Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

নোটের চোট এড়িয়ে চাঁদা তুলে গ্রন্থাগারের ৫০ বছর

নোটের সমস্যায় জর্জরিত সকলেই। তবু গ্রামের গ্রন্থাগারের সুবর্ণজয়ন্তী পালনে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেননি কেউ। যে যেমন পেরেছেন চাঁদা দিয়েছেন।

শনিবার পদযাত্রার ছবিটি তুলেছেন সুব্রত জানা।

শনিবার পদযাত্রার ছবিটি তুলেছেন সুব্রত জানা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৩৩
Share: Save:

নোটের সমস্যায় জর্জরিত সকলেই। তবু গ্রামের গ্রন্থাগারের সুবর্ণজয়ন্তী পালনে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেননি কেউ। যে যেমন পেরেছেন চাঁদা দিয়েছেন। আর সেই চাঁদার টাকাতেই শনিবার থেকে উলুবেড়িয়ার ‘রঘুদেবপুর পিপলস লাইব্রেরি’র তিন দিনের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব শুরু হল।

প্রথম দিন প্রভাতফেরিতে ছাত্রছাত্রী থেকে গ্রামবাসী— সকলেই সামিল হন। চিত্ত রায় নামে সত্তরোর্ধ্ব এক গ্রামবাসী হাঁটতে পারছিলেন না। তাঁকে একটি টোটোতে বসানো হয়। টোটোতে বসেই ‘বই পড়ুন, বই পড়ান’ স্লোগানে গলা মেলান তিনি। বৃদ্ধা পদ্মা অধিকারী আগাগোড়া হেঁটেছেন। উৎসবে সামিল হয়ে দু’জনেই আপ্লুত। চিত্তবাবু বলেন, ‘‘এই গ্রন্থাগার আমাদের প্রাণ। রোজ গ্রন্থাগারে আসি।’’ পদ্মাদেবী বলেন, ‘‘আমাদের কাজ এই গ্রন্থাগারকে বাঁচিয়ে রাখা।’’

গ্রামবাসীদের এই উদ্যোগে খুশি চেপে রাখতে পারেননি গ্রন্থাগার পরিচালন সমিতির সম্পাদক অনিলকুমার শর্মা। তিনি বলেন, ‘‘উৎসবে প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। নগদের সমস্যায় বাজেট কিছুটা কাটছাঁট করতে হয়েছে। কিন্তু চাঁদা সকলেই দিয়েছেন। গ্রন্থাগার সুস্থ সংস্কৃতি প্রচারের একটা বড় মাধ্যম। এ কথা আমরা গ্রামবাসীদের বোঝাতে পেরেছি।’’ উৎসবের অন্য দিনে থাকছে রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি, আবৃত্তি প্রতিযোগিতা।

গ্রন্থাগারটি তৈরি হয় ১৯৪৩ সালে। সুধীরকুমার শর্মা নামে এক গ্রামবাসী ১০০টি বই নিয়ে গ্রন্থাগারটি চালু করেন। সেই হিসাবে গ্রন্থাগারের বয়স ৭৩ বছর। কিন্তু পরিচালকমণ্ডলীর সদস্যেরা জানান, চালু হওয়ার পরে কয়েক বছর গ্রন্থাগারটি বন্ধ ছিল। ১৯৬৬ সালে এক দল যুবক গ্রন্থাগারটি ফের চালু করেন। সেই হিসেবেই এ বার সুবর্ণজয়ন্তী। গ্রামীণ গ্রন্থাগার হিসাবে এটি সরকারি স্বীকৃতি পায় ১৯৮০ সালে। বর্তমানে এই গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা ৮ হাজার ২০৩টি। গ্রাহক প্রায় ৮০০।

গ্রন্থাগারের দোতলা ভবনের একতলায় রয়েছে রিডিং-রুম। রয়েছে আলাদা শিশুবিভাগ। গল্প-উপন্যাসের পাঠক বাড়ছে বলে জানান গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ। পাঠকদের চাহিদা জানতে ‘পরামর্শ-বই’ও চালু হয়েছে। তবে, কর্মী সমস্যা রয়েছে। এখানে একজন গ্রন্থাগারিক এবং এক জন সাধারণ কর্মী থাকার কথা। কিন্তু গ্রন্থাগারিক সুবীরকুমার পাড়ুইকে দু’টি গ্রন্থাগারের দায়িত্ব সামলাতে হয়। ফলে, এখানে তিনি সপ্তাহে তিন দিনের বেশি থাকতে পারেন না। কাজ সামলান সাধারণ কর্মী। সমস্যাকে অবশ্য ধর্তব্যে আনেন না গ্রামবাসীরা। গ্রন্থাগারটি যে তাঁদের প্রাণ!

অন্য বিষয়গুলি:

Library golden jubilee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE