উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমাণ অস্ত্র।
কয়েক মাস আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে অস্ত্র উদ্ধারে নেমেছিল পুলিশ। কিন্তু, সেই কাজে যে ধারাবাহিকতার অভাব এবং ফাঁকফোঁকর ছিল, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে গত শনিবার চুঁচুড়ার কোদালিয়ার মনসাতলা থেকে বিপুল সংখ্যক অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায়। তার ৪৮ ঘণ্টা আগেও বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ধারাল অস্ত্র মেলে চুঁচুড়ারই রবীন্দ্রনগরের এক দল দুষ্কৃতীর থেকে। অস্ত্রের এই ঝনঝনানিতে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত সাধারণ মানুষ। প্রশ্নে পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা।
চন্দননগর কমিশনারেট জানিয়েছে, শনিবার রাতে কোদালিয়ায় সুকুমার মাঝি ওরফে সুকু নামে এক দুষ্কৃতীর বাড়িতে হানা দিয়ে ২০টি আগ্নেয়াস্ত্র (তিনটি নাইন এম এম, একটি পিস্তল এবং ১৬টি পাইপগান। সঙ্গে ২০৭ রাউন্ড তাজা কার্তুজ) উদ্ধার করা হয়। পুলিশ কমিশনার অমিত পি জাগালভি বলেন, ‘‘ধৃত সুকুমার দাগি অপরাধী। বহুদিন জেলও খেটেছে। দীর্ঘদিন ধরে তার ডেরায় অস্ত্র মজুত করা হচ্ছিল। কেন তা করা হচ্ছিল, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’ এত অস্ত্র মজুতের পিছনে আর কারা রয়েছে, তা-ও দেখছে পুলিশ।
দিন কয়েক আগে পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ হয় রবীন্দ্রনগরের কুখ্যাত সমাজবিরোধী টোটন বিশ্বাস। কলকাতার হাসপাতাল থেকে টোটনকে চুঁচুড়ায় আনার সময় ডানকুনিতে দিল্লি রোডে পুলিশ তার ৩৯ জন সাগরেদকে ধরে। তাদের কাছে ৭টি আগ্নেয়াস্ত্র, বস্তাভর্তি ধারাল অস্ত্র মেলে। পুলিশের উপরে ভরসা না রেখে বিরুদ্ধ গোষ্ঠী বিশালের দলবলের হামলা থেকে টোটনকে ‘নিরাপত্তা’ দিতে এবং পুলিশের গাড়ি থেকে ‘বস’কে (টোটন) ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে এত অস্ত্র নিয়ে ওই দুষ্কৃতীরা বেরিয়েছিল বলে তদন্তকারীদের দাবি। এ বার সুকুর বাড়িতে বিপুল অস্ত্র মজুতের সঙ্গে টোটন বা বিশালের দলবলের যোগ আছে কি না, এলাকা দখলের উদ্দেশ্যে বড় কোনও হামলার ছক দুষ্কৃতীদের ছিল কি না, পুলিশ তার উত্তর খুঁজছে।
পরিস্থিতি নিয়ে সরব বিরোধীরা। জেলা সিপিএম সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘রাজ্যের সর্বত্র লাগামহীন সন্ত্রাস। দুষ্কৃতীরাই শাসন করছে। সাধারণ মানুষ সন্ত্রস্ত। পুলিশ ঠুঁটো।’’ বিজেপির হুগলি সংগঠনিক জেলা সম্পাদক সুরেশ সাউয়ের অভিযোগ, ‘‘চুঁচুড়া বারুদের স্তুপ হয়ে গিয়েছে। শাসক দলের সঙ্গে দুষ্কৃতীরা মিলেমিশে যাওয়ায় ওরা লাগামছাড়া। মুখ্যমন্ত্রী তো আগেই অস্ত্র উদ্ধারের কথা বলেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর পুলিশ-প্রশাসনই যে ওঁর কথা শোনে না, এত অস্ত্র উদ্ধারে তা স্পষ্ট হয়ে গেল।’’ তৃণমূলের শ্রীরামপুর-হুগলি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরিন্দম গুঁইনের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘পুলিশ সক্রিয় বলেই তো অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। সিপিএম-বিজেপি জনবিচ্ছিন্ন। তাই হতাশায় শুধুই কুৎসার রাজনীতি করে।’’
হুগলিতে অস্ত্রের আনাগোনা নতুন নয়। অভিযোগ, কমিশনারেট গড়েও দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য, অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধ হয়নি। ২০১৯ সালে টোটনের ডেরায় গিয়ে আক্রান্ত হয় পুলিশ। তারপরে লাগাতার হানা দিয়ে সেখান থেকে অন্তত ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছিলেন কমিশনারেটের কর্তারা। ওই সব অস্ত্রের মধ্যে কার্বাইন পর্যন্ত ছিল। টোটনের এক সাগরেদের বাড়ি থেকেই পাঁচশোর বেশি গুলি পাওয়া গিয়েছিল। গত মার্চ মাসে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও কিছু অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ।
এখন বিরোধীদের প্রশ্ন, সেই সময় পুলিশ এই সব অস্ত্রের সন্ধান পেল না কেন? বিরোধীদের বক্তব্য, হাসপাতালে গুলি-কাণ্ডের জেরে পুলিশ কিছুটা নড়েচড়ে বসে। তার পরেই এই সব অস্ত্র উদ্ধার হল। একই সঙ্গে, এই জেলায় অস্ত্রের সরবরাহ কতটা সহজে চলে, আরও এক বার তা প্রমাণিত হয়ে গেল। এমন অস্ত্র ভাণ্ডার আরও আছে, দাবি বিরোধীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy