Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

ছেলের সাক্ষ্যে সাজা বাবার

ঘুম ভাঙতেই সে দেখেছিল, বাবা বঁটি দিয়ে মাকে কোপাচ্ছে। আদালতে নাবালক ছেলের দেওয়া এই সাক্ষ্যে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল বাবার। হুগলির তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক মানস বসু মঙ্গলবার পূর্বস্থলীর ছাতনার বাসিন্দা সুদেব পণ্ডিতকে এই সাজা শোনান। খুনের ঘটনাটি ঘটেছিল ৬ বছর আগে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া ও শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৬ ০১:১৮
Share: Save:

ঘুম ভাঙতেই সে দেখেছিল, বাবা বঁটি দিয়ে মাকে কোপাচ্ছে। আদালতে নাবালক ছেলের দেওয়া এই সাক্ষ্যে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল বাবার। হুগলির তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক মানস বসু মঙ্গলবার পূর্বস্থলীর ছাতনার বাসিন্দা সুদেব পণ্ডিতকে এই সাজা শোনান।

খুনের ঘটনাটি ঘটেছিল ৬ বছর আগে। পুলিশ জানায়, স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে স্ত্রী প্রতিমাদেবী ২০০৯ সা‌লে হুগলির গুপ্তিপাড়া স্টেশন রোডে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। দম্পতির ছোট ছেলে বছর বারোর সোমনাথ মায়ের সঙ্গে থাকত। ঘটনার মাস খানেক আগে সুদেব স্ত্রী-র ভাড়া বাড়িতে এসে থাকতে শুরু করে। মাঝেমধ্যেই তাঁদের মধ্যে বচসা হত। সুদেবের সঙ্গে অন্য এক মহিলার সম্পর্ক ছিল বলে প্রতিমাদেবী পড়শিদের কাছে আক্ষেপ করতেন। তা ছাড়া, সুদেব তেমন কিছু রোজগার করত না। মদ খাওয়ার টাকা আদায়ের জন্য সে স্ত্রীর উপর অত্যাচার করত বলেও অভিযোগ উঠেছিল। ঘটনার দিন অর্থাৎ ২০১০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা নাগাদ ছোট ছেলে সোমনাথকে নিয়ে ওই দম্পতি খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়ে। রাত দেড়টা নাগাদ কোনও কিছুর আওয়াজ পেয়ে সোমনাথের ঘুম ভেঙে যায়। দেখে, বাবা একটি বঁটি দিয়ে মায়ের গলায় কোপ মারছে। ঘর রক্তে ভেসে যেতে থাকে। এর পরেই সুদেব ঘর থেকে বেরিয়ে চলে যায়। সোমনাথ বাবাকে আটকানোর চেষ্টা করেও পারেনি।

এর পরে সোমনাথের চিৎকারে বাড়িওয়ালা রামাপদ ঘোষ এবং তাঁর স্ত্রী ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। ততক্ষণে অবশ্য প্রতিমাদেবী মারা গিয়েছেন। পুলিশ এসে দেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে পাঠায়। রামাপদবাবু পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। পরের দিনই সুদেবকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জেরা করে খুনে ব্যবহৃত বঁটিও উদ্ধার করেন মামলার তদন্তকারী অফিসার রজক দাস। পরে সুদেব জামিন পেয়ে যায়। চুঁচুড়া আদালতে মামলার শুনানি চলে। মামলার সরকারি আইনজীবী চণ্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মোট ১১ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তবে প্রধান সাক্ষী ছিল দম্পতির নাবালক ছেলে। ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সমস্ত ঘটনা আদালতকে জানায় সে।

সূত্রের খবর, মাস খানেক আগে সুদেব বেপাত্তা হয়ে যায়। আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। সপ্তাহ খানেক আগে পুলিশ তাকে ধরে। সোমবার স্ত্রীর উপর নির্যাতন ও তাঁকে খুনের দায়ে সুদেবকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক মানস বসু। মঙ্গলবার সাজা ঘোষণা হয়। স্ত্রীকে খুনের (৩০২) দায়ে সুদেবকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও জরিমান অনাদায়ে ২ বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন বিচারক। বধূ নির্যাতনের (৪৯৮এ) দায়ে ৩ বছর কারাবাস ও ২ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক মাস কারাদণ্ড হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Arrest Witness
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE