Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Unnatural Death

হাওড়ায় ক্লাবে বাসন পৌঁছতে গিয়ে রহস্য-মৃত্যু প্রৌঢ়ের, খুনের অভিযোগ

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজকুমার রাম নামে ওই প্রৌঢ়ের বাড়ি দাশনগরের বেহারাপাড়ায়। এ দিন ভোরে তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় দাশনগরের বিরাজময়ী রোডের একটি ক্লাবের সামনে।

রাজকুমার রাম

রাজকুমার রাম —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:৩৩
Share: Save:

একটি ক্লাবে জন্মদিনের পার্টিতে কেটারিংয়ের বাসন পৌঁছে দিতে গিয়ে রহস্যজনক ভাবে মারা গেলেন এক প্রৌঢ়। সোমবার কাকভোরে হাওড়ার দাশনগরে সেই ক্লাবের সিঁড়ির দরজার সামনে থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ওই প্রৌঢ়কে। পরিবারের অভিযোগ, তাঁকে পিটিয়ে খুন করে ফেলে দেওয়া হয়েছে। যার ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করেছে দাশনগর থানার পুলিশ। দেহটি ময়না তদন্তে পাঠিয়ে তদন্ত শুরু করেছে তারা। তবে, ওই প্রৌঢ়কে কেন কেউ খুন করবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজকুমার রাম (৫৫) নামে ওই প্রৌঢ়ের বাড়ি দাশনগরের বেহারাপাড়ায়। পেশায় তিনি ছিলেন ভ্যানচালক। এ দিন ভোরে তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় দাশনগরের বিরাজময়ী রোডের একটি ক্লাবের সামনে। খবর পেয়ে পুলিশ ও বাড়ির লোকজন এসে তাঁকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। রাজকুমারের পরিবারের লোকজন জানান, দীর্ঘদিন ধরেই কেটারিংয়ের জিনিসপত্র পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছিলেন তিনি। ওই এলাকার একটি ক্লাবে রবিবার রাতে জন্মদিনের অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে কেটারিংয়ের বাসনপত্র নিয়ে গিয়েছিলেন রাজকুমার। এর পরে সোমবার ভোরে ক্লাবের গলির ভিতরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় তাঁকে। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই বেহারাপাড়ায় ওই প্রৌঢ়ের বাড়ির সামনে ভিড় জমে যায়।

মৃতের বড় ছেলের স্ত্রী সুপর্ণা রাম বলেন, ‘‘আমার শ্বশুরমশাই যখন রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে ছিলেন, তখন ওই ক্লাবের সদস্যেরা কেউই তাঁকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেননি। উল্টে, তাঁরা সেখান থেকে পালিয়ে যান। স্থানীয় এক যুবক ও তাঁর মা এসে রাত সাড়ে ৩টে নাগাদ আমাদের এই খবর জানান।’’ প্রৌঢ়ের স্ত্রী অণিমা রাম জানান, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, তাঁর স্বামীকে মৃত অবস্থায় দেওয়ালে ঠেস দিয়ে কেউ যেন বসিয়ে রেখেছে। তাঁর বাঁ দিকের কানে গভীর ক্ষত। সেখান থেকে চাপ চাপ রক্ত বেরিয়ে মাটিতে পড়েছে। গায়ের জামা কেউ যেন ফালা ফালা করে ছিঁড়ে দিয়েছে। পাশে পড়ে রয়েছে চশমা। ক্লাবের দোতলা থেকে পাওয়া যায় তাঁর মোবাইল।

পরিবারের অভিযোগ, রাজকুমারকে জন্মদিনের পার্টির পরে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে এবং পুলিশ প্রথম থেকেই ঘটনাটিকে দুর্ঘটনা বলে চালানোর চেষ্টা করছিল। পুলিশের বিরুদ্ধে ক্লাবের সদস্যদের আড়াল করার চেষ্টার অভিযোগও করেছেন তাঁরা। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই ক্লাবে নিত্যদিন মদের আসর বসে। উচ্চস্বরে গানবাজনা হয়। এলাকার এক প্রোমোটার ব্যক্তিগত স্বার্থে ওই ক্লাবের এই সমস্ত মোচ্ছবের জন্য অর্থের জোগান দেন বলেও তাঁদের দাবি। সরাসরি না বললেও রাজকুমারের মৃত্যুর পিছনে ওই ক্লাবের ভূমিকা রয়েছে বলেই সন্দেহ তাঁর পরিবারের।

এ দিন বিরাজময়ী রোডে ওই ক্লাবের দোতলায় ওঠার সিঁড়ির ঠিক বাইরের রাস্তায় দেখা যায়, তখনও চাপ চাপ রক্ত পড়ে রয়েছে। পুলিশ জায়গাটি একটি সরু দড়ি আর ইট দিয়ে ঘিরে রেখেছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ওই ক্লাবের দরজা এবং দোতলায় ওঠার রাস্তা। ক্লাবের সহ-সম্পাদক অভিজিৎ দাস অবশ্য ক্লাবের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তি প্রচুর মদ্যপান করেছিলেন। এর পরে কোনও ভাবে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পড়ে মারা যান। তখন আমরা কেউ ক্লাবে ছিলাম না।’’

হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘খুনের মামলা রুজু করা হলেও ঘটনাটি আদতে খুন, না কি দুর্ঘটনা, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে, ওই ব্যক্তি নিত্যদিন প্রচুর মদ্যপান করতেন বলে জানা গিয়েছে। তিনি নেশার ঘোরে আচমকা পড়ে গিয়ে মারা গিয়েছেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট এলেই মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে একটা আন্দাজ পাওয়া যাবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

unnatural death police investigation Howrah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy