সতীর্থরা বলছেন, তিনি হঠাৎ নেত্রী হননি। বরং, দীর্ঘদিন লড়াইয়ের স্রোত বেয়েই ‘উত্থান’। রবিবারের ব্রিগেড সমাবেশে দৃপ্ত ভঙ্গিতে বক্তব্য পেশের পরে রাজনৈতিক মহলের চোখে পড়েছেন হুগলির প্রত্যন্ত গ্রামের বন্যা টুডু। ঝাঁঝালো গলায় তৃণমূল-বিজেপির উদ্দেশে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘লড়াই চলবে’। ২০২৬-এ তৃণমূলকে ‘খেলা দেখানো’র বার্তাও দিয়েছেন আদিবাসী, ছাপোষা ওই মহিলা। একহাত নিয়েছেন
পুলিশ-প্রশাসনকেও।
কে এই বন্যা?
স্বামী, ছেলে, পুত্রবধূকে নিয়ে মাঝবয়সি বন্যা থাকেন গুড়াপের চেরাগ্রামের লহরপুরে। স্বামী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। বন্যা বর্তমানে সিপিএমের হুগলি জেলা কমিটি এবং সারা ভারত খেতমজুর সংগঠনের রাজ্য কমিটির সদস্য। সিপিএম নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যাচ্ছে, ২০০১ সালে দলের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের ধনেখালি ব্লক কমিটির সদস্য হন। প্রথম থেকেই মেঠো ভাষায় জোরালো বক্তৃতার সুবাদে দলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। বাম আমলের শেষ দিকে গুড়াপ পঞ্চায়েতের প্রধান হন। খেতমজুর সংগঠনের সর্বভারতীয় স্তরে পরিচিতি পান ২০১৫ সালে।
সম্প্রতি দাদপুরে গ্রামবাসীদের জমির পাট্টা ‘দখলের’ বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন তিনি। লাল ঝান্ডা হাতে তাঁর প্রতিবাদের ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ায় সিপিএমের রাজ্য স্তরে তাঁকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ২০২৩ সালে কলকাতায় দলীয় কর্মসূচিতে বক্তব্য পেশের সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। তবে, দাদপুরের ওই ঘটনা তাঁর সম্পর্কে দলীয় নেতৃত্বের আগ্রহ বাড়ায়। সেই সুবাদেই ব্রিগেডের মঞ্চ।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের প্রতিক্রিয়া, ‘‘বন্যা লড়াই করে উঠে এসেছেন। টালিগঞ্জের স্টুডিয়ো থেকে আমাদের নেতানেত্রী আনতে যেতে হয় না। আন্দোলন থেকে, মাঠে-ময়দানে লড়াই করে তাঁরা উঠে আসেন। বন্যা যেমন এসেছেন।’’ বন্যা ২০২৬-এ ‘উইকেট ফেলা’র ডাক দিয়েছেন। সেই সুরেই সেলিম জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়েছেন, ‘‘উইকেট ফেলবেন তো?’’
এ দিন দলীয় সতীর্থদের সঙ্গে বাসে চেপে ব্রিগেডে গিয়েছেন বন্যা। ফিরেওছেন একই ভাবে। তার আগে, সমাবেশ শেষে অন্যদের সঙ্গে মাঠ পরিষ্কারে ঝাঁটা হাতে নেমে পড়েন তিনি। ফোনে বন্যা বলেন, ‘‘আদিবাসী, খেটে খাওয়া মানুষের জন্য আমাদের লড়াই। আন্দোলনের পথ ছাড়ছি না।’’ তাঁর সম্পর্কে দলের জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষের মন্তব্য, ‘‘অত্যন্ত লড়াকু। এক দিনে এই জায়গায় পৌঁছননি।’’
বন্যার বক্তব্যে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাননি ধনেখালির তৃণমূল বিধায়ক তথা দলের হুগলি-শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলার চেয়ারপার্সন অসীমা পাত্র। তৃণমূল আমলে পাট্টা কেড়ে নেওয়ার অভিযোগও তিনি মানেননি। তাঁর দাবি, দাদপুরে যে জমি নিয়ে বন্যার আন্দোলন, সেই জমির পাট্টা বিলি বেআইনি প্রমাণিত হয়েছিল বাম আমলেই। বিজেপির রাজ্য নেতা স্বপন পালের মন্তব্য, ‘‘হুগলির গ্রাম থেকে উঠেছেন, ভাল লাগছে। কিন্তু সিপিএমের হয়ে বক্তব্য পেশ করে কী লাভ! মানুষ ওঁদের আর নেবে না।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)