নতুন আশায়। সোমবার তাপস ঘোষের তোলা ছবি।
পুজোর মুখে আকাশের মুখ ভার। ডানলপের সাহাগঞ্জ কারখানার দরজা খোলার ঘোষণার শ্রমিকের মুখেও কিন্তু সেইভাবে হাসি দেখা যায়নি সোমবার দুপুরে।
সংবাদ মাধ্যমের সৌজন্যে ডানলপের শ্রমিক মহল্লায় দুপুর থেকেই খবরটা আসতে শুরু করেছিল। কেউ কেউ ইতস্তত কারখানা চত্বরে এদিন হাজির হলেও সংখ্যা গরিষ্ঠ কিন্তু গরহাজির। কারখানার গেট লাগোয়া সমীর দেবনাথের চায়ের দোকান থেকে জিটি রোড লাগোয়া কারখানার মূল গেটে সে ভাবে এদিন উল্লাস চোখে পড়েনি। পুজোর সময় কারখানা খোলা এবং সঙ্গে বকেয়া আংশিক পাওনা। এই জোড়া খবরেও ডানলপের দুপুরের আলস্য তেমন ভাঙেনি।
বস্তুত ১৯৯৮ থেকে ১৪ সাল গত দেড় দশকের বেশি সময় জুড়ে বার চারেক কারখানা বন্ধ হয়েছে। রাজনীতির অবধারিত ঘুরপাকে কখনও পুজোয় আবার কখনও ভোটের মুখে দরজাও খুলে গিয়েছে। কিন্তু ডানলপে উত্পাদনের চাকা সেইভাবে আর ঘোরেনি। কারখানায় ১৯৭৭ সাল থেকে কাজ করছেন শম্ভু মালিক। তিনি বলেন, “চোখের সামনে দিয়েই বার বার খুলল আমাদের কারখানা। আবার অনেকবার বন্ধ হতে দেখলাম। ছাবারিয়া থেকে রুইয়া। কিন্তু মালিক বদল হলেও কী কারখানার চেহারার কোনও পরিবর্তন হয়েছে? রোজগারের ঠিক ঠিকানা সে ভাবে না থাকলে আর কী নিয়ে আনন্দ করব আমরা?”
শম্ভুবাবু সরাসরি কারখানার কর্মী। কিন্তু কারখানার গায়েই চায়ের দোকান সমীরবাবুর। কারখানার ওঠাপড়ার সঙ্গেই তাঁর ছোট্ট দোকানের উত্থান-পতন দেখছেন। তিনি বলেন, “কারখানার যখন রমরমা ছিল বিক্রিও ছিল প্রচুর। দিব্যি গড়গড়িয়ে চলত দোকান। কিন্তু কারখানা সেই যে নয়ের দশকে বন্ধ শুরু হল আমার দোকানেরও খারাপ সময়ের সেই শুরু। কিছুতেই ব্যবসাটা দাঁড় করাতে পারছি না।”
সমীরবাবুর দোকানের মতোই গত কয়েক বছরে ক্রমে বিবর্ণ হয়েছে কারখানা চত্বর। পাঁচিল ভেঙে পড়েছে। সেই ভাঙা পাঁচিল গলেই অবাধে যাতায়াত বহিরাগতদের। এক সময়ের ব্যাচেলার্স কোয়াটার এখন ভেঙে মাঠ। ইট কড়ি, বরগা কবেই খুলে গিয়েছে ভাঙার বরাত পাওয়া ঠিকাদারেরা। জিটি রোডের দিকের ডানলপের দেওয়ালে এখন ঘঁুটের প্রলেপ। জঙ্গল আর আগাছায় ভর্তি কারখানা চত্বরে এখন সাপ আর শিয়ালের আড্ডা।
অপরেশ গুইন এক সময় ট্র্যাক্টর বিভাগে কাজ করতেন। অনেকটা বিলাপের মতো আওড়াচ্ছিলেন কারখানার বদলে যাওয়া ছবির কথা। বললেন, “২০০২ সালে অবসর নিয়েছি। বকেয়া একটা টাকাও পাইনি। কী ভাবে চালাই বলুন তো সংসারটা। মালিককে একটাই অনুরোধ রক্ত জল করা পরিশ্রমের টাকা। পুজোর মুখে বকেয়া দিন। আর কিছু চাওয়ার নেই।”
শ্রমিকেরা কেউ কেউ আশা করছেন পুজোর মুখে কারখানা খুললে তাঁদের বকেয়ার অনেকটাই পাবেন। শ্রম দফতরের পরিষদীয় সচিব, বিধায়ক তপন দাশগুপ্ত বলেন, “কারখানা বন্ধের সময়ের ২৪০০ শ্রমিককে পাঁচ হাজার করে টাকা এবং যে শ্রমিক মারা গিয়েছেন তাঁদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা এককালীন দেওয়া হবে। মোট ৭৯ লক্ষ টাকা কর্তৃপক্ষ বকেয়া মেটাবেন আপাতত।”
ডানলপের দরজা খুলতে শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা করছেন। বার বার কথা বলেছেন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে। কিন্তু কারখানার উত্পাদন চালু বা শ্রমিকদের বকেয়া পাওনার ক্ষেত্রে তা কতটা কার্যকারী হবে সময়ই তার উত্তর দেবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy