাচন বিধি রয়েছে। তার মধ্যে তাঁরা নিশ্চয় খুলে নেবেন। তারপরেও ওই প্রচার সামগ্রী থেকে গেলে প্রশাসন অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।”
বাগনান, উলুবেড়িয়া, আমতা, উদয়নারায়ণপুর, শ্যামপুর এলাকা ভরে রয়েছে রাজনৈতিক ফ্লেক্সে। সরকারি জমি ছাড়া বাকিগুলির ক্ষেত্রে ওই ফ্লেক্স খোলা নিয়ে কোনও নির্দেশিকা আসেনি বলে জেলা নির্বাচন দফতর সূত্রে খবর। রাজনৈতিক দলগুলি অবশ্য দাবি করেছে, তারা নিজেরাই এগুলি খুলে নেবে।
হাওড়া গ্রামীণ জেলা সভাপতি পুলক রায় বলেন, ‘‘সদ্য নির্বাচন শেষ হয়েছে। শীঘ্রই আমাদের দলের কর্মীরা ফ্লেক্সগুলি খুলতে শুরু করবে।’’ বিজেপির গ্রামীণ জেলা সভাপতি অনুপম মল্লিক বলেন, ‘‘আমি নিজে ইতিমধ্যে বেশ কিছু ফ্লেক্স খুলে দিয়েছি। বাকি এলাকায় ফ্লেক্সগুলি খুলে দেওয়ার জন্য মণ্ডল সভাপতিদের বলে দেওয়া হয়েছে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার এবং উলুবেড়িয়া লোকসভাকেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী সোমা রানিশ্রী রায়ও জানান, ফ্লেক্সগুলি খুলে নেওয়ার জন্য দলের কর্মীদের বলা হয়েছে।
নেতাদের আশ্বাসে কতটা কাজ হবে, সে প্রশ্ন অবশ্য থাকছেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy