তাঁদের চাকরি নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি। বেতন নিয়েও জটিলতা নেই। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের বেতন সংক্রান্ত বিভ্রাটের কারণে তাঁদেরও মাস মাইনে কি অনিশ্চয়তার মুখে?
চাকরিহারাদের বেতনের বিষয়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ বা জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের (মাধ্যমিক) কার্যালয় থেকে নির্দেশিকা না আসায় পরিস্থিতি তেমনই, বলছেন বহু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের করণীয় কী, ভেবে পাচ্ছেন
না তাঁরা।
প্রধান শিক্ষকদের বক্তব্য, বেতন-পোর্টালে চাকরি হারানো শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের নাম রয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দফতরের কোনও নির্দেশিকা না থাকায় পোর্টালে ওই শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের বেতনের রিক্যুইজ়িশন তাঁরা দিতে পারছেন না। আবার শুধুমাত্র অন্য শিক্ষকদের বেতনের রিক্যুইজ়িশনও দিতে পারছেন না। অথচ, ২০ তারিখের মধ্যে না দিলে কারও বেতন হবে না।
সমস্যা কোথায়?
প্রধান শিক্ষকদের অধিকাংশই সমস্যাটিকে মানবিক এবং আইনগত দিক থেকে ব্যাখ্যা করেছেন। পাঁচলা গঙ্গাধরপুর বিদ্যামন্দিরের ৬ শিক্ষক রয়েছেন চাকরিহারাদের তালিকায়। টিচার ইন চার্জ বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, ‘‘ছ’জনের নাম বাদ দিয়ে বাকিদের রিক্যুইজ়িশন দিতেই পারি। কিন্তু মানবিকতার দিক থেকে পারছি না। আবার ওই ছ’জনের রিক্যুইজ়িশন পাঠালে আদালত অবমাননা হতে পারে।’’ পাঁচলার আজিম মোয়াজ্জিম হাই স্কুলের টিচার ইন চার্জ এস এম সামসুদ্দিন জানান, তিনি কারও রিক্যুইজ়িশন দেননি। আর দু’দিন অপেক্ষা করবেন। তার মধ্যে সংশ্লিষ্ট দফতরের নির্দেশিকা না এলে পরিচালন সমিতির সভা ডেকে সিদ্ধান্ত নেবেন।
বহু প্রধান শিক্ষকের আশঙ্কা, ২০ তারিখের মধ্যে শিক্ষা দফতর স্পষ্ট নির্দেশিকা না পাঠালে চাকরিহারাদের সঙ্গে অন্য শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদেরও এ মাসের বেতন আটকে যেতে পারে।
অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেড মাস্টার্স অ্যান্ড হেড মিস্ট্রেসেস-এর রাজ্য সদস্য তথা আরামবাগের ডহরকুন্ডু শ্রীরামকৃষ্ণ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রণবকুমার নায়েক বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্য স্তরের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ২০ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করব। তার আগে ডিআই, শিক্ষা দফতর-সহ সমস্ত স্তরে চিঠি পাঠিয়ে নির্দেশিকা চাইব। ওই তারিখের মধ্যে ওঁরা কিছু না জানালে আমরা চাকরিহারাদেরও রিক্যুইজ়িশন পাঠিয়ে দেব।’’ আরামবাগের একটি বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ‘‘অদ্ভুত জটিলতা। আমাদের বেতন নিয়েও টানাটানি পড়ে গেল!’’
জঙ্গলপাড়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মলয়কুমার মান্না বলেন, ‘‘চাকরিহারাদের বেতনের রিক্যুইজ়িশন পাঠানো আইন বহির্ভূত হবে কি না, বুঝতে পারছি না।’’ আরামবাগ বয়েজ় হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিকাশচন্দ্র রায় বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য দেখে নিতে চাইছি।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)