Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
potato farmers

বৃষ্টিতে নষ্ট আলু, দিশাহারা চাষি 

দিন কয়েক আগের তিন দিনের নিম্নচাপের টানা বৃষ্টি পুরো পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে। মাঠের আলু মাঠেই পচতে শুরু করেছে। নিজের জমি না হওয়ায় তাঁরা বিমা বা সরকারি ক্ষতিপূরণের কোনও সুবিধাও পাবেন না।

পোলবার সারাংপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা।

পোলবার সারাংপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা। —নিজস্ব চিত্র।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় 
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৩০
Share: Save:

আলু চাষ করে বেজায় বিপদে পড়েছেন অঞ্জলি মুর্মু, পানমণি মুর্মু, টুসু সরেন, পদ্মামণি মুর্মুরা। হুগলির পোলবার সারাংপুর গ্রামে তাঁদের মতো বেশিরভাগ চাষিই বিপদে। এঁরা সকলে ঠিকা চাষি। নির্দিষ্ট শর্তে অন্যের জমিতে চাষ করেছিলেন। বহু টাকা ধার নিয়ে সার-বীজ কিনেছেন। জমি-মালিকের সঙ্গে চুক্তি, আলু উঠলে হিসাব বুঝিয়ে দেবেন।

কিন্তু দিন কয়েক আগের তিন দিনের নিম্নচাপের টানা বৃষ্টি পুরো পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে। মাঠের আলু মাঠেই পচতে শুরু করেছে। নিজের জমি না হওয়ায় তাঁরা বিমা বা সরকারি ক্ষতিপূরণের কোনও সুবিধাও পাবেন না। উল্টে চড়া দামে আলুবীজ, সার কিনে যে বিস্তর টাকা ধার হয়ে গিয়েছে, তা শুধবেন কী করে— সেটাই চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আদিবাসী প্রধান ওই গ্রামের বহু ভূমিহীন চাষি ‘চুক্তি চাষ’ করে দিন গুজরান করেন। সারাংপুর শুধু নয়, হুগলির বহু গ্রামেই এই চাষিরা দুরবস্থায় পড়েছেন সাম্প্রতিক অকাল বৃষ্টির জেরে। তাঁদের বক্তব্য, ফের চাষ করার মতো রসদ নেই হাতে। অথচ, চাষ না করলে খাবেন কী! বাজারে হাজার হাজার টাকার দেনাই বা শুধবেন কী করে? শর্তপূরণ না করলে জমির মালিকও ছাড়বেন না। ভবিষ্যতে ওই জমিতে তাঁদের চাষও করাও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

অঞ্জলি এ বার সাড়ে তিন বিঘা চুক্তিতে চাষ করেছিলেন। জমি থেকে বৃষ্টির জল এখনও পুরোটা নামেনি। সব আলু পচে গিয়েছে। তাঁর মাথায় হাত। চাষের জন্য ঋণ হয়ে গিয়েছে ৩০ হাজার টাকা। সেই দেনা শুধবেন কী করে, ভেবে পাচ্ছেন না মহিলা। আড়াই বিঘা জমি চুক্তিতে নিয়ে আলুচাষ করে একই অবস্থা পানমণিরও। টুসু সরেন চাষ করেছিলেন ৩ বিঘা জমিতে। এ বার কী হবে, প্রশ্ন তাঁরও।

পরিস্থিতির কথা জানিয়ে ক্ষতিপূরণের দাবিতে প্রশাসনের কাছে দরবার শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলি। সংযুক্ত কিসান মোর্চা জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। সিপিআই (এম এল) লিবারেশনের তরফে সারাংপুর গ্রামের চাষিদের কথা জানিয়ে মহকুমাশাসকের (সদর) কাছে সোমবার স্মারকলিপি দেওয়া হয়। লিবারেশনের নেতা সজল অধিকারীর দাবি, চাষ যত অলাভজনক হচ্ছে, মালিক জমি ইজারায় দিচ্ছেন। যাঁরা সেই জমি চাষ করছেন, তাঁরা বেশিরভাগই কৃষিমজুর। তাঁরা পরিবারের কিছু লোক মিলে শ্রম দিয়ে চাষ করেন। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বিপর্যয় হলে ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এই সব চাষি। কারণ, তাঁদের কাছে জমির কোনও কাগজ নেই। সজল বলেন, ‘‘চাষ না করেই জমির মালিক ক্ষতিপূরণ পেয়ে যাচ্ছেন। আর চাষ করেও ইজারা বা চুক্তি-চাষি তা পাচ্ছেন না। ঋণের দায়ে জর্জরিত হচ্ছেন। পরিস্থিতির কথা প্রশাসনকে জানিয়েছি।’’

জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা প্রিয়লাল মৃধা বলেন, ‘‘জেলায় বৃষ্টিতে চাষে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সমীক্ষার কাজ চলছে। সেই কাজ শেষ হলে সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানিয়ে দেওয়া হবে। তবে ক্ষতিপূরণ পুরোপুরি সরকারি সিদ্ধান্ত।’’

অন্য বিষয়গুলি:

potato farmers crop insurance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy