মৃত নাবালিকার গ্রামে জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রিয়াঙ্ক কানুনগো। নিজস্ব চিত্র
পুজোর দু’দিনে বৈদ্যবাটী ও জাঙ্গিপাড়ার দুই নাবালিকার মৃত্যুতে খুনের অভিযোগ উঠেছিল। জাঙ্গিপাড়ার ক্ষেত্রে ধর্ষণের অভিযোগও ছিল। তদন্ত কতদূর এগোল, জানতে শুক্রবার দুই নাবালিকার বাড়িতে গেল জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের চারজনের প্রতিনিধি দল। সেই দলে ছিলেন বিজেপি রাজ্য নেত্রী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালও। দু’টি ক্ষেত্রেই পুলিশি তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ তোলেন কমিশনের চেয়ারম্যান প্রিয়াঙ্ক কানুনগো। প্রয়োজনে রাজ্য পুলিশের থেকে তদন্তভার তুলে নিয়ে অন্য কোনও সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলে জানান তিনি।
প্রিয়াঙ্ক বলেন, ‘‘পুলিশ কোনও তথ্য দিয়ে সহায়তা করেনি। ঠিক সময়ে এফআইআর ও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেওয়া হয়নি। দু’টি ঘটনাতেই প্রত্যক্ষদর্শীদের গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়নি। এ ছাড়াও, ময়নাতদন্তের সময় ভিডিয়োগ্রাফি করা হয়নি। দিল্লিতে ফিরে রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে। প্রয়োজনে রাজ্য পুলিশের থেকে দায়িত্ব তুলে নিয়ে অন্য কোনও সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করানো হতে পারে।’’
অভিযোগ মানতে নারাজ হুগলি গ্রামীণ জেলা পুলিশের ডিএসপি নিমাই চৌধুরী। তাঁর দাবি, ‘‘জাঙ্গিপাড়ার ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের তরফে কোনও গাফিলতি নেই। তবে কমিশন যে তথ্য চেয়েছে, সেটা আগে জানা না-থাকায় আমরা দিতে পারিনি।’’ রেল পুলিশের তরফে এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বৈদ্যবাটীর ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে জেল হেফাজতে রয়েছে। তদন্তে কোথাও ফাঁক নেই।’’
গত রবিবার তদন্তের গতি-প্রকৃতি জানতে প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল-সহ বিজেপি নেতৃত্ব গিয়েছিলেন বৈদ্যবাটীর ওই নাবালিকার বাড়িতে। বিষয়টি নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ তুলেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এ দিন জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের কনভয় বৈদ্যবাটীতে এলে তৃণমূল কর্মীরা হাতে কালো পতাকা নিয়ে গো-ব্যাক স্লোগান দেন। সেখানে আগে থেকেই হাজির ছিলেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। দু’দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। পুলিশ দু’পক্ষকে সরিয়ে দেয়।
এ দিন প্রায় এক ঘণ্টা জাঙ্গিপাড়ার মৃত নাবালিকার বাড়িতে বন্ধ ঘরে তার সঙ্গে কথা বলেন কমিশনের সদস্যেরা। তারপর শ্রীরামপুর মহকুমাশাসকের কার্যালয়ের সভাকক্ষে দু’টি ঘটনার তদন্ত নিয়ে পুলিশ ও রেল পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন কমিশনের চেয়ারম্যান প্রিয়াঙ্ক।
তদন্ত নিয়ে অভিযোগ নেই জাঙ্গিপাড়ার নিহতর নাবালিকার পরিবারের। তাঁরা জানান, পুলিশ সহযোগিতা করছে। উল্টে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কেন বিজেপি নেত্রী এসেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নাবালিকার কয়েকজন আত্মীয় ও পড়শি। তবে তদন্তে অখুশি বৈদ্যবাটীর নাবালিকার পরিজনরা। তাঁদের ক্ষোভ, পুলিশ এফআইআর নিতে দেরি করেছে। তদন্তেও গাফিলতি রয়েছে।
রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘দু’টি ঘটনাতেই পুলিশ প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। কমিশন ঠিক কি বলেছে, তা জানা নেই। কিন্তু, প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল একজন বিজেপি নেত্রী। তিনি কমিশনের সঙ্গে কেন ঘুরছেন, সেটা নিয়েই আমার প্রশ্ন।’’ প্রিয়াঙ্কার জবাব, ‘‘এখানে রাজনীতির কোনও বিষয় নেই। দুই নাবালিকার বাবাই আমাকে ডেকেছেন। তাই আমি এসেছি।’’
নবমীর সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি বৈদ্যবাটীর বছর চোদ্দোর ওই নাবালিকা। ওই রাতেই শেওড়াফুলি তিন ও চার নম্বর লেভেল ক্রসিংয়ের উপর তার রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে রেল পুলিশ। তাকে খুনের অভিযোগ তুলে স্থানীয় এক যুবককে মারধর করেন ওই নাবালিকার পরিজনরা। তার নামে খুনের অভিযোগও দায়ের হয়েছে।
দশমীর সন্ধ্যায় জাঙ্গিপাড়ার সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রী নিখোঁজ হয়। গত শনিবার সকালে স্থানীয় ডাকাতিয়া খালের বাঁধের পাশের পুকুরে মেয়েটির দেহ মেলে। পরিবারের লোকজন ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ তোলেন। রবিবার রাতে তিন নাবালক এবং এক যুবককে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টও পুলিশের হাতে এসেছে। তাতে ধর্ষণের উল্লেখ নেই বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy