Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
মিলছে না যথাযথ পরিষেবা, অভিযোগ গ্রাহকদের

শাখা ডাকঘরে ‘অচ্ছে দিন’ কবে, প্রশ্ন

বর্ষায় কেউ চিঠি ফেলেন না বাণীতবলা শাখা ডাকঘরে। কারণ, ডাকঘরটি চলে একটি আশ্রমের দান করা ছোট ঘরে। সেই ঘরের দেওয়ালের একটি ফাঁক দিয়েই চিঠি ফেলতে হয় গ্রামবাসীদের। কিন্তু বর্ষায় ভাঙা টালির চাল থেকে জল পড়ে মেঝে ভরে যায়। তখন চিঠি ফেললে জলে ভাসে।

দুরবস্থা: ছাদ থেকে জল পড়া আটকাতে বাণীতলা শাখা ডাকঘরে ভরসা ত্রিপল। ছবি: সুব্রত জানা

দুরবস্থা: ছাদ থেকে জল পড়া আটকাতে বাণীতলা শাখা ডাকঘরে ভরসা ত্রিপল। ছবি: সুব্রত জানা

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৭ ০২:০৭
Share: Save:

ডাকঘর যেন ঝুপড়ি!

ছিটেবেড়ার ঘর একদিকে হেলে পড়েছে। টালির চালের বেশিরভাগই ভাঙা। চেয়ার-টেবিলের পায়া টলমল করছে। গ্রাহকদের বসার ব্যবস্থা নেই। এই হাল উলুবেড়িয়ার মহিষরেখা শাখা ডাকঘরের।

বর্ষায় কেউ চিঠি ফেলেন না বাণীতবলা শাখা ডাকঘরে। কারণ, ডাকঘরটি চলে একটি আশ্রমের দান করা ছোট ঘরে। সেই ঘরের দেওয়ালের একটি ফাঁক দিয়েই চিঠি ফেলতে হয় গ্রামবাসীদের। কিন্তু বর্ষায় ভাঙা টালির চাল থেকে জল পড়ে মেঝে ভরে যায়। তখন চিঠি ফেললে জলে ভাসে।

একচিলতে একটি টিনের ছাউনির ঘরে চলে বাণীবন শাখা ডাকঘর। দুপুরবেলাতেও মোমবাতি জ্বালিয়ে কাজ হয়। কারণ বিদ্যুৎ সংযোগ নেই।

এগুলি কোনও বিচ্ছিন্ন উদাহরণ নয়। হাওড়া জেলায় ২৫০টি শাখা ডাকঘর রয়েছে। খাদিনান শাখা ডাকঘরের মতো দু’একটিকে বাদ দিলে বাকিগুলির অবস্থা মহিষরেখা, বাণীতবলা বা বাণীবনের মতো একই রকম শোচনীয়। এক-একটি ডাকঘরে গড়ে গ্রাহকসংখ্যা দু’হাজার। তাঁদের প্রয়োজনীয় তথ্য, পাশবই— সবই থাকে পায়া ভাঙা টেবিলের ড্রয়ারে। বহু মানুষ এখানে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা রাখেন। কেন্দ্র সরকার যখন ডাক ব্যবস্থাকে উন্নত করার কথা বলছে, তখন শাখা ডাকঘরের এই অবস্থা কেন? কোর ব্যাঙ্কিং সিস্টেম, কম্পিউটার, এটিএম— আধুনিকীকরণের সব ব্যবস্থা যেন থমকে গিয়েছে উপ-ডাকঘর পর্যন্ত এসে! শাখা ডাকঘরের ‘অচ্ছে দিন’ কি আসবে না? প্রশ্ন তুলছেন গ্রাহকেরা।

দিনেরবেলাও মোমবাতি জ্বেলে কাজ চলছে বাণীবন শাখা ডাকঘরে। ছবি: সুব্রত জানা

জেলা ডাক বিভাগের কর্তারা মানছেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিকতার ছোঁয়া শাখা ডাকঘরগুলি পর্যন্ত পৌঁছনো উচিত। তবে, সাবেক আইন না পাল্টানো পর্যন্ত এটা সম্ভব নয়। কারণ, সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই পোস্টমাস্টারকেই শাখা ডাকঘরের জন্য ঘরের ব্যবস্থা করতে হয়। ঘর ভাড়া নিতে হলে তা তাঁকে নিজের পকেট থেকেই দিতে হয়। ভারতীয় ডাক ব্যবস্থার শুরু থেকে শাখা ডাকঘরগুলি থাকলেও পরিকাঠামোগত ভাবে এখনও তারা যেন পড়ে রয়েছে সেই আদিম যুগেই!

বাণীবনের পোস্টমাস্টার বলেন, ‘‘অনেক চেষ্টা করেও বাড়ি খুঁজে পাইনি। যে দু’একটি বাড়ি পেয়েছিলাম, ভাড়া এতটাই বেশি যে আমার বেতন থেকে দেওয়া অসম্ভব।’’ কোনও কোনও পোস্টমাস্টার অবশ্য ভাগ্যবান। যেমন, খাদিনান শাখা ডাকঘরকে বসার জায়গা করে দিয়েছে বাগনান-২ গ্রাম পঞ্চায়েত।

এই সব শাখা ডাকঘর থেকে টাকা তুলতেও ভুগতে হয় গ্রাহকদের। কারও যদি ৫০ হাজার টাকা জমা থাকে তা হলে তিনি প্রয়োজন হলে সঙ্গে সঙ্গে তুলতে পারেন না। আগে পোস্টমাস্টারকে জানাতে হয়।। বাণীবনের পোস্টমাস্টার শান্তনু গায়েন বলেন, ‘‘গ্রাহকরা যে টাকা জমা দেন, তা থেকেই যাঁরা তুলতে আসেন তাঁদের টাকা দিতে হয়। সেই পরিমাণ কোনও সময়েই দু-তিন হাজারের বেশি হয় না।’’ মহিষরেখার পোস্টমাস্টার ভানু কর জানান, এমন দিনও গিয়েছে যখন টাকা জমা পড়েনি। কেউ টাকা তুলতে এলে পকেট থেকে দিতে হয়েছে। পরে উপ-ডাকঘর থেকে টাকা তুলে নিজের প্রাপ্য বুঝে নিতে হয়েছে। এই অবস্থারই বদল চাইছেন গ্রাহকেরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE