একত্রিশ বছর পার। শোধ হয়নি অন্তত ৪৪ লক্ষ টাকা ঋণ। সুদ মিলিয়ে এখন যার পরিমাণ প্রায় দু’কোটি টাকা!
এই বিপুল পরিমাণ টাকা বৈদ্যবাটী পুরসভার কাছ থেকে কবে, কী ভাবে আদায় হবে জানেন না শেওড়াফুলি-বৈদ্যবাটী সমবায় ব্যাঙ্কের কর্তারা। ধার শোধ না-হওয়ায় আর্থিক দিক দিয়ে ব্যাঙ্কটি দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে তাঁরা জানিয়েছেন। বারবার পুরপ্রধানকে চিঠি দিয়েও অনাদায়ী ঋণ মেটানো হচ্ছে না বলে তাঁদের অভিযোগ।
ব্যাঙ্কের এক কর্তা বলেন, ‘‘এই অনাদায়ী ঋণের বোঝা সামাল দেওয়া কার্যত অসম্ভব। আমাদের বহু কর্মচারী রয়েছেন। এই চাকরির উপরই তাঁদের পরিবার নির্ভরশীল। তাঁদের কথাও তো আমাদের ভাবতে হবে। ঋণ শোধ না-হলে ব্যাঙ্কের চলবে কী ভাবে?’’
ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৮৭ সালে ওই ঋণ অবশ্য বৈদ্যবাটী পুরসভা সরাসরি নেয়নি। ব্যক্তিগত ভাবে নিয়েছিলেন পুরসভার ৩২-৩৮ জন কর্মী। কিন্তু দীর্ঘদিন তাঁরা সেই ঋণ শোধ করতে পারেননি। তখন পুরসভার ক্ষমতায় ছিল বামেরা। ১৯৯১-তে তৎকালীন সিপিএম পুরপ্রধান প্রভাস ঘোষ পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে ওই ঋণ পরিশোধের জন্য কর্মচারীদের বেতন থেকে টাকা কেটে নেওয়ার অনুমতি নিয়ে নেন। শুরু হয় প্রক্রিয়া। অর্থাৎ, ঋণ শোধের দায়িত্ব পুরসভা নিজের ঘাড়েই নেয়।
কিন্তু তার পরে নির্বাচনে পুরবোর্ড বামেরা ধরে রাখলেও নতুন মুখ আসে। অভিযোগ, ওই পুরকর্মীদের থেকে কেটে নেওয়া ঋণের অঙ্ক ব্যাঙ্কে ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। তা অন্য খাতে ব্যয় করেন তৎকালীন পুর কর্তৃপক্ষ। ফলে, ব্যাঙ্কের ধার পরিশোধ হয় না। ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়া সেই সময়ের এক কর্মী বলেন, ‘‘আমরা তো আর সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গায় নেই। আমাদের বেতন থেকে টাকা কাটা হল। অথচ, সেই টাকা ব্যয় হল সত্যজিৎ রায় নামাঙ্কিত নতুন পুরভবনের জন্য!’’ প্রভাসবাবু বলেন, ‘‘আমরা ওই ঋণ পরিশোধের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আমাদের পরে যাঁরা পুরবোর্ডের ক্ষমতায় আসেন, তাঁরা ততটা সক্রিয় হননি। ফলে, বিষয়টি থমকে যায়।’’
এই পরিস্থিতিতে বর্তমান পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, ঋণ মেটানোর দায় বর্তমান পুর কর্তৃপক্ষের হলেও আগে যাঁরা পুরসভার দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরাই ওই ঋণের বোঝা ঘাড়ে চাপিয়ে গিয়েছেন। পুরপ্রধান অরিন্দম গুঁইন বলেন, ‘‘আর্থিক সীমাবদ্ধতা পুরসভারও আছে। এক সঙ্গে বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝা মেটানোর আর্থিক স্থিতি এই মুহূর্তে পুরসভার নেই। পুরসভার আয় সীমিত। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি, যাতে আমাদের দেয় অর্থ কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়।’’
ব্যাঙ্কের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘পুর কর্তৃপক্ষের আর্জি আমরা রাজ্য সমবায় দফতরে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন তাঁদের সিদ্ধান্তের উপরই পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy