হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অজয়। নিজস্ব চিত্র
সাত মাসেও ছবিটা বদলাল না।
এলাকায় প্রকাশ্যে মদ্যপানের বিরোধিতা করায় গত বছরের শেষ দিকে এক ব্যক্তিকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল চুঁচুড়ায় কোদালিয়ায়। এ বার প্রকাশ্যে মদ-গাঁজার আসর বসানোর প্রতিবাদ করায় আক্রান্ত হলেন এখানকার এক বিজেপি নেতা। বাঁশ, রড দিয়ে মেরে তাঁর কপাল ফাটিয়ে দেওয়া হয়। মাথাতেও চোট লাগে।
রবিবার রাতে সিংহীবাগানের ওই ঘটনায় প্রহৃত অজয় মোহান্তি কোদালিয়া-১ পঞ্চায়েতের সদস্য। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাঁর কপালে ছ’টি সেলাই পড়েছে। ঘটনায় জড়িত অভিযোগে সোমবার সকালে ছোটন বাগ নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ শুরু হয়েছে।
কোদালিয়ার এই অঞ্চলে প্রকাশ্যে মদ্যপান, দুষ্কৃতীদের আনাগোনা, অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ নতুন নয়। বিষয়টি নিয়ে বিরক্ত এলাকাবাসী। তাঁদের দাবি, দিনের আলো কমতে শুরু করলেই এলাকায় প্রকাশ্যে মদ-গাঁজার আসর বসে। দৌরাত্ম্য বাড়ে মদ্যপদের। গত বছরে এক প্রতিবাদীকে মারধরের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছিল দু’জন। তারপরেও ছবিটা যে বিশেষ বদলায়নি, রবিবারের ঘটনার তা ফের স্পষ্ট হল।
অজয়বাবু জানান, রবিবার এলাকার একটি আমবাগানে বহিরাগত কয়েক জনকে মদ-গাঁজা খেতে দেখে তিনি প্রতিবাদ করেন। কিন্তু তারা কথা কানে তোলেনি। এরপর অজয়বাবু সেখান থেকে চলে যান। আক্রান্ত হন রাতে। তাঁর কথায়, ‘‘রাত ১১টা নাগাদ বাড়ি ফিরছিলাম। সেই সময় কয়েক জন আমার পথ আটকায়। মদ-গাঁজা খাওয়া আর জুয়া খেলা নিয়ে আমার সঙ্গে তর্কাতর্কি শুরু হয়। হঠাৎ তার মধ্যে কয়েক জন বাঁশ-রড দিয়ে আমাকে বেধড়ক মারতে শুরু করে।’’
রক্তাক্ত এবং অচৈতন্য অবস্থায় সিংহীবাগানের রাস্তাতেই পড়ে ছিলেন অজয়বাবু। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করান। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশি নজরদারির অভাবই দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্তের কারণ। ফের পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, সন্ধ্যার পর থেকেই এলাকার বিভিন্ন জায়গায় মদ-গাঁজার আসর বসে। সেখানে যোগ দেয় বাইরে থেকে আসা দুষ্কৃতীরাও। মদ্যপদের দৌরাত্ম্যে মহিলারা রাস্তায় বের হতে ভয় পান। এ সব কথা অজয়বাবুকে জানিয়েছিলেন তাঁরা।
নজরদারি অভাব বা নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ মানতে নারাজ পুলিশ। তাদের দাবি, নিয়মিত টহল চলে। সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তা হলে এমন ঘটনা ঘটল কী করে? প্রশ্ন এড়িয়ে চন্দননগর কমিশনারেটের এক কর্তার জবাব, ‘‘এটা দুর্ঘটনা। অভিযোগ পাওয়ার পরই একজনকে ধরা হয়েছে। বাকিদের খোঁজ চলছে। এলাকায় টহল বাড়ানো হবে।’’
তড়িঘড়ি এক জনকে গ্রেফতার করা হলেও পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন এলাকাবাসী। কোদালিয়ার এক কলেজ ছাত্রীর কথায়, ‘‘কলেজ সেরে সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করি। না হলে কখন কী হয়! ভাবি, কোন সমাজে বাস করছি! পুলিশের টহল তো দেখতে পাই না।’’ অন্য এক বৃদ্ধের ক্ষোভ, ‘‘আগে চারপাশটা এমন ছিল না। এখন একটু অন্ধকার দেখলেই সেখানে মদ-গাঁজা আসর বসছে। বয়স হচ্ছে। প্রতিবাদ করার সাহস পাই না। পুলিশ দেখলে ছবিটা নিশ্চয় বদলাত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy