হুগলির বাঁশবেড়িয়ার ‘মোদী-অন্তপ্রাণ’ বিজেপি-র আদি নেতা বিষ্ণু চৌধুরীও পুরভোটের আবহে মঙ্গলবার যোগ দিলেন তৃণমূলে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মুখে উচ্চারিত হয়েছিল তাঁর নাম। আর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজনাথ সিংহের পাশে বসে তাঁর ছবি সাড়া ফেলে দিয়েছিল জেলার রাজনীতিতে। বরাবরই প্রচারের আলোয় থাকা হুগলির বাঁশবেড়িয়ার ‘মোদী-অন্তপ্রাণ’ বিজেপি-র আদি নেতা বিষ্ণু চৌধুরীও পুরভোটের আবহে মঙ্গলবার যোগ দিলেন তৃণমূলে।
গত পুরভোটের আগে, ২০১৪ সালে তৃণমূলের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলে জেলার রাজনীতির আলোকবৃত্তে উঠে এসেছিলেন বিষ্ণু। তাঁর অভিযোগ ছিল, বিজেপি করেন বলেই তাঁর বুকে জলন্ত সিগারেট দিয়ে ‘টিএমসি’ লিখে দিয়েছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। জোড়াফুল শিবিরের হুগলির নেতা রাজা চট্টোপাধ্যায় ওই অভিযোগকে ‘প্রচারে থাকতে নাটক’ বলে দাবি করেছিলেন। কিন্তু প্রভাব পড়েছিল পুরনির্বাচনে। বাঁশবেড়িয়ায় বিষ্ণুর ২০ নম্বর ওয়ার্ডে জিতে গিয়েছিল গেরুয়া শিবির।
গত লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে এসে ২০১৯ সালে বিজেপি-র তৎকালীন সর্বভারতীয় সভাপতি তথা বর্তমান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহের মুখে নাম শোনা গিয়েছিল বিষ্ণুর নাম। শাহকে বলতে শোনা গিয়েছিল, রাজ্যের মসনদ বিজেপি-র দখলে এলে বিষ্ণুর উপর অত্যাচারের বিচার হবে।
কেন্দ্রে তখনও ক্ষমতায় আসেননি নরেন্দ্র মোদী। ২০১৩ সাল। গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীকে দিল্লির মসনদে চেয়ে মোদী-রাজ্য থেকে সাইকেলে দিল্লি হয়ে বাংলা— প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছিলেন বিষ্ণু। দিল্লিতে সেই সময় রাজনাথ সিংহের সঙ্গেও ছবি তুলেছিলেন তিনি। ছবিতে দেখা যায়, বিষ্ণুর পিঠ চাপড়ে দিচ্ছেন রাজনাথ।
আদতে তখন থেকেই জেলার রাজনীতিতে বিষ্ণুর উত্থান হয়। সিগারেট-কাণ্ড ছাড়াও একাধিক ঘটনায় তাঁর নাম জড়িয়েছে। ব্যান্ডেল স্টেশনের কাছে রেললাইনে বোমাতঙ্কের ঘটনায় আটক হয়েছিলেন বিষ্ণু। সব মিলিয়ে এখনও সাত বার গ্রেফতার হয়েছেন তিনি। দাবি আদায়ের জন্য কখনও মোবাইল টাওয়ারে, কখনও আবার নারকেল গাছে চড়তে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তবে এত কিছুর পরেও বিজেপি-র মণ্ডল সভাপতি হয়েছেন বিষ্ণু।পেয়েছিলেন ঝাড়গ্রামে বিজেপি-র ওবিসি মোর্চার পর্যবেক্ষক এবং জেলার শ্রমিক সংগঠনের সভাপতির পদ।
কিন্তু মোহভঙ্গ হয় গত বিধানসভা নির্বাচনের সময়। ওই সময় বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলে চুঁচুড়া-মগরা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দেবব্রত বিশ্বাস। পদ্মে যোগ দিয়েই সপ্তগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপি-র প্রার্থী হয়েছিলেন দেবব্রত। যা মেনে নিতে পারেননি বিষ্ণু। প্রকাশ্যে বিজেপি-র তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে ওই কেন্দ্র থেকেই নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু জিততে পারেননি। হেরেছেন দেবব্রতও।
এর পরে অবশ্য জেলা নেতৃত্ব তাঁকে আশ্বস্ত করায় কিছু দিন দলের কাজ করেছেন বিষ্ণু। পরের দিকে একেবারেই নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এ বার সেই বিষ্ণুই সপ্তগ্রামের বিধায়ক তপন দাশগুপ্তের হাত থেকে জোড়াফুলের পতাকা নিয়ে যোগ দিলেন শাসকশিবিরে। শুধু তিনি নয়, তাঁর সঙ্গে অন্তত ৩০০-৪০০ বিজেপি কর্মী তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। যোগদানের পর বুধবার বিষ্ণু বলেন, ‘‘যাঁরা এক সময় আমাদের উপর অত্যাচার করেছিলেন, তাঁরাই এখন বিজেপি-র নেতা হয়েছেন। ১২ বছর লড়াই করেছি যাঁদের বিরুদ্ধে, তাঁরা এখন বিজেপি-তে। পুরসভা ভোটেও যাঁদেরকে টিকিট বিতরণে দলের আদর্শ মানা হয়নি। বিজেপি-র আদর্শ নিয়ে খেলা করা হয়েছে। বিজেপি-র আর কোনও আদর্শ নেই বলেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছি। মানুষের কাজ করতে চাই।’’
এ প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা রাজা বলেন, ‘‘বিষ্ণু বিজেপি-র সক্রিয় কর্মী ছিল। প্রচারে থাকতে নানা রকম কাণ্ড করত। বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও এক তরুণীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ায়। মেয়ের পরিবার সেটা মানতে পারেনি। ওই বিষয়ে আমরা হস্তক্ষেপ করায় আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে সিগারেটের ছ্যাঁকার অভিযোগ করে ও। বিধানসভা ভোটের সময় থেকে দেখছি, বিজেপি-র প্রতি ক্ষুব্ধ ও। যদি ভাল উদ্দেশ্য নিয়ে তৃণমূলে আসে, তা হলে কোনও আপত্তি নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy