মহারাষ্ট্র এবং মরাঠি ভাষার ‘স্বার্থরক্ষার’ জন্যই হাত মেলাতে পারেন দুই ভাই উদ্ধব এবং রাজ ঠাকরে। এ বার এমনটাই ইঙ্গিত মিলল শিবসেনা (ইউবিটি)-র মুখপত্রে। সোমবার শিবসেনার মুখপত্র ‘সামনা’-র সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে যে, মহারাষ্ট্রের স্বার্থেই এই মুহূর্তে দুই ভাইয়ের পদক্ষেপ করা উচিত। সেই মিলনে যদি বিষ থেকে অমৃতও নিঃসৃত হয়, তা-ও মহারাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজন।
বিজেপিকে তীব্র সমালোচনা করে লেখা ‘সামনা’র সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ‘‘যদি জীবন ঝগড়া-বিবাদ এবং মারামারি করেই কেটে যায়, তা হলে মহারাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ওদের ক্ষমা করবে না। বিজেপির রাজনীতি ‘ব্যবহার করো এবং ছুড়ে ফেলো’ মনোভাবে বিশ্বাসী। মোদী, শাহ এবং ফডনবীস দেশেরই ভাল চান না। তাঁরা কী ভাবে মহারাষ্ট্রের ভাল চাইতে পারেন? তাঁরা কেবল রাজনীতিতে বিষ ঢালার কাজ করে চলেছেন। এই অদ্ভুত এবং বিষাক্ত সময় থেকে মহারাষ্ট্রের মরাঠি জনগণের শিক্ষা নেওয়া উচিত। প্রতিটি পদক্ষেপে সতর্ক থাকা উচিত। যদি বিষ থেকে অমৃতও নিঃসৃত হয়, তাও মহারাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজন।’’
আরও পড়ুন:
মুখপত্রে আরও বলা হয়েছে, রাজ ঠাকরের রাজনীতি এখনও পর্যন্ত বিশেষ সফল হয়নি। শিবসেনা ত্যাগ করার পর তিনি মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস) নামে একটি স্বাধীন দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই সময় তিনি পুরসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে জনগণের কাছ থেকে প্রচুর সমর্থন পেলেও পরে তাঁর দল বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। বিজেপি, একনাথ শিন্ডে এবং অন্যেরা রাজের ‘কাঁধে বন্দুক রেখে’ শিবসেনাকে আক্রমণ করতে থাকেন। রাজের দল এতে রাজনৈতিক ভাবে বিশেষ লাভবান হয়নি, তবে সামগ্রিক ভাবে ক্ষতি হয়েছে মরাঠি ঐক্যের।
‘সামনা’র সম্পাদকীয়তে আরও লেখা হয়েছে, সম্প্রতি রাজ এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট বলেছেন, ‘‘যে কোনও বৃহত্তর স্বার্থের সামনে ব্যক্তিগত বিভেদ গৌণ। সে সবের চেয়ে মহারাষ্ট্র অনেক বড়। মরাঠি আত্মপরিচয়কে বাঁচিয়ে রাখার লড়াইয়ে এই বিষয়গুলির কোনও গুরুত্বই নেই।” রাজ আকারে ইঙ্গিতে পুনর্মিলনের ইচ্ছা প্রকাশ করার পর পিছপা হননি বালাসাহেব-পুত্র উদ্ধবও। তিনিও বলেছেন, ‘‘যদি নগণ্য বিরোধ হয়, তা হলে আমিও সব কিছু সরিয়ে রেখে মহারাষ্ট্রের স্বার্থে এক সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। যারা মহারাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার সাহস এবং শক্তি কেবল মরাঠি জনগণেরই আছে। অতএব, মরাঠিদের একত্রিত হতে হবে।’’
তা হলে কি ১৯ বছর পর আবার দুই ভাই এক হতে পারেন? এ নিয়ে মরাঠাভূমের রাজনীতিতে চলছে জোর জল্পনা। তবে দুই ভাইয়ের মেলবন্ধন হলেও মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে তা তেমন কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে না, এমনটাই মনে করছে বিজেপি। যদিও উদ্ধব এবং রাজের মিলন হলে ‘খুশি’ হবেন বলেই জানিয়েছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস। একই সুর শোনা গিয়েছে উদ্ধবগোষ্ঠীর ‘বন্ধু’ কংগ্রেসের কণ্ঠেও। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের শেষেই বৃহন্মুম্বই পুরসভা নির্বাচন রয়েছে। অনেকের মতে, সেই নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে একজোট হচ্ছেন উদ্ধব এবং রাজ।