বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের লক্ষ্যে বছর পাঁচেক আগে রাজ্যের প্রতি ব্লকে পুকুরের জল-মাটি পরীক্ষা এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। কিন্তু এত দিনেও হাওড়ার অর্ধেক ব্লকে ওই কেন্দ্র তৈরিই হল না। ফলে, জেলার বহু চাষি বৈজ্ঞানিক ভাবে মাছ চাষের জন্য যথাযথ সরকারি সুবিধা এবং প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বাড়ছে না মাছ উৎপাদনও।
অথচ, হাওড়া জেলায় মাছের উৎপাদন বাড়ানোর অনুকূল পরিস্থিতি রয়েছে বলেই দাবি চাষিদের। জেলা মৎস্য দফতরেরই হিসাব অনুযায়ী, হাওড়ায় ৬ হাজার হেক্টর জলাশয় রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৫ হাজার হেক্টরে মাছ চাষ হয় সরকারি সাহায্যে। যে সব ব্লকে ওই কেন্দ্র রয়েছে, সেখানকার চাষিরা যথাযথ পরামর্শ এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে মাছের উৎপাদান বাড়াচ্ছেন। কিন্তু পিছিয়ে পড়ছেন অন্য ব্লকের মাছচাষিরা।
জেলা মৎস্য দফতরের সহ-অধিকর্তা অম্বালিকা ঘোষ সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন। তিনি জানান, এত দিন প্রকল্পগুলির জন্য অর্থ বরাদ্দ না হওয়াতেই কেন্দ্র তৈরি করা যায়নি। তবে, চলতি বছরে তিনটি ব্লকে ওই কেন্দ্র তৈরির অনুমোদন মিলেছে। সেগুলির কাজ দ্রুত শুরু হবে। তা হলে চাষিদের সুবিধা হবে। মাছের উৎপাদনও বাড়বে। অন্য যে সব ব্লকে ওই কেন্দ্র নেই, সেখানেও তা তৈরির চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রের ‘রাষ্ট্রীয় কিষান বিকাশ যোজনা’ প্রকল্পে ২০০৯ সালে রাজ্যের প্রতি ব্লকে ওই কেন্দ্র তৈরির কাজ শুরু করে তৎকালীন বাম সরকার। হাওড়া জেলার ১৪টি ব্লকের মধ্যে ওই কেন্দ্র রয়েছে উলুবেড়িয়া-১, শ্যামপুর-২, জগৎবল্লভপুর, আমতা-২, পাঁচলা ও ডোমজুড় এই ছ’টি ব্লকে।
ওই কেন্দ্রগুলিতে সংশ্লিষ্ট ব্লকের মাছ চাষের পুকুরের মাটি ও জল পরীক্ষা হয়। চাষিরা মাছের নমুনা নিয়ে যান। কেন্দ্রের আধিকারিকেরা সে সব পরীক্ষা করে চাষিদের যথাযথ পরামর্শ দেন। চাষিরা জানতে পারেন, তাঁদের পুকুর কোন ধরনের মাছ চাষের উপযোগী, কী ভাবে উৎপাদন বাড়ানো যায়, কী ভাবে ব্যবহার করতে হয় প্রয়োজনীয় জৈব সার বা মাছের খাবার। তা ছাড়া, মাছের কোনও রোগ হলেও তা নির্ণয় করে আধিকারিকেরা প্রয়োজনীয় প্রতিষেধক বা ওষুধ প্রয়োগের পরামর্শ দেন।
উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের চাষিরা জানিয়েছেন, ওই কেন্দ্রের আধিকারিকদের থেকে পরামর্শ নিয়ে বছরে হেক্টরপিছু প্রায় সাড়ে পাঁচ টন মাছ উৎপাদন করছেন তাঁরা। কেউ কেউ আবার উন্নত প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে মাছ উৎপাদন বাড়িয়েছেন সাত টন পর্যন্ত। কাশমূল এলাকার মাছচাষি শেখ সাহারফ বলেন, “আমি ১৮টি পুকুরে মাছ চাষ করি। ওই কেন্দ্রের পরামর্শ নিয়ে চাষ করায় হেক্টরপিছু বছরে গড়ে সাড়ে ৫ টন মাছ উৎপাদন করতে পারছি।”
অন্য দিকে, উলুবেড়িয়া-২, বাগনান-১ ও ২, শ্যামপুর-১, উদয়নারায়ণপুরের মতো যে সব ব্লকে এখনও ওই কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি, সেখানকার মাছচাষিরা কোনও সরকারি প্রশিক্ষণ বা পরামর্শ ছাড়াই মাছ চাষ করছেন। ফলে, তাঁদের মাছের উৎপাদনও সে ভাবে বাড়ছে না। সে কথাই শোনা গিয়েছে শ্যামপুর-১ ব্লকের বেলাড়ি এলাকার মাছচাষি অরূপ মণ্ডলের মুখে। তিনি বলেন, “আমি গোটা পাঁচেক পুকুরে মাছ চাষ করি। কিন্তু বছরে হেক্টরপিছু উৎপাদন হয় সাড়ে তিন টন। তিনি বলেন, “যথাযথ প্রযুক্তি এবং সহযোগিতার ব্যবস্থা থাকলে আরও বেশি মাছ উৎপাদন সম্ভব হত।”
তবে, যে সব ব্লকে ওই কেন্দ্র রয়েছে, সেখানে পরিকাঠামোগত কিছু অসুবিধার কথা মেনে নিয়েছেন জেলা মৎস্য দফতরের আধিকারিকেরা। তাঁরা জানান, ওই সব কেন্দ্রে পর্যাপ্ত কর্মীর অভাব রয়েছে। তা ছাড়া, কৃষি-প্রযুক্তি সহায়কের মতো ওই সব কেন্দ্রেও সহায়ক নিয়োগ হলে মাছচাষিদের সুবিধা হবে। এ জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy