বামশরিক হিসাবে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে ইতিমধ্যেই নিজেদের সম্মতি জানিয়েছে। কিন্তু কংগ্রেস-বাম আসন রফায় নির্বাচনে জেলায় দলের অবস্থান কোথায় দাঁড়াবে সেই আশঙ্কায় এখন থেকেই ভুগতে শুরু করেছে হাওড়া ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্ব। দলের অনেকে কংগ্রেসের খপ্পরে পড়ে আসন হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কাও করছেন। যা চিন্তায় ফেলে দিয়েছে জেলা ফব নেতৃত্বকে।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি জোটের পক্ষে মত দেওয়ার পরে তৎপরতা বাড়ে বামশরিকদের মধ্যে। তারই জেরে ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য কমিটি হাওড়া জেলা কমিটির কাছে জোট নিয়ে তাঁদের বক্তব্য জানতে চায়। এর পরেই আলোচনায় বসে জেলায় দলের ১৪টি লোকাল কমিটি। পরে তারা জানায়, তৃণমূলের হাত থেকে মুক্তি পেতে হলে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করতে সাময়িকভাবে তাদের কোনও আপত্তি নেই। ওই সিদ্ধান্তের কথা জেলা কমিটির পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় রাজ্য কমিটিকে। তবে একইসঙ্গে কিছু শর্তের কথাও জানিয়েছে জেলা কমিটি। দলের এক জেলা নেতা বলেন, ‘‘নীতি-আদর্শ বিসর্জন দিয়ে কংগ্রেসের হাত ধরা ঠিক হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল আলোচনায়। সেই মতকেও সম্মান জানানো হয়েছে। তাই কংগ্রেসকে আপাতত সমর্থনের ব্যাপারে সহমত পোষণের সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ভবিষ্যতে প্রয়োজনে বৃহত্তর আদর্শের জন্য কংগ্রেস বিরোধিতা থেকে সরে আসবে না দল।’’ রাজ্য কমিটিকেও সে কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
নির্বাচনে কী হবে তা ভবিষ্যতই বলবে। কিন্তু জোট ভবিতব্য মেনে নিয়ে জেলায় কে কোন আসনে দাঁড়াবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন ফব নেতৃত্ব। এমনকী জেলায় তাঁদের বরাদ্দ আসনে কংগ্রেস ভাগ বসাতে পারে এমন আশঙ্কাও করছেন তাঁরা। হাওড়ায় মোট ১৬টি বিধানসভা আসনের মধ্যে বামফ্রন্টগতভাবে ফরওয়ার্ড ব্লকের কোটায় আছে চারটি আসন--শিবপুর, পাঁচলা, উলুবেড়িয়া দক্ষিণ এবং শ্যামপুর। এর মধ্যে ২০০৬-এর ভোটেও শ্যামপুর ছাড়া বাকি তিনটি আসন ফরওয়ার্ড ব্লকের দখলে ছিল। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট হইহই করে জেলার ১৬ টি আসনই কব্জা করে। তৃণমূলের ভাগে যায় ১৫টি। কংগ্রেস পায় ১টি আসন।
সেই যুক্তিতে কংগ্রেসের জেলা কমিটি সাতটি আসন দাবি করেছে। জেলা কংগ্রেসের এক নেতা জানান, কোন কোন আসন তাঁরা চান তার তালিকা প্রদেশ কংগ্রেসকে দেওয়া হয়েছে। এই সাতটির মধ্যে অবশ্য আমতার দলীয় বিধায়ক অসিত মিত্রের আসন নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই। কিন্তু বাকি যে ছ’টি আসন জেলা কংগ্রেস দাবি করেছে, ফরওয়ার্ড ব্লকের চিন্তা সেগুলি নিয়েই। দলের এক নেতা জানান, শুনেছি, কংগ্রেস যে সব আসন দাবি করেছে তাতে তাঁদেরও দু-একটি আসন রয়েছে। সেগুলি কংগ্রেসকে দেওয়া হলে সমস্যা হবে।
কিন্তু জোটের শর্ত হিসাবে প্রত্যেক শরিককে তো কিছু আসন ছাড়তে হবে। সে ক্ষেত্রে তাঁদেরও যদি একটি আসন ছাড়তে বলা হয় তাতে সমস্যা কোথায়?
ওই ফব নেতার কথায়, ‘‘জোট হলে কংগ্রেসকে আসন তো আমাদের ছাড়তেই হবে। কিন্তু সেটা করতে হবে রাজ্যস্তরে ফর্মুলা মেনে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘রাজ্যে ফরওয়ার্ড ব্লকের কোটায় রয়েছে ৩৪টি আসন। প্রতিটি শরিকদল যত শতাংশ আসন ছড়বে তার ভিত্তিতেই আসন ছাড়বে ফরওয়ার্ড ব্লক। তারপরে ঠিক হবে কোন জেলা থেকে কত আসন ছাড়া হবে। তবে হাওড়া জেলায় আমাদের কোটার আসনে হাত না দিয়ে যাতে উত্তরবঙ্গ থেকেই কংগ্রেসকে বেশিরভাগ আসন ছাড়া হয়, এমন দাবিই জানানো হবে।’’ দলের জেলা নেতৃত্বের আশঙ্কা, পর পর কয়েকটি নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় সিপিএম এবং কংগ্রেসের নজর পড়তে পারে শ্যামপুরের উপরে। তা সত্ত্বেও ওই আসনটি কংগ্রেসকে ছাড়তে তাঁরা নারাজ।
যদিও ফরওয়ার্ড ব্লকের এ হেন আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়েছে সিপিএম এবং কংগ্রেস। দুই দলেরই জেলা নেতারা জানান, আসনরফা নিয়ে এখনও কোনও কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। ফলে অনুমানের ভিত্তিতে কোনও সিদ্ধান্ত ঠিক নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy