Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Manoranjan Byapari and Runa Khatun

‘বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে যান, টাকা লাগলে আমি দেব’! মনোরঞ্জনকে পাল্টা ‘সেই ফুলন দেবীর’

বিধায়ক দলের যুবনেত্রীকে ফুলন দেবী বলে সম্বোধন করেছেন। তারা পাল্টা সেই নেত্রী বললেন, বিধায়কের মানসিক সমস্যা রয়েছে। আক্রমণ ছাড়া উনি থাকতে পারেন না।

Runa Khatun and Manoranjan Byapari

রুনা খাতুন এবং মনোরঞ্জন ব্যাপারী। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বলাগড় শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:০০
Share: Save:

তৃণমূলে নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্বের মধ্যে হুগলির বলাগড়ে শুরু হয়েছে তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী বনাম নেতৃত্বের একাংশ। যে যুবনেত্রী তথা জেলা পরিষদের সদস্যাকে আক্রমণ করেছেন মনোরঞ্জন, কটাক্ষ করেছিলেন ফুলন দেবী বলে, এ বার পাল্টা আক্রমণ করলেন সেই রুনা খাতুন। এমনকি, তাঁর বিরুদ্ধে মনোরঞ্জন যে আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন, তা নিয়ে রুনার খোঁচা, মামলার জন্য যদি বিধায়কের টাকা-পয়সার প্রয়োজন হয়, সেই সাহায্যও তিনি করবেন।

বুধবার বলাগড়ের বিধায়ক মনোরঞ্জনের একটি ফেসবুক পোস্ট নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। তিনি দুঃখপ্রকাশ করে জানান, নিজের বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তাঁকে বাধ্য হয়ে দূরে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু কেন তিনি বলাগড় বিধানসভা থেকে দূরে বসে আছেন? মনোরঞ্জন ফেসবুকে লেখেন, ‘‘সেই কদাকার ঘটনাক্রম নিয়ে আগামী ৭ জানুয়ারি রাত ৮টার সময় আমি ফেসবুক লাইভ করতে চলেছি।’’ দলের একাংশকেও আক্রমণ করেছেন বলাগড়ের বিধায়ক। সেখানে নাম না করে রুনাকে আক্রমণ করে ফুলন দেবী বলেন তিনি। আর এই গোটা ঘটনায় বিধায়ককে পাল্টা কাঠগোড়ায় তুললেন রুনা। তাঁর কথায়, ‘‘উনি (মনোরঞ্জন) নিজেই নিজের নামে বলছেন। নিজের গায়ে কাদা ছুঁড়ছেন। মানসিক প্রবলমে আছে ওঁর। উনি মাঝে মাঝেই কাউকে এক জনকে আক্রমণ করেন। আসলে আক্রমণ ছাড়া উনি থাকতে পারেন না।’’

লেখক-বিধায়ক মনোরঞ্জনের অভিযোগ, এক মাটি মাফিয়া বালি মাফিয়া গাঁজার পাচারকারীদের সহায়ক জুয়ার বোর্ড চালানো উপনেতা তাঁকে চোর বলেছেন। খুনি বলেছেন। ধর্ষক বলছেন। তার পরই রুনাকে আক্রমণ করে বলাগড়ের বিধায়ক লিখেছেন, ‘‘সেই যে বলাগড়ের ফুলন দেবী! যে সঙ্গে ২০-২৫ জন শার্প শুটার নিয়ে ঘোরে, যে আমাকে মহিপালপুরে জনসভা করে মাটিতে পুঁতে দেবে বলেছে! হয় সে আমাকে সত্যি সত্যিই পুঁতে দেবে, আর তা না হলে আমি তাকে তার রাজনৈতিক জীবন থেকে রিটায়ার করিয়ে দেব। দেখব, তার কোলকাতার ‘বাবু’ তাকে কী ভাবে বাঁচায়!’’

রুনা অবশ্য এই আক্রমণকে ধর্তব্যেই আনছেন না। তাঁর দাবি, দলীয় বিধায়ককে তিনি রাজনৈতিক লড়াইয়ের মধ্যে ধরেন না। তিনি কাজ করছেন রাজ্য সরকারের প্রকল্প মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। রুনার কথায়, ‘‘এমএলএ-এর সঙ্গে লড়াই করা আমার কাজ নয়। উনি ওঁর কাজ করুন। আসলে এই প্রথম কাউকে দেখলাম উঁচু থেকে নীচে তাকাতে। ইঁদুর পাহাড় থেকে ঝাঁপ দেয়। বাঘ-সিংহরা নয়। যদিও অনেকে নিজেদের পশুরাজ ইত্যাদি বলছেন। কেউ মানুষ মনে করছেন না নিজেদের।’’ মনোরঞ্জন বলেছেন, এ বার তিনি এসপার-ওসপার করবেন। যুবনেত্রী প্রভাব খাটিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীদের সরিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন বিধায়ক। এ নিয়ে রুনার কটাক্ষ, ‘‘এটা পৃথিবীর নবম আশ্চর্য! বিধায়কের নিরাপত্তা সরিয়ে দেবে আমার মতো ক্ষুদ্র, সামান্য, তুচ্ছ জেলা পরিষদের সদস্যা!’’ কিন্তু কেন বিধায়ক তাঁর উপ চটেছেন? এ নিয়ে পেশায় শিক্ষিকা রুনা বলছেন, রাগের কারণ বিধায়ক নিজে জানেন। তবে তাঁর নিজের মনে হয়েছে, বিধায়কের অনৈতিক কাজে তিনি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাই এই আক্রমণ হেনেছেন বিধায়ক। তিনি মনোরঞ্জনের উদ্দেশে বলেন, ‘‘উনি ফেসবুকে নাম করে কিচ্ছু লেখেন না। আসলে সৎ সাহসের অভাব।’’ বিধায়ক যে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে যাওয়ার কথা বলেছেন, তা নিয়ে যুবনেত্রীর কটাক্ষ, ‘‘গো অ্যাহেড। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে যান। যদি টাকাপয়সা লাগে আমি সাহায্য করব। আমি এক জন শিক্ষিকা। আমার রুচিবোধ আছে। আপনি কাদা ছুড়তে পারেন। কিন্তু আমি সন্দেশ দিলাম।’’

সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে দলের অন্দরে এই ‘লড়াই’ কি সঙ্কটে ফেলবে না তাঁদের? যুবনেত্রী জানান, এ রকম ভাবার কোনও কারণ নেই। পুরো বিষয়টি দলকে জানানো হয়েছে। দল নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেবে।

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Manoranjan Byapari Balagarh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE