অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
গত কয়েকদিন ধরে নবীন বনাম প্রবীণের প্রকাশ্য লড়াই নিয়ে খানিক ‘অস্বস্তি’তে শাসক তৃণমূল। নবীনদের লড়াই মূলত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখেই। দলের প্রথম সারির নেতাদের মধ্যে ঠোকাঠুকি আর বিতর্কের মধ্যেই এই প্রথম কোনও প্রকাশ্য কর্মসূচিতে দেখা যাবে অভিষেককে। আগামী রবিবার। ঘটনাচক্রে, যে দিন আবার সিপিএমের যুব সংগঠনের ব্রিগেডে সভা রয়েছে।
ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের প্রবীণদের বার্ধক্যভাতা দেওয়ার জন্য দেখা যাবে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের এই কর্মসূচি পূর্বঘোষিত। কিন্তু তা সত্ত্বেও তৃণমূলের নবীন-প্রবীণ লড়াইয়ের কুশীলবেরা রবিবারের দিকে তাকিয়ে। কারণ, সম্প্রতি তৃণমূল সূত্রের খবর ছিল, অভিষেক তাঁর ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছেন, আগামী লোকসভা নির্বাচনে তিনি নিজেকে নিজের লোকসভা এলাকাতেই সীমাবদ্ধ রাখবেন।
এখন কৌতূহল, নিজের কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারের কর্মসূচিতে কি অভিষেক তাঁর ঘনিষ্ঠ বৃত্তে বলা কথাটিই প্রকাশ্যে জানিয়ে দেবেন? নাকি তিনি ওই প্রসঙ্গের অবতারণাই করবেন না? নাকি তিনি ওই খবর নাকচ করবেন?
আগে থেকেই ঘোষণা করা হয়েছিল, নিজের লোকসভা এলাকার প্রবীণদের বার্ধক্যবাতা দেবেন অভিষেক। বিষ্ণপুর, ফলতা, ডায়মন্ড হারবার, বজবজ, মহেশতলা, সাতগাছিয়া ও মেটিয়াবুরুজ— এই সাত বিধানসভা নিয়ে ডায়মন্ড হারবার লোকসভা। প্রতিটি বিধানসভা এলাকাতেই আলাদা করে কর্মসূচি হওয়ার কথা। শুরু হচ্ছে বিষ্ণুপুর আসন দিয়ে। সেখানকার পৈলান যুব সঙ্ঘের মাঠে রবিবার বিকেল ৩টেয় শুরু কর্মসূচি। বুধবার সন্ধ্যায় সমাজমাধ্যমে যে কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছেন অভিষেক।
এক সময়ে বামেদের ঘাঁটি ডায়মন্ড হারবার ২০০৯ সালেই দখল করে তৃণমূল। জিতেছিলেন সোমেন মিত্র। তার পরে ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে পর পর জিতেছেন অভিষেক। প্রথমবারের ব্যবধান ছিল ৭১,২৯৮ ভোট। কিন্তু দ্বিতীয়বার সেই ব্যবধান পৌঁছে যায় ৩,২০,৫৯৪ ভোটে। শুধু তা-ই নয়, গত বিধানসভা নির্বাচনে জেলার একটি ছাড়া সব আসনে জিতেছিল তৃণমূল। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও বড় সাফল্য মিলেছে। তৃণমূলের অনেকেরই বক্তব্য, অভিষেক সাংসদ হওয়ার পর দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় দলের দাপট আরও বেড়েছে।
কিন্তু গোটা জেলা নয়, অভিষেক নাকি শুধু নিজের কেন্দ্রেই নিজেকে ‘সীমাবদ্ধ’ রাখতে চান লোকসভা নির্বাচনে। ঘনিষ্ঠদের তিনি এমনও জানিয়েছেন যে, দল অন্য কোনও আসনে কর্মসূচি দিলেও অগ্রাধিকার পাবে ডায়মন্ড হারবার। সেই দিন নিজের কেন্দ্রে কোনও ঘোষিত কর্মসূচি থাকলে তিনি সেখানেই থাকবেন। অন্যত্র যাবেন না।
পুজোর পর থেকেই সে ভাবে দলীয় কর্মসূচিতে অভিষেককে দেখা যায়নি। তা নিয়ে নানা জল্পনাও তৈরি হয়েছে। এর পরে গত শনিবার তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ, ব্রাত্য বসু, তাপস রায়, নারায়ণ গোস্বামী, পার্থ ভৌমিকরা অভিষেকের কালীঘাটের বাড়িতে যান। সেখানে তাঁরা অভিষেককে দলের কাজে ‘সক্রিয়’ হওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন। কিন্তু জানা যায়, অভিষেক সে আর্জি ফিরিয়ে দিয়ে জানান, লোকসভায় তিনি নিজেকে ডায়মন্ড হারবারের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ রাখতে চান। নীতিনির্ধারণ বা সংগঠন পরিচালনার ভার তিনি নেবেন না। তার কারণ হিসেবে যেমন কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রতিবাদে তাঁর আন্দোলন থামিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গ এসেছিল, তেমনই এসেছিল নবান্নের কয়েক জন আমলার সরকারি কাজে গড়িমসি নিয়ে তাঁর ক্ষোভের প্রসঙ্গও।
এরই মধ্যে গত ১ জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠাদিবসে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী বলেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের সর্ব স্তরের ভারতবর্ষের রাজনীতিতে সাধারণ সম্পাদক। স্বাভাবিক ভাবেই এই নির্বাচনে যদি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লড়াই করেন, নিশ্চিত ভাবে আমাদের ধারণা, উনি লড়াইয়ের ময়দান থেকে পিছিয়ে যাবেন না। যদি লড়াই করেন, তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে লড়াই করবেন উনি।’’ তারই পাল্টা কুণাল বলেছিলেন, ‘‘রাজ্য সভাপতিকে সম্মান করি। কিন্তু তাঁর বাক্যগঠন নিয়ে আপত্তি রয়েছে। এটা কখনওই কাঙ্ক্ষিত নয়। অভিষেক লড়াইয়ের ময়দানেই রয়েছেন। আর তিনি যে কথা বলতে চান, তা শুনলে দলেরই মঙ্গল।’’ যদিও মমতা-ঘনিষ্ঠ নেতাদের দাবি, বক্সী অভিষেককে ‘খাটো’ করতে ওই কথা বলেননি। এর পরে এক দিকে ববি হাকিম, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও অন্য দিকে তাপস রায়, কুণালদের মন্তব্য-যুদ্ধ লেগে যায়। যে লড়াই এখনও থামেনি। বুধবারও সুদীপকে আক্রমণ করেছেন তাপস।
তবে বিতর্ক শুরুর দিনেই সন্ধ্যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা করেন অভিষেক। একান্তে দু’জনের কথা হয়। সেই বৈঠকের পরে মমতা বা অভিষেক কেউ কোনও কথা বলেননি। দু’জনের প্রকাশ্য কোনও কর্মসূচিও ছিল না। ফলে রবিবারের ডায়মন্ড হারবারের দিকে নজর সকলের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy