বিজেপির হাওড়া জেলা (গ্রামীণ) কার্যালয় ভাঙচুর। ছবি: সুব্রত জানা
গ্রামীণ হাওড়ার জন্য বিজেপি যে প্রার্থী-তালিকা ঘোষণা করেছে, সামগ্রিক ভাবে তা নাপসন্দ অনেক দলীয় কর্মী-সমর্থকের। প্রতিবাদে রবিবার সন্ধ্যা থেকে পথে নামলেন তাঁরা। বাগনানে মুম্বই রোড অবরোধ হল। উলুবেড়িয়ার মনসাতলায় দলের জেলা (গ্রামীণ) কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। সেখানে আগুন লাগানোরও
চেষ্টা হয়। আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় ওই কার্যালয় থেকে জেলা বিজেপি নেতারা পালিয়ে যান। একই ভাবে পাঁচলায় বিক্ষুব্ধরা গঙ্গাধরপুর
এবং রানিহাটির দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায়।
রবিবার প্রকাশিত বিজেপির প্রার্থী-তালিকায় দেখা যাচ্ছে, পদ্ম প্রতীকে ডোমজুড় থেকেই লড়ছেন তৃণমূলত্যাগী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এক তৃণমূলত্যাগী নেতা মোহিত ঘাঁটি (জেলা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য) টিকিট পেয়েছেন পাঁচলা কেন্দ্রে। রাজীবের হাত ধরেই তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। কিন্তু সদ্য তৃণমূলত্যাগী সাঁকরাইলের বিদায়ী বিধায়ক শীতল সর্দার বিজেপিতে গিয়েও টিকিট পাননি। হাওড়ার ১৬টি আসনের মধ্যে শিবপুর, জগৎবল্লভপুর এবং উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্র বাদ দিয়ে বাকি আসনগুলির প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিজেপি।
ঠিক কোন কোন প্রার্থী নিয়ে আপত্তিতে এ দিন জেলা (গ্রামীণ) কার্যালয়ে ভাঙচুর হল, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। কাগজপত্রও তছনছ করা হয়। চিত্র-সাংবাদিকেরা ছবি তুলতে গিয়ে হামলাকারীদের হাতে নিগৃহীত হন বলে অভিযোগ। হামলাকারীদের অভিযোগ, জেলায় একাধিক কেন্দ্রে প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কারচুপি, দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ হয়েছে। যোগ্য প্রার্থীদের জায়গা দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি জেলা (গ্রামীণ) বিজেপি সভাপতি প্রত্যুষ মণ্ডল।
সাঁকরাইলে প্রার্থী হয়েছেন প্রভাকর পণ্ডিত। ২০১৬ সালেও তিনি এই কেন্দ্রে দলের প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁকে হারিয়েই শীতলবাবু বিধায়ক হন। গত ৫ মার্চ তৃণমূল প্রার্থী-তালিকা ঘোষণা করে। শীতলবাবুর নাম ছিল না। দু’দিন পরেই শীতলবাবু বিজেপিতে যোগ দেন। সাঁকরাইলে প্রার্থী হওয়ার জন্য আবেদনও করেন। তবে, তাঁকে কোনও আশ্বাস দেওয়া হয়নি বলে বিজেপির হাওড়া সদরের বিজেপি নেতাদের একাংশের দাবি। বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্বের দাবি, শীতলবাবুকে সঙ্গে নিয়েই তাঁরা লড়াই করবেন। দল তাঁকে প্রার্থী না-করায় শীতলবাবু বলেন, ‘‘এটা দলের ব্যাপার। দল যা মনে করেছে, তা-ই করেছে।’’
শীতলবাবু টিকিট না-পাওয়ায় স্থানীয় তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করছেন, এটা তাঁদের ক্ষেত্রে ‘অ্যাডভান্টেজ’। এমনিতে এখানে বিজেপির সাংগঠনিক অবস্থা তুলনায় দুর্বল। তৃণমূলে থাকাকালীন দলের বিধানসভা কমিটির সভাপতি ছিলেন শীতলবাবু। এই অবস্থায় তিনি বিজেপি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে তাঁর কিছু অনুগামী হয়তো প্রার্থীর হয়ে খাটতেন। তাতে বিজেপি সাংগঠনিক দিক থেকে শক্তিশালী হত। কিন্তু শীতলবাবুকে বিজেপি প্রার্থী না-করায় তিনি দলে কতটা সময় দেবেন তা নিয়ে সন্দেহ আছে। শীতলবাবু এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি ফোন কেটে দেন।
জেলা (গ্রামীণ) তৃণমূল সভাপতি পুলক রায় বলেন, ‘‘শীতলবাবু এখন অন্য দলে। কাকে তারা প্রার্থী করবে, সেটা সেই দলের ব্যাপার। যে কোনও পরিস্থিতিতে আমরা লড়াই
করতে প্রস্তুত। অন্য দলের প্রার্থীর উপরে আমাদের জয়-পরাজয় নির্ভর করে না।’’
এ দিন প্রকাশিত বিজেপির প্রার্থী-তালিকায় চমক বলতে একটিই। শ্যামপুর কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে অভিনেত্রী তনুশ্রী চক্রবর্তীকে। উলুবেড়িয়া উত্তরে প্রার্থী করা হয়েছে চিরণ বেরাকে। এই কেন্দ্রের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপি কর্মীদের একাংশ জানিয়েছেন, এখানে তৃণমূল প্রার্থী নির্মল মাজির বিরুদ্ধে যাঁকে প্রার্থী করা হল, তাঁর পরিচিতি বা সংগঠনে তেমন প্রভাব নেই। আসনটি তৃণমূলকে কার্যত ‘উপহার’ দেওয়া হচ্ছে বলেও অনেকে মন্তব্য করেছেন। জেলা (গ্রামীণ) বিজেপি নেতারা অবশ্য জানিয়েছেন, দল
সব দিক বিবেচনা করে উপযুক্ত প্রার্থী দিয়েছে।
উলুবেড়িয়া দক্ষিণ এবং জগৎবল্লভপুরেও তৃতীয় দফায় ভোট। মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। অথচ, এই দু’টি কেন্দ্রে প্রার্থীর নাম ঘোষণা না-হওয়ায় বিজেপি কর্মীরা কিছুটা উদ্বেগে রয়েছেন। দলের জেলা নেতৃত্বের দাবি, দু’এক দিনের মধ্যেই এই দু’টি কেন্দ্রের প্রার্থীর নামও ঘোষণা হয়ে যাবে বলে কেন্দ্রীয় নেতারা তাঁদের জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy