লিলুয়ায় প্রকাশ্যে যুবককে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মনু শর্মা ঘটনার তিন দিন পরেও অধরা। শুধু তা-ই নয়, ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বাকি যুবকদেরও সন্ধান পায়নি পুলিশ। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, নিহত যুবক সাগর তিওয়ারির প্রেমিকা, নবম শ্রেণির ছাত্রীটির সঙ্গে মনুর আগে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তাই এই খুনের পিছনে ত্রিকোণ প্রেমের কোনও বিষয় রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। অন্য দিকে, নিহত যুবকের পরিবারের পক্ষ থেকে সোমবার পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ করে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ভাবে, একাধিক ব্যক্তির সামনে প্রকাশ্য রাস্তায় পিটিয়ে খুনের ৭২ ঘণ্টা পরেও পুলিশ এক জনকেও কেন গ্রেফতার করতে পারল না?
গত শুক্রবার রাতে লিলুয়ার বামনগাছি সেতুর কাছে জগদীশপুরের বাসিন্দা সাগরকে ডেকে পাঠিয়ে মাথায় বাঁশ দিয়ে মেরে খুন করা হয়। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হন তাঁর দুই বন্ধু সিদ্ধার্থ রায় ও চিন্টু দাস। এই ঘটনার পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে থাকা সাগরের প্রেমিকাকে থানায় ডেকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানতে পেরেছে, নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীর সঙ্গে দেড় বছর আগে অভিযুক্ত মনুর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পরে সাগরের সঙ্গেও মেয়েটির সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মনুও পরে ওই ছাত্রীর সহপাঠী, দশম শ্রেণির এক পড়ুয়ার সঙ্গে মেলামেশা শুরু করে। এরই মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন নিয়ে দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীর সঙ্গে নবম শ্রেণির ছাত্রীটির বচসা হয়। তদন্তকারীদের ধারণা, মনুর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে দুই ছাত্রীর মধ্যে গোলমাল হয়েছিল। সেই সূত্র ধরেই সাগর বিষয়টিতে জড়িয়ে পড়ে। এর পরে তাঁর বান্ধবীই তাঁকে ডেকে পাঠায় বামনগাছি সেতুর কাছে।
সাগরের পরিবারের দাবি, ঘটনার দিন মনুকে দেখা গিয়েছে একটি অটোয় কয়েক জন ছেলেকে নিয়ে স্কুলের সামনে আসতে। ওই অটোয় সাগরের বান্ধবীকেও উঠতে দেখা গিয়েছে। নিহত যুবকের মামা রাজু পাণ্ডে বলেন, ‘‘ওই মেয়েটিই বৃহস্পতিবার মনু ও তার দলবলকে শুক্রবার রাতে বামনগাছিতে আসতে বলে। এমনকি, গোলমাল হতে পারে ভেবে আমার ভাগ্নে ঘটনাস্থল থেকে চলে আসতে চাইলেও ওকে জোর করে টেনে নিয়ে যায় মেয়েটি। সাগরের দুই বন্ধু এ সব কিছুর সাক্ষী।’’ নিহতের মামার আরও অভিযোগ, এই খুন পরিকল্পিত ভাবে হয়েছে। পুলিশ চাইলে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সবটাই বার করতে পারে।
নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ করা হলেও পুলিশের দাবি, এটা পরিকল্পিত খুন নয়। তদন্তে মনুকেই একমাত্র চিহ্নিত করা গিয়েছে। বাকিদের পরিচয় মেলেনি। হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘মূল অভিযুক্তকে ধরলে তবেই বাকিদের পরিচয় মিলবে। আমরা সব রকম চেষ্টা করছি। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে, এটা পরিকল্পিত খুন নয়।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)