দোষী। রায় ঘোষণার পর চুঁচুড়া আদালতে। নিজস্ব চিত্র
জমি কিনতে তিনি দালালদের সাহায্য নেননি। এই ‘অপরাধে’ বছর সাতেক আগে কুন্তীঘাটের এক প্রৌঢ়কে বাড়ির সামনেই কুপিয়ে খুন করা হয়েছিল। সেই খুনের দায়েক তিন জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল। শুক্রবার চুঁচুড়া আদালতের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য কুন্তীঘাটের বাসিন্দা স্বপন সিকদার, অভিজিৎ দাস ওরফে মনা এবং শম্ভু দাস নামে ওই তিন জনকে সাজা শোনান।
পুলিশ জানায়, ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে। নিহত কার্তিকচন্দ্র প্রামানিক (৫২) কুন্তীঘাটের রঘুনাথপুরে থাকতেন। তিনি বাড়ির কাছেই একটি ৩০ শতক জমি কেনেন। স্বপন, অভিজিৎ, শম্ভুরা জমির দালালি করত। কার্তিকবাবু জমি কিনলে তাদের মধ্যস্থতায় কিনতে হবে, এমন ফতোয়া দিয়েছিল তারা। কার্তিকবাবু শোনেননি। এতেই শম্ভুরা খেপে যায়। ‘শাস্তি’ হিসেবে ওই জমি কেনার জন্য কার্তিকবাবুর কাছে মোটা টাকা দাবি করে তারা। কার্তিকবাবু সেই টাকা দেননি। ওই বছরের ১৬ এপ্রিল রাত ১১টা নাগাদ স্বপন, অভিজিৎ-সহ ৭-৮ জন দুষ্কৃতী দরজা ভেঙে কার্তিকবাবুর বাড়িতে ঢোকে। কার্তিকবাবু তখন ছিলেন না। দুষ্কৃতীরা তাঁর স্ত্রী পূর্ণিমাদেবী, ছেলে তাপস এবং পূত্রবধূ শ্যামলীকে মারধর করে। পূর্ণিমাদেবী চন্দ্রহাটি ফাঁড়িতে অভিযোগ জানাতে যান।
এর কিছুক্ষণ পরেই বাড়ি ফেরার পথে কার্তিকবাবু আক্রান্ত হন। স্বপন, অভিজিৎ এবং শম্ভু আরও কয়েকজনকে নিয়ে তাঁর বাড়ির সামনে লুকিয়েছিল। কার্তিকবাবু আসতেই তারা ভোজালি দিয়ে তাঁর বুকে, পেটে এবং গলায় এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। রক্তাক্ত অবস্থায় কার্তিকবাবু লুটিয়ে পড়েন। তাঁর চিৎকারে প্রতিবেশীরা বেরিয়ে এলে দুষ্কৃতীরা পালায়। কার্তিকবাবুকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। ওই বছরের ১৮ এপ্রিল তিনি মারা যান।
কার্তিকবাবুর পুত্রবধূ শ্যামলী জানলা দিয়ে গোটা ঘটনাটি দেখেছিলেন। কিন্তু আতঙ্কে কোনও শব্দ করতে পারেননি। পূর্ণিমাদেবীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ স্বপন, অভিজিৎ এবং শম্ভুকে গ্রেফতার হয়। পরে তারা জামিন পায়। চুঁচুড়া আদালতে মামলা চলতে থাকে।
মামলার সরকারি আইনজীবী সুব্রত গুছাইত জানান, বৃহস্পতিবার বিচারক ওই তিন জনকে দোষী সাব্যস্ত করেন। খুনের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন নিহতের পুত্রবধূ। তিনি-সহ মোট ১৬ জন সাক্ষ্য দেন। এ দিন সাজe শুনে শ্যামলী বলেন, ‘‘ওরা আমাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত করে তুলেছিল। ওদের সাজা হওয়ায় আমরা খুশি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy