পেঁয়াজ চাষ। —ফাইল চিত্র।
রোদ উঠল শুক্রবার। তার আগে তিন দিন ধরে মেঘলা, সাঁতসেঁতে আবহাওয়া এবং বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির জেরে হুগলিতে আলু ও পেঁয়াজ চাষে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। আলুতে ধসা রোগের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে বলে অনেক চাষি জানিয়েছেন। আলুর জমি ভিজে গিয়ে গাছের গোড়ায় সদ্য দেওয়া মাটিও বসে গিয়েছে। লাইন করে লাগানো আলু গাছের গোড়ায় দেওয়া মাটির মধ্যেই আলু গজিয়ে বাড়তে থাকে। সব মিলিয়ে ফলন কমবে বলে চাষিদের আশঙ্কা।
জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল আলু। কৃষি দফতরের হিসেব, এ বার জেলায় আলু চাষের এলাকা প্রায় ৯৪ হাজার হেক্টর। বর্তমান পরিস্থিতিতে আলুতে ক্ষতির আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়নি কৃষি দফতরও। জেলা কৃষি দফতরের এক কর্তা বলেন, “প্রতিকূল আবহাওয়ায় ছত্রাকজনিত নাবিধসা রোগের সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা আছে। দফতরের আধিকারিকেরা নিয়মিত পরিদর্শন করছেন। রোগের আগাম প্রতিরোধ এবং প্রতিকার নিয়ে সচেতন করতে চাষিদের লিফলেট বিলি করা হচ্ছে, মাইকেও প্রচার করা হচ্ছে।’’
ধসা রোগ নিয়েই চাষিদের ভয় বেশি। পুরশুড়ার কেলেপাড়ার চাষি বাপ্পাদিত্য ধোলে বলেন, “১৬ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। জমির কিছু অংশে আলুতে ধসা লাগা শুরু হয়েছে। জায়গায় জায়গায় জলও জমে আছে।’’ একই রকম ধসা লাগা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারকেশ্বরের চাঁপাডাঙার বিমল মালিক, ধনেখালির ভান্ডারহাটির সুকান্ত দাস, আরামবাগের তিরোলের নয়ন ঘোষ প্রমুখ চাষিও।
চাষিদের অভিযোগ, ধসা রোগ আসলে গাছের পাতার ডাঁটায় এবং কাণ্ডে বাদামি রঙের ক্ষত। সেই ক্ষত খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গোটা গাছে পচন ধরায়। গাছ কালো হয়ে মাটির তলায় থাকা আলুতেও পচন ধরায়। গোঘাটের বর্মার চাষি শেখ সিরাজুল হক বলেন, “জলে বিশেষ ক্ষতি হয়নি। এখন ধসা রোগেরই ভয়। দেরিতে চাষ হওয়ায় এমনিতে কিছু ফলন কম হবেই। কৃষি দফতরের পরামর্শে আগাম ছত্রাকনাশক দিয়ে বিঘা তিনেক জমির ফসল বাঁচানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি।’’
জেলার মধ্যে বলাগড়েই বেশি পেঁয়াজ চাষ হয়। অসময়ের বৃষ্টিতে এখানকার খামারগাছির কামালপুর বাস স্ট্যান্ডের কাছে পেঁয়াজের জমিতে জল জমে গিয়েছে। একই ছবি বাকুলিয়াতেও।
চাষিরা জানান, পেঁয়াজের চারা রোপণের পর দিন কুড়ি অপেক্ষা করতে হয়। তারপরে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে সেচ দিতে হয়। তারপর আর চারায় জল লাগে না। কিন্তু সে সবের পরে অসময়ের বৃষ্টিতে চাষ নষ্ট হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। ফলন কম হবে বলে চাষিদের আশঙ্কা।
বাকুলিয়া গ্রামের পেঁয়াজ চাষি অসিত মালিক জানান, কার্তিক মাসের প্রথম সপ্তাহে ১৬ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চারা রোপণ করেছিলেন। জমিতে এখনও জল দাঁড়িয়ে। তাঁর আশঙ্কা, ‘‘যা অবস্থা মনে হচ্ছে তিন বিঘা জমির পেঁয়াজ তুলতে পারব। বাকি জমির পেঁয়াজ তুলতে পারব তাই ওই জমিতে তিল ছড়িয়েছি।’’ ইনছুড়ার যুবক খোকন ঘোষের মাথাতেও হাত পড়েছে। তিনি বলেন, ‘‘পেঁয়াজ দিনের রোদ আর রাতের শিশিরে ভাল বাড়ে। জমিতে সেচ দেওয়ার পর পেঁয়াজ আর জল সইতে পারে না। অথচ, বৃহস্পতিবার জমিতে জল দাঁড়িয়েছিল। শুক্রবার জল টেনেছে। কী হবে কে জানে! কতটা তুলতে পারব জানি না।’’
বলাগড়ের সহ-কৃষি অধিকর্তা সোমনাথ পাল বলেন, ‘‘অসময়ের বৃষ্টিতে কিছুটা ক্ষতি হবে চাষিদের। যে সব জমিতে জল রয়েছে, সেই জল টানলে বা সরলে জমিতে ওষুধ প্রয়োগ করে পেঁয়াজ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করতে হবে চাষিদের। বৃষ্টি কমেছে। দেখা যাক কী হয়। চাষিদের সব রকম সহযোগিতা করা হবে।’’
তবে, অসময়ের বৃষ্টিতে বোরো ধান ও আনাজ চাষে সুফল মিলবে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy