Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
মমতার কড়া বার্তার পরেও দুর্নীতিতে অভিযুক্ত প্রধান
Relief

এ বার ত্রাণের ত্রিপল ‘চুরি’ সেই আরান্ডিতে

একটি-দু’টি নয়, সরকারি নানা প্রকল্প নিয়ে সোহরাবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ উঠেছে গত কয়েক বছরে।

আরামবাগের আরান্ডি-১ পঞ্চায়েতের সামনে বিক্ষোভ গ্রামবাসীদের।

আরামবাগের আরান্ডি-১ পঞ্চায়েতের সামনে বিক্ষোভ গ্রামবাসীদের। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ।

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২১ ০৭:০১
Share: Save:

ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ নিয়ে বঞ্চনা বরদাস্ত করা হবে না বলে শুক্রবারই কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে, শনিবারই ত্রাণের ত্রিপল চুরির অভিযোগ উঠল আরামবাগের তৃণমূল পরিচালিত আরান্ডি-১ পঞ্চায়েতের প্রধান সোহরাব হোসেনের বিরুদ্ধে। ত্রিপলের দাবিতে পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ হয় শুক্রবার। গত বছরও আমপানের ক্ষতিপূরণ বিলিতে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠেছিল সোহরাবের বিরুদ্ধে।

ইয়াস হুগলিতে তেমন প্রভাব না-ফেললেও আরামবাগের কিছু এলাকায় গরিব মানুষদের ঘরের চাল উড়ে গিয়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে আরান্ডি-১ পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারাও রয়েছেন। তাঁরা শুনেছেন, ইতিমধ্যে ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে পঞ্চায়েতে ত্রাণের ত্রিপল পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তা না-মেলায় শুক্রবার তাঁরা পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ দেখান।

শনিবার প্রধানের বিরুদ্ধে ত্রিপল চুরির অভিযোগ এবং এর বিহিত করার দাবিতে ব্লক প্রশাসনের দ্বারস্থ হন ওই পঞ্চায়েতেরই তৃণমূল সদস্যদের একাংশ। তাঁদের মধ্যে শ্রীকান্ত বাগ বলেন, ‘‘গত বৃহস্পতিবার সকালে আমরা কয়েকজন সদস্য প্রধানের কাছে ত্রিপলের হিসেব এবং ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে কী ভাবে বিলি করা হবে সে সম্পর্কে জানতে চাই। প্রধান দুর্ব্যবহার করেন। উত্তর দেননি। জানিয়ে দেন, যা বিলি করার তিনি বুঝবেন।” শেখ আসরাফুল এবং অভিজিৎ রায় নামে দুই পঞ্চায়েত সদস্যের অভিযোগ, “প্রধান তাঁর ঘনিষ্ঠদের খানদশেক ত্রিপল দিয়েছেন। এ ছাড়া ১৩টি সংসদের একজন ক্ষতিগ্রস্তও ত্রিপল পাননি। সরকারি ওই ত্রাণ সবটাই লোপাট হয়ে গিয়েছে।”

গত বছর আমপানের ক্ষতিপূরণ বিলিতে সোহরাবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও প্রশাসনিক স্তরে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দলের পক্ষ থেকে তাঁকে শুধু শো-কজ় করা হয়েছিল। তারপরে সোহরাবকে দলের নানা কাজে দেখা গিয়েছে। গত বারের প্রসঙ্গ তুলে ‘বিদ্রোহী’ পঞ্চায়েত সদস্যেরা বিডিও-র কাছে লিখিত আবেদনে জানিয়েছেন, প্রশাসনের তরফে গতবার কোনও আইনি ব্যবস্থা না-হওয়াতেই সরকারি টাকা নয়ছয় করে যাচ্ছেন সোহরাব। তাঁরা এর বিহিত চান।

ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আরান্ডি-১ পঞ্চায়েতের জন্য প্রাথমিক ভাবে ৯০টি ত্রিপল বরাদ্দ হয়েছে। তার মধ্যে ৫৫টি ওই পঞ্চায়েতে পাঠানো হয়েছে। সেগুলি ক্ষতিগ্রস্তদের বিলি করে ‘মাস্টাররোল’ পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিডিও কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্তও শুরু হয়েছে।”

‘বিদ্রোহী’ পঞ্চায়েত সদস্যদের প্রশ্ন, ‘‘এ বার মানুষ ভোট দিয়ে আমাদের ফের রাজ্যে ফিরিয়েছেন। এরপরেও দল যদি শুদ্ধিকরণ না করে, তা হলে আর কবে করবে?” ব্লক তৃণমূল সভাপতি পলাশ রায় বলেন, “দল এ সব দুর্নীতি সমর্থন করে না। বিডিও আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেন। দলও যাতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়, সে ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে জানিয়েছি।”

সোহরাব ত্রিপল চুরির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘মিথ্যা অভিযোগ। আমি নিজে চুনাইট এবং শীতলপুরে ১০-১২ জনকে ত্রিপল দিয়েছি। সে সবের ‘মাস্টাররোল’ ব্লক প্রশাসনকে পাঠিয়ে দেব। যাঁরা ত্রিপল চাইছেন, তাঁরা আবেদন করলে পঞ্চায়েত তদন্ত করে ত্রিপল দেবে।”

একটি-দু’টি নয়, সরকারি নানা প্রকল্প নিয়ে সোহরাবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ উঠেছে গত কয়েক বছরে। তবে, আমপানের ক্ষতিপূরণ বিলি এবং ঝড়ে পড়ে যাওয়া গাছ বিক্রিতে দুর্নীতির অভিযোগ জোরালো হয়েছিল। যার জেরে দল তাঁকে শো-কজ় করে। ব্লক প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা থেকে সোহরাবের আত্মীয়-সহ ছ’জনের নাম কেটে দেয়।

এ বারও সোহরাবের বিরুদ্ধে আদৌ ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা,প্রশ্ন তুলছেন গ্রামবাসীরা। সামতা গ্রামের শেখ আব্বাস বলেন,“ত্রিপল চাইছি। কিন্তু প্রধান দিচ্ছেন না। আমাপানে ঘর ভাঙার টাকাও পাইনি। অথচ, প্রধানের আত্মীয়স্বজন, দলের ঘনিষ্ঠেরা পেয়েছেল।” ধামসার মির্জা ফারুক বলেন, “ওদের দলের তরফেই প্রধানকে তাড়ানো হোক। নইলে গ্রামের মানুষ বঞ্চিতই থাকবেন। প্রধানের অট্টালিকার সংখ্যা বাড়বে।”

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Scam Relief
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy