দড়ি দিয়ে হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছে এক যুবকের। বুধবার, হাওড়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
দুই গোষ্ঠীর মধ্যে তোলাবাজি নিয়ে সংঘর্ষের জেরে বুধবার সকালে উত্তপ্ত হল হাওড়ার কোনা হাইরোড এলাকা। অভিযোগ, স্থানীয় এক পরিবহণ ব্যবসায়ীকে মারধর করে ২০ হাজার টাকা নিয়ে পালানোর সময়ে এক গোষ্ঠীর লোকের হাতে ধরা পড়ে যায় অপর গোষ্ঠীর দুই যুবক। স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, এর পরে পাশের পঞ্চায়েত এলাকায় তুলে নিয়ে গিয়ে তৃণমূলের একটি কার্যালয়ের সামনে হাত-পা বেঁধে বেধড়ক মারধর করা হয় তাঁদের। খবর পেয়ে অন্য গোষ্ঠীর লোকজন আটক যুবকদের উদ্ধার করতে গেলে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
লিলুয়া থানা এলাকার কোনা হাইরোডে প্রতি রাতে প্রচুর ট্রাক ও লরি পার্ক করা হয়। অভিযোগ, স্থানীয় দুই পঞ্চায়েত এলাকা জগদীশপুর ও চামরাইলের কিছু যুবক এলাকা ভাগাভাগি করে সেই ট্রাকচালকদের থেকে প্রতিদিন পার্কিং ফি বাবদ ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে আদায় করে। বুধবার রমেশ যাদব নামে এক পরিবহণ ব্যবসায়ী ব্যবসার কাজে কোনা হাইরোডে গেলে তেমনই দুই যুবক তাঁকে মারধর করে ২০ হাজার টাকা-সহ সোনার চেন ও দু’টি মোবাইল ছিনিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। তখন চামরাইল পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা ওই দুই যুবককে জগদীশপুরের লোকজন ধরে ফেলে। স্থানীয়েরা জানান, ওই দুই যুবকের নাম রাজা চট্টোপাধ্যায় ও রাজু দলুই। এলাকায় তাঁরা দু’জনেই তৃণমূলকর্মী হিসেবে পরিচিত বলে দাবি স্থানীয়দের। অভিযোগ, প্রথমে রাজুর হাত-পা দড়ি দিয়ে বেঁধে মারধর শুরু হয়। সেই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান জগদীশপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান গোবিন্দ হাজরা। আক্রান্ত পরিবহণ ব্যবসায়ী রমেশ এ দিন বলেন, ‘‘প্রতিদিনের মতো এ দিনও লরিচালকের কাছ থেকে টাকা আনতে গিয়েছিলাম। তখন ওই দু’জন আমাকে রড় দিয়ে আক্রমণ করে। জোর করে ২০ হাজার টাকা, দু’টি মোবাইল ফোন ও সোনার চেন ছিনিয়ে নেয়। এর পরেই আমি ফোন করে লিলুয়া থানা ও গোবিন্দদাকে ঘটনাটি জানাই।’’
গোবিন্দবাবুর অভিযোগ, কিছু দিন ধরেই ওই এলাকায় সাট্টা, জুয়ার বোর্ড বসছিল। লরির চালকদের থেকে জোর করে পার্কিংয়ের টাকাও তোলা হচ্ছিল। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশকে বারবার জানিয়েছি। আজ ওই তোলাবাজেরা আমারই পরিচিত পরিবহণ ব্যবসায়ীর জিনিসপত্র ছিনতাই করেছে।’’ গোবিন্দবাবু জানান, এই খবর পেয়ে ‘ছিনতাইকারীদের’ তিনি নিজের এলাকায় তুলে আনেন। তবে তাঁর দাবি, মারধর করা হয়নি। বরং মারধর থেকে বাঁচাতেই তুলে আনা হয় যুবকদের। পার্কিং ফি তোলা নিয়ে তাঁর এলাকার কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে গোবিন্দবাবুর দাবি, এই অভিযোগও ভিত্তিহীন। তাঁর এলাকায় তোলাবাজি হয় না। যদিও বাসিন্দাদের অভিযোগ, জগদীশপুরের পিছন দিয়ে যে রাস্তা কোনা হাইরোডে মিশেছে, সেখানেও একই ভাবে টাকা আদায় করা হয়। না দিলে মারধরও করা হয়। এলাকার এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘দু’পক্ষের লোকজনই এলাকা ভাগ করে টাকা তোলে। কম করে প্রতিদিন ২০-২৫ হাজার টাকা তোলা হয়।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, ছিনতাইয়ে অভিযুক্ত রাজা চামরাইল পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান ও বর্তমানে ওই পঞ্চায়েতের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুভাষ রায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। যদিও এ দিন সুভাষবাবু স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এই ধরনের ঘটনা তিনি সমর্থন করেন না। সুভাষবাবু বলেন, ‘‘দলের কোন ছেলে কী করছে, তা আমার জানা নেই। লরিচালকদের থেকে টাকা তোলার অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয়, তবে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ এ দিকে এই ঘটনার পরে আক্রান্ত পরিবহণ ব্যবসায়ী পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে লিলুয়া থানা। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত দু’জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হাওড়ার পুলিশ কমিশনার বিশাল গর্গ বলেন, ‘‘গোটা ঘটনাটির বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। এত দিন এ বিষয়ে থানা কেন ব্যবস্থা নেয়নি, তা-ও তদন্ত করে দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy