ঝুঁকি: সেতুর দু’পােশ লেখা আছে বিপদের সতর্কবার্তা। ছবি: সুব্রত জানা
তিনটি স্তম্ভ বসে গিয়েছে। বহুদিন আগেই পূর্ত (সড়ক) দফতর সেতুটিকে বিপজ্জনক বলে ঘোষণা করেছে। ভারী যান চলাচলও নিষিদ্ধ।
কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা শুনছে কে?
ওই দুর্বল সেতু দিয়েই অবাধে পারাপার করে বালি, পাথর ও ইট বোঝাই ট্রাক। বাগনানের বাকসি সেতুতে।
গাইঘাটা খালের উপরে নির্মিত এই সেতুর দৈর্ঘ্য ৩২৫ মিটার। ২০০৬ সালে রাজ্যের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত কংক্রিটের সেতুটি উদ্বোধন করেন। কিন্তু চালু হওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যেই খালের মধ্যবর্তী স্থানে তিনটি স্তম্ভ বসে যায়। তার ফলে স্তম্ভের উপরের তিনটি গার্ডারও বসে যায়। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, তারপর থেকেই সেতুর উপরি তল ঢেউ খেলানো।
সেতুটি বাগনানের সঙ্গে জয়পুরের একটা বড় অংশকে যোগ করেছে। জয়পুরের ভাটোরা, ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান এবং কাশমলি এই তিনটি পঞ্চায়েতের মানুষ এই সেতুর উপর দিয়ে চলাচল করেন। প্রতিদিন কয়েকশো ছোট গাড়ি যাত্রী পরিবহণ করে।
কোনও দিন এই সেতু ভেঙে পড়লে, মূল হাওড়া থেকে সড়ক পথে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে ওই তিনটি পঞ্চায়েত। ওই এলাকার বাসিন্দাদের তখন একমাত্র ভরসা হবে রূপনারায়ণ এবং মুন্ডেশ্বরীতে চলাচল করা যন্ত্রচালিত নৌকাগুলি।
কেন বসে গেল সেতুর তিনটি স্তম্ভ? রাজ্য পূর্ত (সড়ক) দফতর সূত্রের খবর, ২০১০ সালে প্রবল বন্যা হয়। গাইঘাটা খালের উপর দিয়ে প্রবল বেগে জল বইতে থাকে। সেই চাপ নিতে পারেনি স্তম্ভগুলি। ফুটখানেক করে বসে যেতে থাকে স্তম্ভগুলি।
আমতার বিধায়ক অসিত মিত্রের অবশ্য অভিযোগ, সেতুর নির্মাণে ত্রুটির জন্যই এটা ঘটেছে। তিনি বলেন, ‘‘২০০৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনের সে কথা মাথায় রেখে তড়িঘড়ি সেতুর উদ্বোধন করতে চেয়েছিল তৎকালীন বাম সরকার। স্তম্ভগুলির ভারবহণ ক্ষমতা পরীক্ষা করাই হয়নি।’’
তবে রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদলের পরও শিঁকে ছেড়েনি বাকসি সেতুর ভাগ্যে। এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি রাজ্য পূর্ত (সড়ক) দফতরের হাওড়া ডিভিশনের কর্তারা। অভিযোগ, ৭-৮ বছর আগে সেতুটির অংশ বসে গেলেও তা মেরামত করেনি পূর্ত (সড়ক) দফতর। শুধুমাত্র সেতুর দুই দিকে দুটি সতর্কবার্তা ঝুলিয়ে দিয়ে দায় সেরেছে তারা। একটি সতর্কবার্তায় লেখা আছে ‘বিপজ্জনক সেতু। গাড়ি আস্তে চালাবেন’। অন্যটিতে লেখা আছে, ‘বিপজ্জনক সেতু। ভারী যান চলাচল নিষিদ্ধ।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পূর্ত দফতরের কাছে বার বার আবেদন করার পরেও সেতুটি তারা মেরামতির বিষয়ে উদ্যোগী হয়নি। শুধু তাই নয়, ভারী যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হলেও ইমারতি দ্রব্য বোঝাই ট্রাক এই সেতুর উপর দিয়ে অবাধেই চলাচল করছে। মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পরে বাসিন্দাদের আতঙ্ক বেড়েছে। অবিলম্বে সেতু মেরামতির দাবি তুলেছেন তাঁরা। বিধায়কের বক্তব্য, ‘‘এখনই এই সেতু মেরামত করা না হলে আরও একটা মাঝেরহাট বিপর্যয় হবে।’’
মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পরে অবশ্য নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। এই সেতুর মেরামতির ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা রাজ্য পূর্ত দফতরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেতুটি অবিলম্বে মেরামতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক তুষার সিংলা বলেন, ‘‘সেতু মেরামতের বিষয়টি প্রশাসনের অগ্রাধিকারের তালিকায় আছে। শীঘ্রই এ ব্যাপারে রূপরেখা স্থির করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy