Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Cyclone Yaas

Yaas: মেলেনি ক্ষতিপূরণ, ছাউনিতেই দিনযাপন

তৃণমূল শাসিত চড়া পাঁচলা পঞ্চায়েতের প্রধান হেমন্ত রায় স্বীকার করেন জামিলা বিবিকে ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া যায়নি।

অসহায়: ভাঙা ঘরে বসে জামিলা বিবি। নিজস্ব চিত্র।

অসহায়: ভাঙা ঘরে বসে জামিলা বিবি। নিজস্ব চিত্র।

নুরুল আবসার
পাঁচলা শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২১ ০৬:৪৫
Share: Save:

আজ ইদ। কিন্তু উৎসবের দিনেও জামিলা বিবিকে থাকতে হবে ভাঙা ঘরে। গত বছর ২২ মে আমপানে ভেঙে গিয়েছিল পাঁচলার চড়া পাঁচলা গ্রাম পঞ্চায়েতের শাহ পাড়ার বাসিন্দা জামিলা বিবির বাড়ি। কিন্তু ক্ষতিপূরণের ‌একটি পয়সাও মেলেনি। ফলে সারানো হয়নি বাড়িও। কোনওমতে ত্রিপল দিয়ে ছাউনি করে তার নীচেই চলছে দিনযাপন। জামিলা বিবির অভিযোগ, পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে বিডিও অফিস পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় দরবার করেও ক্ষতিপূরণের একটি টাকাও পাননি।

বছর চল্লিশ আগে জামিলার স্বামী দিনমজুর নুরসাদ শাহ মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পরে একমাত্র ছেলেকে মানুষ করতে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেন তিনি। বছর কুড়ি আগে মারা যান ছেলে। মারা গিয়েছেন পুত্রবধূও। তিন নাতি, তাঁদের স্ত্রী-ছেলেপুলেদের নিয়েই আপাতত সংসার জামিলার।

স্বামীর তৈরি করা এক চিলতে পাকা বাড়িতে সকলের সঙ্কুলান হচ্ছিল না। তাই জামিলা ভিক্ষা করে জমানো টাকাতে ওই বাড়ির পাশে টিনের ছাউনি দেওয়া পাঁচ ইঞ্চি গাঁথনির একটি দু’কামরার পাকা বাড়ি তৈরি করেন। সেখানে তিনি এক নাতি সমীর শাহ এবং তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে থাকতেন। আমপানে সেই বাড়িটিই ভেঙে পড়ে। একটি ত্রিপল দিয়ে ছাউনি করে সেখানেই থাকছেন জামিলা।

সেই ত্রিপলও ছিঁড়ে গিয়েছে। ফলে বৃষ্টি হলে জল পড়ে। তখন স্বামীর তৈরি পুরনো বাড়িতেই নাতি এবং তাঁর স্ত্রী-ছেলেপুলেদের নিয়ে চলে যান। সেই বাড়িতেই আবার থাকেন তাঁর আরও দুই নাতি এবং তাঁদের স্ত্রী ছেলেপুলেরাও। ফলে একটি ঘরে গাদাগাদি করে সবাইকে থাকতে হয়।

জামিলা দৃষ্টিহীন। তিনি পক্ষাঘাতেও আক্রান্ত। তাঁর নাতিরা জরির কাজ করলেও করোনা আবহে কাজ অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। ফলে সংসারে টাকার জোগান বজায় রাখতে জামিলা বিবিকে এই অবস্থাতেও ভিক্ষায় বেরোতে হয়। যে নাতি তাঁর সাথে থাকেন সেই সমীরই তাঁকে ভ্যানে চাপিয়ে পাড়ায় নিয়ে যান। সমীর বলেন, ‘‘ঠাকুমা দৃষ্টিহীন হওয়ায় মাসে এক হাজার টাকা করে ভাতা পান। কিন্তু সেই টাকা তাঁর পক্ষাঘাতের চিকিৎসা করাতেই চলে যায়। আমাদেরও রোজগার নেই বললেই চলে। ফলে তাঁকে বাধ্য হয়েই ভিক্ষা করতে বেরোতে হয়।’’

সংসার চালানোর সাথে সাথে ঘরের চিন্তাও গ্রাস করেছে জামিলাকে। সমীর ‌বলেন, ‘‘খেতেই পাচ্ছি না। ঘর মেরামতের টাকা কোথায় পাব? আমপানের ক্ষতিপূরণের টাকা যদি পেতাম তাহলে ঘরটি মেরামত করতে পারতাম।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘পঞ্চায়েতের কাছে তো বটেই বিডিও অফিসের ড্রপ বাক্সেও বারবার আবেদনপত্র ফেলেছি। কিন্তু টাকা পাইনি।’’ পক্ষাঘাতে কথা বলার মতো অবস্থায় নেই জামিলা। তবুও কোনওমতে তিনি বললেন, ‘‘ঘরের অভাবে নরক যন্ত্রণা ভোগ করছি।’’

ফরওয়ার্ড ব্লকের পাঁচলা লোকাল কমিটির সম্পাদক ফরিদ মোল্লা ‌বলেন, ‘‘জামিলা বিবির বাড়ি আমরা দেখেছি। ভাঙা বাড়িতে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। আমরা বারবার বলেছি আমপানে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ পাননি। জামিলা বিবির মতো উদাহরণ অনেক। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে আমরা আন্দোলনও করেছি। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।’’

তৃণমূল শাসিত চড়া পাঁচলা পঞ্চায়েতের প্রধান হেমন্ত রায় স্বীকার করেন জামিলা বিবিকে ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া যায়নি। পক্ষপাতের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘জামিলা বিবির নাতি সমীরের নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছিল না। পরে যখন তিনি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলেন তখন ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে।’’

তবে ওই পরিবারকে একেবারেই যে কিছু দেওয়া হয়নি তা মানতে চাননি হেমন্তবাবু। তিনি বলেন, ‘‘যে ত্রিপলটির ছাউনির নীচে তাঁরা থাকেন সেটি পঞ্চায়েত থেকেই দেওয়া হয়েছে। ঘর দিতে পারিনি বলেই তাঁদের ত্রিপল দিয়েছি।’’ যদিও সমীর বলেন, ‘‘ত্রিপল আমরা পঞ্চায়েত থেকে পাইনি। গ্রামের একজন সহৃদয় মানুষ ত্রিপল বিলি করছিলেন। তিনিই আমাদের ত্রিপলটি দেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Cyclone Yaas Duare Tran
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy