Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

ডেঙ্গি থেকে ভোট, মণ্ডপে উঠে এল সবই

সিংহের পিঠে চড়ে দুর্গা স্বয়ং চললেন কোথায়! ভ্রু কুঁচকে দর্শক দেখবেন, দুর্গা যাচ্ছেন পাড়ার স্কুলে ভোটকেন্দ্রে। পিছু পিছু গোটা পরিবার। নিজের অধিকার প্রয়োগে পিছিয়ে নেই অসুরও।

দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাতে হাজির জিরাফ। — নিজস্ব চিত্র

দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাতে হাজির জিরাফ। — নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৬ ০১:০৮
Share: Save:

সিংহের পিঠে চড়ে দুর্গা স্বয়ং চললেন কোথায়! ভ্রু কুঁচকে দর্শক দেখবেন, দুর্গা যাচ্ছেন পাড়ার স্কুলে ভোটকেন্দ্রে। পিছু পিছু গোটা পরিবার। নিজের অধিকার প্রয়োগে পিছিয়ে নেই অসুরও। তিনিও সামিল ভোটদাতার ভিড়ে। দেবদেবী মর্তে এসে এ ভাবেই সচেতনার বার্তা দিচ্ছেন শ্রীরামপুরের রাইল্যান্ড সার্কুলার রোডের সর্বজনীন দুর্গাপুজোয়। শুধু ওই পুজোতেই নয়, পুজো-ভাবনায় সমাজ সচেতনতার বার্তা নিয়ে হাজির আরও বেশ কিছু মণ্ডপ।

শ্রীরামপুরের ওই পুজো মণ্ডপটিতে পুরোপুরি ভোটের দিনের আবহ। দেবীদুর্গা এখানে দশভূজা নন। তাঁর হাত দু’টি। হাতে অস্ত্রশস্ত্রের পরিবর্তে আছে ভোটার কার্ড।

শুধু দেবদেবীরাই নন, ভোটদানের ব্যবস্থা থাকছে দর্শন‌ার্থীদের জন্যও। কিন্তু তাঁরা সকলে মিলে ভোট দেবেন কাকে?

ভোটে দাঁড়াচ্ছেন মণ্ডপশিল্পী, প্রতিমাশিল্পী, আলোকশিল্পী। বিভিন্ন চিহ্ন রয়েছে তাঁদের। যিনি থিম-মেকার তিনি নির্দল প্রার্থী। দর্শককুল ভোট দেবেন তাঁদেরই। দর্শকের বিচারে যিনি সেরা হবেন, পুজো কমিটির তরফে তাঁকে পুরস্কৃত করা হবে। উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, এক দিকে পুজোর মাধ্যমে ভোটাধিকারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হবে। মানুষকে সচেতন করার প্রয়াস চলবে। অন্য দিকে, শিল্পীদের সম্মানও জানানো হবে। অনেক সময়ে শিল্পীরা তাঁদের শিল্পকর্মের উপযুক্ত সম্মান পান না। তাঁদের শিল্প নিয়ে চর্চা হয়, কিন্তু শিল্পী আড়ালেই থেকে যান। সেই কারণে এই বছর শিল্পীকে সম্মান জানাতে এমন পন্থা বেছে নেওয়া হয়েছে।

ডানকুনির বাঘাযতীন স্পোর্টিং ক্লাব আবার পরিবেশ সচেতনার কথা তুলে ধরেছে। তাদের বক্তব্য, নগরায়ণের ফলে প্রতি দিনই বদলে যাচ্ছে আশপাশের পরিবেশ। গাছগাছালি ধ্বংস করে গজিয়ে উঠছে কংক্রিটের জঙ্গল। সঙ্কটে পাখপাখালি। শহুরে-গেরস্থ বাড়ির ছাদে এখন আর ভিড় করে না চড়াইয়ের দল। রান্নাঘরের চালে শালিখের ঝগড়া চোখে পড়ে না। এই পুজোয় দেখা যাবে পুরোদস্তুর জীবজন্তু আর পাখি-পতঙ্গের অবাধ বিচরণ। পিঁপড়ে, ব্যাঙ, পায়রা, প্যাঁচা, হাস, বাঁদর, হরিণ, বক কী নেই! প্রবেশপথে স্বাগত জানাবে দু’টি জিরাফ। সবই অবশ্য কৃত্রিম। মণ্ডপের চটের দেওয়ালে আঁকা ছবিতে দেখা যাবে মানুষের বিবর্তন। উদ্যোক্তাদের কথায়, গাছ কাটা যে সমাজের পক্ষে কতটা ক্ষতিকর, তা বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। শিল্পী চন্দন প্রামাণিক বলেন, ‘‘গাছ এবং পাখি বাঁচানোর বার্তা দেওয়া হয়েছে মণ্ডপ জুড়ে। দেখে ভাল লাগার পাশাপাশি অন্তত কিছু মানুষ যদি গাছ লাগানো অভ্যাস করেন, তা হলেই আমাদের প্রচেষ্টা সফল হবে। গাছ বড় হলে পাখি আপনাআপনিই আসবে।’’ শ্রীরামপুরের ১৯-এর পল্লির পুজোতেও গাছ কাটার বিরুদ্ধে সচেতনতা ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে পুজো ভাবনায়। দুর্গা নিজে এখানে বনদেবী। শ্রীরামপুরের চাতরার স্বাতী সঙ্ঘের পুজোয় মণ্ডপ জুড়ে থাকবে ‘নির্মল বাংলা’র স্লোগান। গ্রাম্য পরিবেশে ধানের মড়াই থেকে চালাঘর সবই থাকছে। উদ্যোক্তাদের এক জন বলেন, ‘‘এই পরিবেশের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে নির্মল বাংলা প্রকল্পের ধাঁচে একটি শৌচাগার তৈরি করা যায় কী না, তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা চলছে।’’

ডানকুনিরই মনোহরপুর পূর্ব দুর্গাপুজোয় থিম হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভ’। গাড়ি চালকদের সচেতন‌ করার উদ্দেশ্যেই এমন ভাবনা। অনেক পুজো কমিটিই এ বার ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভ’ নিজে প্রচার চালাবে বলে জানিয়েছে।

এই সচেতনতার বার্তায় এ বারে নব সংযোজন ডেঙ্গি।

গত কয়েক মাস ধরে শ্রীরামপুর ডেঙ্গিতে নাজেহাল হয়ে গিয়েছি‌ল। সচেতনতার অভাবেই এই রোগ শহরের আনাচে-কানাচে বিপাকে ফেলেছে শহরবাসীকে। পুজোর মুখেও অনেকে এই জ্বরে কাবু। সেই কথা মাথায় রেখেই শহরের বড়বাগান এলাকার একটি পুজো কমিটির এ বারের থিম ‘ডেঙ্গি সচেতনতা’। মশারি টাঙিয়ে শোওয়া, বাড়ি এবং আশপাশে জল যাতে না জমে থাকে তা নিশ্চিত করা, জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার মতো বিষয়গুলি বিভিন্ন মডেলের মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে। মণ্ডপের প্রধান আকর্ষণ হিসেবে থাকছে ডেঙ্গির ভাইরাস বহনকারী ‘এডিস ইজিপ্টাই’ প্রজাতির মশার একটি পেল্লাই প্রতিকৃতি। উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, ‘‘ডেঙ্গি সত্যিই আমাদের কাঁদিয়ে ছেড়েছে এ বছর। এমন পরিস্থিতি আর হোক, এটা আমরা চাই না। সেই কারণেই ডেঙ্গি-সচেতনতার জন্য পুজোকেই হাতিয়ার করেছি আমরা।’’

সব মিলিয়ে মণ্ডপে-মণ্ডপে দেবী দুর্গা এ বার আবির্ভূত হচ্ছেন সচেতনতার বার্তা নিয়ে।

অন্য বিষয়গুলি:

Puja theme dengue election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE