শ্রীরামপুর গভর্নমেন্ট হাউজ়। —নিজস্ব চিত্র।
পেল্লায় দরজা পোকায় খাচ্ছে। চটছে দেওয়ালের আস্তরণ। তাতে স্যাঁতসেঁতে ভাব!
মৃতপ্রায় শ্রীরামপুর গভর্নমেন্ট হাউজ় বেঁচে উঠেছে কারিগরি দক্ষতায়। বহু টাকা খরচে ফিরেছে পুরনো আদল। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের হাল তাকালেই স্পষ্ট। এর পিছনে প্রশাসনিক উদাসীনতা দেখছেন অনেকে। সমস্যা মানলেও উদাসীনতার কথা মানেনি প্রশাসন। প্রশাসনের এক কর্তা জানান, কিছু ক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো হয়েছে।
শ্রীরামপুরে ছিল ডেনমার্কের উপনিবেশ। সেই সময় তারা অনেক স্থাপত্য গড়ে তুলেছিল। গভর্নমেন্ট হাউজ় ছিল তাদের প্রধান প্রশাসনিক ভবন। পরে সেটি শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসকের দফতর হয়। জীর্ণ হয়ে পড়ায় ১৯৯৯ সালে সেটি পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়। ডেনমার্কের জাতীয় মিউজ়িয়ামের সহযোগিতায় ওই ভবন-সহ সেই আমলের নানা স্থাপত্য সংস্কার করে পুরনো চেহারায় ফেরানো হয়েছে। গভর্নমেন্ট হাউজ় দেড় বছর আগে চালু হয়েছে। এখন সেখানে শ্রীরামপুর মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের অফিস। রয়েছে স্থায়ী প্রদর্শশালা, অডিটোরিয়াম।
এর মধ্যেই ভবনের একাধিক দরজা নষ্ট হতে শুরু করেছে। কিছু জায়গায় দেওয়ালের আস্তরণ ক্ষয়েছে। স্যাঁতসেঁতে দেওয়াল নষ্ট করেছে প্রদর্শশালার ছবি। মঞ্চের পাশের আলো ভাঙা। পর্দার কাঠামো বেঁকে গিয়েছে। শোনা গেল, অডিটোরিয়ামের সাউন্ড সিস্টেম অকেজো। গভর্নমেন্ট কম্পাউন্ডে ঢোকার নর্থ গেটের হাল আরও খারাপ। প্লাস্টার খসে ইট বেরিয়ে পড়েছে।
শ্রীরামপুরের পুর-পারিষদ সন্তোষ সিংহ বলেন, ‘‘সংস্কারের কাজের দরপত্র হয়েছে। সাউথ গেটের কাজ হচ্ছে। গভর্নমেন্ট হাউজ়, নর্থ গেটের ক্ষতিগ্রস্ত অংশও শীঘ্রই সারানো হবে।’’
সাউথ গেটের গা ঘেঁষে একটি নির্মাণ হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, সরকারি প্রকল্পে সেটি হয়েছে। সেটির জন্য সাউথ গেটের একটি অংশ সংস্কার বা রং করতে হলে, সম্ভব নয়। হেরিটেজের গায়ে এমন নির্মাণের যুক্তি খুঁজে পাননি আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাকারীরা। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে তাঁরা ক্ষুব্ধ।
ওই নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে শ্রীরামপুর হেরিটেজ রেস্টোরেশন ইনিশিয়েটিভ বা শ্রী-র তরফে চিঠি দেওয়া হয়েছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের চেয়ারপার্সন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাতে সই করেছেন আশিস আচার্য, শৌভনিক রায়, মণীশ চক্রবর্তী, গোপা সেনের মতো স্থপতিরা।
‘শ্রী’র কর্মকর্তারা মনে করেন, গভর্নমেন্ট হাউজ়ের ঘরের জানলা-দরজা নিয়মিত না-খোলায় আলো-বাতাস ঢোকে না। তাতেই দেওয়ালে ‘ড্যাম্প’ হচ্ছে। ছত্রাকের আক্রমণে প্রদর্শনীর ছবি নষ্ট হয়েছে। তাঁদের ক্ষোভ, গত প্রায় এক বছর গভর্নমেন্ট হাউজ় পরিচালন কমিটির মিটিং হয়নি। মাঝে দু’বার বৈঠক ডেকেও বাতিল করা হয়। প্রশাসন সূত্রের দাবি, বৈঠক ডেকেও বাতিল করতে হয় জরুরি কারণে। তবে সামগ্রিক বিষয়ে প্রশাসনের নজর নেই, এমন নয়।
‘শ্রী’র সম্পাদক দেবাশিস মল্লিক ও সদস্য মোহিত রণদীপ বলেন, ‘‘হেরিটেজের ঐতিহ্য বজায় রাখতে যা যা দরকার, প্রশাসন করুক।’’ পুর-পারিষদ সন্তোষের বক্তব্য, ‘‘সাউথ গেট লাগোয়া নির্মাণ প্রশাসনই করেছে। তবে হেরিটেজের রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা দরকার। এ কথা প্রশাসনকে অনেক বার মৌখিক ভাবে জানিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy